Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবাসন প্রকল্পে বিলীন আবাদি জমি

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নে একটি আবাসন প্রকল্পে শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটা ও ভরাট না করে শ্যালো মেশিন দিয়ে মাটি ভরাট করায় একদিকে যেমন ঐ এলাকার শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি বিলীন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ফসলি জমি। মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করায় ২০/৩০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়ে জমিগুলো ডোবায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের কৃষকরা। বিষয়টিতে জরুরী ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
জানা গেছে, জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের আরাজী জয়দেব মৌজায় ভুমিহীনদের আবাসন প্রকল্প নির্মাণের জন্য ‘আরাজি জয়দেব গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প-২’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। উপজেলার মর্নেয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী আজাদ প্রকল্পটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের ২’শ ১২ টন চাল বরাদ্দ পান। যার সরকারী বিক্রয় মুল্য প্রায় ৮৩ লাখ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকল্পটি দেখ ভালের দায়িত্বে থাকেন এবং তিনি প্রকল্পের বিল প্রদান করবেন। আর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকল্পটি তদারকী করবেন। নিয়মানুযায়ী প্রকল্পটিতে কাজের বিনিময়ে খাদ্য দেয়ার কথা এবং সে মোতাবেক স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের চুক্তিতে সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন প্রকল্প চেয়ারম্যান।
কিন্তু সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। অধিক মুনাফার আশায় শ্রমিকের পরিবর্তে শ্যালো মেশিন দিয়ে মাটি ভরাট করে চলেছেন প্রকল্প চেয়ারম্যান। মেশিন দিয়ে মাটিভরাট লাভজনক হওয়ায় সরকার দলীয় চেয়ারম্যান নিয়মের তোয়াক্কা না করে দাপটের সাথে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাছাড়া, মেশিন দিয়ে মাটি ভরাটের কারনে ২০/৩০ ফুট গভীররতার সৃষ্টি হয়ে ঐ এলাকার ফসলি জমিগুলো পরিণত হচ্ছে ডোবায়। এতে করে জমির মালিকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্যালো মেশিন দিয়ে মাটি তুলে নেয়ায় ইতিমধ্যে আশ-পাশের প্রায় ৪/৫ একর ফসলি জমি গভীর গর্তে বিলীন হয়ে গেছে এবং আসপাশের আবাদযোগ্য জমিগুলিও হুমকির মুখে পড়ছে। প্রকল্প চেয়ারম্যান প্রভাবশালী সরকার দলীয় হবার কারনে এলাকার নিরীহ লোকজন মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন বন্ধে গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিক ভাবে অবহিত করলে তিনি গত ১৩ই ডিসেম্বর সরেজমিন পরিদর্শন করে মেশিন দিয়ে মাটি ভরাট বন্ধের মৌখিক নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাজটি বন্ধ রাখতে বলেন। পরবর্তীতে আবার ১৪ই ডিসেম্বর অজ্ঞাত কারনে পুনরায় তিনি কাজটি চালিয়ে যাবার অনুমতি দেন। এরপর থেকে প্রকল্প চেয়ারম্যান পুনরায় মেশিন দিয়ে মাটিভরাট শুরু করলে গত ৭ই জানুয়ারী ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের মৌখিক অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ৩টি মেশিন দিয়ে মাটি ভরাট করতে দেখে তাৎক্ষনিক মেশিন বন্ধ করে দেন। গত ১০ই জানুয়ারী ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিক মেশিন দিয়ে প্রকল্প স্থানে মাটি ভরাট বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ দেন। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক আবুল হোসেন, বেলাল, সবুজ মিয়া, রাজা মিয়া, মিল্টন, অলম মিয়া জানান নদী ভাঙ্গনের কারনে জমিগুলি দিয়ারা রেকর্ডভুক্ত হয়নি আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি রেকর্ড ভুক্তির জন্য প্রক্রিয়া চলছে। এব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান মেশিন দিয়ে প্রকল্প স্থানে মাটি ভরাটের সরকারী কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি তিনি শুনেছেন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন। তবে তা এ পর্যন্তই। ইউপি চেয়ারম্যান সরকার দলীয় প্রভাবশালী এবং তিনি নিজেই প্রকল্প চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অত্যন্ত দাপটের সাথেই চালিয়ে যাচ্ছেন মেশিন দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ। ফলে একদিকে যেমন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা, তেমনি ন্যয্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ঐ এলাকারশ্রমিক-দিনমজুররা। বিষয়টিতে জরুরী ভিত্তিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ