Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যশোর রোডের দুই পাশের গাছ কাটার বিরুদ্ধে শিল্পী সমাজ

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিনোদন রিপোর্ট: যশোর রোড চার লেনে উন্নীত করার কাজ শিঘ্রই শুরু হচ্ছে। এজন্য সড়কটির দুই পাশে থাকা নতুন-পুরনো প্রায় দুই হাজার গাছ কেটে ফেলা হবে। গত ৬ জানুয়ারি যশোরে এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক যথাযথ মানের ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতায় রাস্তার দুই পাশের গাছ অপসারণের বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জানানো হয়, গুরুত্বপূর্ণ যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি (যশোর রোড) চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। শিঘ্রই এ কাজ শুরু হবে। বর্তমানে মহাসড়কটির দুই পাশে নতুন-পুরনো অনেক গাছ রয়েছে। সেগুলো রেখে মহাসড়ক চার লেন করা সম্ভব না। এ কারণে জনস্বার্থে গাছ কাটতে হবে। এ গাছ কাটার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দেশের অনেক মানুষ। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিল্পীসমাজও অবস্থান নিয়েছে। এরই মধ্যে সৈয়দ হাসান ইমাম, তৌকীর আহমেদ, লুবনা মারিয়াম, মেহের আফরোজ শাওন, কবীর সুমনের মতো ব্যক্তিত্বও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের যুক্তি, যশোর রোড এবং এখানকার শতবর্ষী বৃক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের সাক্ষী। এ বৃক্ষ কেটে ফেললে পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ার পাশাপাশি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক দুর্লভ স্মৃতি চিরতরে হারিয়ে যাবে। দেশের অসংখ্য তারকা, শিল্পী নানাভাবে শতবর্ষী বৃক্ষ নিধনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। চিত্রনায়ক রিয়াজ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে তার ফেসবুকে লিখেছেন, গাছ আমাদের পরম মমতা দেয়। শীতল ছায়া, ফল, ফুল ও নির্মল বাতাস দেয়। যশোর রোডের গাছগুলোর প্রাণ বাঁচাতে রিয়াজ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, একজন মমতাময়ী মায়ের কাছে ২০০০+ গাছের জীবন ভিক্ষা চাই। চিত্রনায়ক ওমর সানিও যশোর রোডের গাছ না কাটার আহ্বান জানিয়ে তার ফেসবুকে লিখেছেন, আমি যশোরের সন্তান নই, আমি বরিশালের সন্তান। বাংলাদেশ ও ভারতের সড়কপথের যোগাযোগের অন্যতম সড়ক যশোর রোড। এই যশোর রোড নানা কারণে বিখ্যাত। মৌসুমী ভৌমিকের বিখ্যাত গান রয়েছে যশোর রোড নিয়ে। বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন্স গিলবার্গ যশোর রোড দিয়ে নৌকায় করে বাংলাদেশের মাটিতে এসেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়। তিনি কবিতা রচনা করেছিলেন যুদ্ধ আক্রান্ত বাংলাদেশ দেখে। যশোর রোডের দুই ধারে রয়েছে সারিসারি শতবর্ষী গাছ। এ গাছ আমাদের ঐতিহ্য। এ গাছ আমাদের অহংকার, আমাদের সোনালি রক্তঝরা অতীতের সাক্ষী। কানাডার নায়াগ্রা জলপ্রপাত যেমন তাদের ঐতিহ্য, আমাদের যশোর রোডও তেমন একটি ঐতিহ্য। আজ দেশের উন্নয়নের জন্য গাছগুলোকে কাটার কথা ভাবা হচ্ছে। যা শুনে আমি ব্যথিত। আমার হৃদয় আজ ক্রন্দনরত। আমরা উন্নয়ন করব, হয়তো নতুন চারাগাছও রোপণ করব। কিন্তু শতবর্ষী গাছগুলোর অবস্থায় কি আনতে পারব নতুন চারাগাছগুলোকে? তাই আমি সংশ্লিষ্টদের নিকট আহ্বান জানাই দেশের ঐতিহ্যকে রক্ষা করে বিকল্প উপায় ভাবার জন্য। আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি চাই, তাহলে গাছগুলোকে বাঁচাতে পারব। প্রকৃতি তার মতো থাকুক না, আমরা আমাদের মতো। উল্লেখ্য, যশোর শহরের দড়াটানা মোড় থেকে বেনাপোল পর্যন্ত সড়কটির দুপাশে দুই হাজারেরও বেশি গাছ আছে। এর মধ্যে অনেক গাছ শতবর্ষী। রাস্তার দুই পাশে এ বৃক্ষরাজী দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। সীমান্তের ওপারে এ সড়কটি পরিচিত যশোর রোড নামে। সীমান্তের ওপাড়েও রাস্তা চওড়া হয়েছে। কিন্তু একটা গাছও কাটা হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও এ সড়কটির রয়েছে ঐতিহাসিক অবস্থান। লাখ লাখ শরণার্থী এ সড়ক ধরে ভারতে গিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ যুদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। ফিরে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন তার ঐতিহাসিক কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। মৌসুমী ভৌমিকও গেয়েছিলেন ‘যশোর রোড’ নামে একটি গান। অনেক স্মৃতিবিজড়িত এ রাস্তাটি ৪ লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়ার পর রাস্তার দুই পাশে থাকা ২ হাজার ৩১২টি গাছ কেটে ফেলা হবে। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে শতবর্ষী এ গাছগুলো কেটে ফেলা হবে একটি আত্মধ্বংসী উদ্যোগ, এমনটাই মনে করছেন শিল্পী ও সচেতন মানুষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ