Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সবচেয়ে বেশি গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে

মোবাইল সেবায় বিরক্ত গ্রাহকরা

| প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

এক মাসে বিটিআরসিতে ৩৫২২ অভিযোগ
কলড্রপ, মিউট কল, ইন্টারনেটের গতি ও প্যাকেজে প্রতারণা
ফারুক হোসাইন : গ্রামীণফোনের গ্রাহক নূরুল ইসলাম। গত দুই দিনে একই অপারেটরের বিভিন্ন নম্বরে ফোন দিয়ে অন্তত ১০টি কলড্রপ ও মিউট কলের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। বিরক্ত হয়ে অপারেটরকে দুয়োধ্বনি শোনাচ্ছেন তিনি। একই অবস্থা বাংলালিংকের গ্রাহক ইকবাল ও রবির গ্রাহক ইসমাঈলের। কল করলেই কথা শুনতে পাননা ঠিকমতো। এক প্রান্তের গ্রাহক কথা শুনলে অন্যপ্রান্তে শোনেন না। আবার কল করলে মিনিট সচল আছে কিন্তু কোন কোথা শোনা যাচ্ছে না, কেটে নেওয়া হচ্ছে ব্যালান্স এমন অভিজ্ঞতাও পাচ্ছেন তারা। ফলে মোবাইল অপারেটরদের ভয়েস সেবার মান নিয়ে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছেন গ্রাহকরা। বাদ যাচ্ছেন না ইন্টারনেট গ্রাহকরাও। গতি নিয়ে প্রতারণা, কারণে অকারণে বিল কেটে নেয়া, প্যাকেজ প্রতারণাতে অভিযোগে অন্ত নেই তাদের। বিরক্ত গ্রাহকরা এই খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাতে (বিটিআরসি) অভিযোগ জানিয়েও সুফল পাচ্ছেন না। তারপরও অনেকই অভিযোগ দিচ্ছেন এই প্রতিষ্ঠানে। প্রতিদিনই যথার্থ সেবা না পাওয়া, বিড়ম্বনা ও প্রতারণার অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে বিটিআরসিতে। দেশের ৫ মোবাইল অপারেটরের মধ্যে গ্রাহকের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। গত ডিসেম্বরে এই ৫ অপারেটরের বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ জমা পড়েছে তার ৫৬ শতাংশ গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। আর সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কলড্রপ নিয়েই।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, গ্রাহকের সর্বাধিক অভিযোগ কলড্রপ নিয়ে। তারা বলছেন, কাউকে কল দেওয়ার পর ঠিকমতো কথা বলা যায় না কিংবা এক প্রান্তের গ্রাহক কথা শুনলেও অন্যপ্রান্তের গ্রাহক শুনতে পান না। ফলে পুনরায় কল করতে হয় এবং গচ্ছা যায় অতিরিক্ত অর্থ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আরেক বিড়ম্বনা মিউট কল। এই কলে সচল থাকে নেটওয়ার্ক, হ্যান্ডসেটের পর্দায় এয়ারটাইম মিনিট গতিশীল থাকে, কিন্তু শোনা যায় না কথা তবে পরিশোধ করতে হয় বিল। এ ছাড়া ইন্টারনেটের গতি নিয়ে প্রতারণা, ইন্টারনেট ঠিকমতো কাজ না করলেও বিল কেটে রাখা, বিভিন্ন প্যাকেজ একবার চালু হওয়ার পর আর বন্ধ না হওয়া, এসএমএসের যন্ত্রণা, নেটওয়ার্কের আসা-যাওয়া, স্থানে-স্থানে কভারেজ না থাকা, বিভিন্ন ট্যারিফ/প্যাকেজ বিল নিয়ে প্রতারণা সংক্রান্ত আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর থেকে বাইরে নেই খোদ ডা, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রীও। স¤প্রতি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিটিআরসিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, মোবাইল অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে দিনে ৪০টিরও বেশি অভিযোগ তার কাছে এসেছে। সেবার মান নিয়ে নিজের হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিটিআরসি থেকে আমার বাসায় যেতেই ৮ থেকে ১০ বার কলড্রপের বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ি। আর ইন্টারনেটের গতির কথা না-ই বলি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ইউনিয়ন থেকে দেশের সব মানুষের দোরগোড়ায়। সার্বিক সেবাও দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে। প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের পর যুক্ত হয়েছে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল। দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পর রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশেও। থ্রিজি সেবা থেকে ফোরজিতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অপেক্ষা গোটা জাতি। কিন্তু এই খাতে সেবার মানোন্নয়নে কোন অগ্রগতিই দেখছেন না ভোক্তারা। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ নীতিমালা প্রণয়ন, নির্দেশনা প্রদান করলেও কাজে আসছেনা কোন কিছুই। মোবাইল অপারেটরগুলোর গ্রাহকসেবার মান বাড়ার পরিবর্তে উল্টো কমেছে দিন দিন। থ্রিজি সেবায় মোবাইল ইন্টারনেটের গতি অস্বাভাবিক কম থাকায় হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার কিংবা মেসেঞ্জার ব্যবহার করে কল করার ক্ষেত্রেও বারবার ‘নো কানেকশন’, ‘রিকানেকটিং’ কিংবা ‘ওয়েটিং ফর নেটওয়ার্ক’-এর যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদেরও। যার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বিটিআরসির অভিযোগ থেকেই।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, ডিসেম্বরে বিটিআরসিতে মোবাইল অপাটেরদের সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের ৩ হাজার ৫২২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। এই অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ছে এক হাজার ৯৭৩টি। এরপরই আছে বাংলালিংক। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ৬১২টি, রবির বিরুদ্ধে ৬০৪, এয়ারটেলের বিরুদ্ধে ২২১ এবং টেলিটকের বিরুদ্ধে ১০৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে। বন্ধ থাকা সিটিসেলের বিরুদ্ধেও ৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, দেশে যে হারে মোবাইল গ্রাহক বেড়েছে, সে হারে পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) নেয়নি অপারেটররা। এ ছাড়া সময়মতো নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, হালনাগাদ বা স¤প্রসারণ করেনি। দীর্ঘদিন যাবৎ স্পেকট্রাম কেনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করছে না অপারেটরগুলো। এসব কারণে অধিক গ্রাহকের চাপ নেটওয়ার্ক নিতে পারছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল নেটওয়ার্কে গ্রাহকের জন্য মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির। বিটিআরসি সেবার গুণগত মানের একটা ‘মানদÐ’ নির্ধারণ করতে পারে এবং সেই মানদÐ কতটা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে, সেটি বিচার করতে পারে। কিন্ত বাস্তবে বিটিআরসি সে দায়িত্ব পালন করছে কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে বিটিআরসি সচিব মো. সরওয়ার আলম বলেন, গ্রাহকের অভিযোগগুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধান করা হচ্ছে। বেশিরভাগ অভিযোগেরই সমাধান করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিটিআরসিও ‘কোয়ালিটি অব সার্ভিস’ পরীক্ষায় কাজ করছে।
তিনি জানান, অপারেটররা গ্রাহক-অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছে, আগামী ফেব্রæয়ারির মধ্যে তারা সব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।



 

Show all comments
  • Asaduzzaman Shamim ২০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:১৮ পিএম says : 0
    অনেক সময়োপযোগী এবং সাহসী প্রতিবেদন। মোবাইল কোম্পানীগুলোর প্রতারণা আর নিম্নমানের সেবার কারনে আমরা বারবার ঠকছি।কিন্তু দেখার কেউ নেই। ধন্যবাদ ইনকিলাব কে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোবাইল

১৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ