Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাসড়ক দখলদারমুক্ত করা গেলে যানজট কমে যাবে

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভোগান্তি - ৩

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : ২০১৬ সালের ৩১ মে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতুর উভয় পাশে ভয়াবহ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে আছে গাড়ি। জানতে চাইলে চারলেন প্রকল্পের পরিচালক আফতাব হোসেন খান ইনকিলাবকে বলেছিলেন, জুনের মধ্যেই চার লেনের কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছি। আশা করছি জুনেই সব ভোগান্তির ইতি ঘটবে। তিনি বলেন, চারলেনের কাজ শেষ হলে এবার ঈদেও মানুষ যানজটমুক্ত রাস্তা দিয়ে ঘরে ফিরতে পারবে। ওই বছরই চার লেনের উদ্বোধন হয়েছে। ঈদ তো দুরে থাক, এখন স্বাভাবিক দিনেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুৃর দুই পাড়ের যানজট কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। আর ঈদ এলে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন বলে খ্যাত এই মহাসড়কে ৭০/৮০ কিলোমিটার যানজটের কবলে পড়েন যাত্রীরা। চার ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে লাগে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা। গেল ঈদেও সেই ভোগান্তি শুরু হয়েছিল বহু আগে থেকেই।
ভুক্তভোগিদের মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের যতোটুকু জায়গা আছে তা যদি দখলমুক্ত থাকতো, নির্বিঘেœ গাড়ি চলাচল করতে পারতো-তাহলে আর যানজট থাকতো না। চার লেন উদ্বোধনের আগে যানজট হতো রাস্তার কাজের জন্য। এখন কাজ শেষ তবে এরই মধ্যে মহাসড়কের দু’পাশে অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে। চার লেনের উপরেই গড়ে তোলা হয়েছে কাঁচা-পাকা দোকান ও ঘর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা ও গোমতী সেতুর দুই পাড়ে যানজটের কবলে পড়ে গাড়িগুলো যেখানে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে সেসব স্থানে মহাসড়কের দুপাশেই গড়ে উঠেছে স্থায়ী দোকান। যানজটে গাড়ি আটকা পড়ে যাত্রীদের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখন ওই সব দোকানীদের পোয়াবারো অবস্থা হয়। যাত্রীরা ওই সব দোকান থেকে খাবার কিনে খায়। এতে করে নিমিষেই সারাদিনের বেচাবিক্রি শেষ করতে পারে দোকানীরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, মহাসড়কের উপরে দোকান বা ঘর তোলার নেপথ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতারা জড়িত। তারাই পুলিশকে মাসোহারার বিনিময়ে ম্যানেজ করে দোকানগুলো উঠাতে সাহায্য করেছে। জানতে চাইলে সোনারগাঁও এলাকার আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, নেতাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। পুলিশ চাইলে একদিনে সব উচ্ছেদ করতে পারে। পুলিশকে টাকা না দিয়ে কেউই এভাবে রাস্তার উপর দোকান বসাতে পারবে না। এগুলো উচ্ছেদের জন্য সড়ক ও জনপথ এবং পুলিশের ইচ্ছাই যথেষ্ঠ। অনেকের মতে, প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে ওই সব দোকানে বেচাকেনা বৃদ্ধির জন্য কর্তব্যরত পুলিশ ইচ্ছা করে যানজটের সৃষ্টি করে। সাইড করতে বলে প্রথমে কয়েকটি গাড়িকে দাঁড় করায় এরপর আপনাআপনি গাড়ির দীর্ঘ সারি থেকে যানজটের সৃষ্টি হয়। কিছুক্ষণ বেচাবিক্রির পর কর্তব্যরত পুলিশই আবার যানজট মুক্ত করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। ততোক্ষণে তাদের হাতে আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যাত্রীদের কপালে জোটে সীমাহীন ভোগান্তি।
দুরপাল্লার বাস চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কের উপরে কোনো গাড়ি বিকল হয়ে গেলে তা সরানোর জন্য পুলিশের রেকার প্রস্তুত থাকার কথা। পুলিশের তথ্য মতে, মেঘনা ও গোমতী সেতুর উভয় পাড়ে দুটো রেকার সব সময় প্রস্তুত থাকে। কিন্তু সেতু এলাকায় কোনো গাড়ি বিকল হয়ে গেলে তা সরাতে গিয়ে ২/৩ ঘণ্টাও লেগে যায়। কয়েকদিন আগেও এর প্রমান মিলেছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে দাউদকান্দি সেতু পার হয়ে ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়েন একজন যাত্রী। তখন যানজটের কারন জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, সেতু এলাকায় মহাসড়কের উপরে একটি গাড়ি বিকল হওয়াতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওই কর্মকর্তার দেয়া তথ্য মতে, দুই ঘণ্টা আগে গাড়িটি বিকল হয়েছে। অথচ তখনও রেকার ঘটনাস্থলে পৌঁছে নি।
এদিকে, চার লেন মহাসড়কের দুপাশের দখলকৃত অংশ উচ্ছেদের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ একেবারে উদাসীন। এক বছর আগে অবশ্য সওজ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছিল। সে সময় সওজের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে ছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর ৮ লেন মহাসড়কসহ চার লেন মহাসড়ক দখলদারমুক্ত করতে বেশ কয়েকদিন অভিযান চালিয়েছিলেন। কয়েকদিন যেতে না যেতেই দুদকের কথিত ঘুষের ফাঁদে ফেলে তাকে গ্রেফতার করানো হয়। অনেকেই মনে করেন, ওই ঘটনা ছিল একটা নাটক। মহাসড়ককে দখলদারমুক্ত করার কারনেই সওজের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মিথ্যা ‘নাটক’ সাজিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
এদিকে, যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৮ লেনের মহাসড়ক ইতোমধ্যে অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে হানিফ ফ্লাইওভার পার হলেই মহাসড়কের বাম দিকের বিশাল অংশ জুড়ে বাস ও মিনিবাস রাখা থাকে। দিনে এক লেন দখল করে থাকলেও রাতে দুই লেন দখল করে রাখা হয় বাস ও মিনিবাস। এরপর শনিরআখড়ায় মহাসড়কের উপরেই বসে দোকানপাট। বাসগুলো এলোপাথারি দাঁড়িয়ে থাকে চার লেনের তিন লেন দখল করে। শনিরআখড়া ওভার ব্রিজের নিচে সে কারনে সব সময় যানজট লেগে থাকে। শনিরআখড়া আন্ডারপাসের উপরেও অবৈধ দোকান বসানো হয়েছে পুলিশবক্স ঘেঁষেই। এরপর রায়েরবাগের আগে দুপাশেই মহাসড়ক দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। রায়েরবাগে মহাসড়কের উপরেই কাঠ ব্যবসায়ীরা বড় বড় গুঁড়ি ফেলে রেখেছে। পুলিশ বা সওজ কর্তৃপক্ষ এগুলো দেখেও দেখে না। আবার ৮ লেনের মহাসড়কটি ইতোমধ্যে ভেঙ্গে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছ। এজন্য যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ