Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষকের বীজতলায় কৃষি বিভাগের সাইনবোর্ড!

দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অপকীর্তি
চাষীদের কল্যানে নেয়া সরকারি উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। আসন্ন ইরি-বোরো আবাদকে নিশ্চিত করার জন্য কৃষকেরা আগে-ভাগেই বীজতলা তৈরি করতে শুরু করেছে। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকের বীজতলায় নিজেদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে আদর্শ বীজতলা হিসেবে দেখানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকের বীজতলাকে কৃষি বিভাগের আদর্শ বীজতলা দেখাতে যেয়ে বীজতলার মাঝে নালা কেটে হাজার হাজার বীজ গাছ নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। এ জন্য কৃষকদের কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ এমনকি বীজ ও সার দেয়া হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে বীজতলা তৈরির পুরো অর্থই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা পকেটস্থ করছে। কৃষি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী কর্মকান্ডে দিনাজপুর কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আগেভাগেই ইরি-বোরো বীজতলা তৈরির পর কৃষি বিভাগের দখলদারির ঘটনায় সাধারণ কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। অবশ্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষকের এই অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
ধানের জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর অঞ্চল। আমন ধান উঠতে না উঠতেই কৃষকেরা বোরো ধানের বীজ বপন শুরু করে দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষকদের এসব বীজতলায় নিজেদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিচ্ছে। সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কৃষকের বীজতলায় নালা কেটে এগুলোকে আদর্শ বীজতলার রূপ দিচ্ছে। বীজতলার মাঝ দিয়ে নালা তৈরি করায় বিপুল বীজগাছ ধ্বংস করা হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ বীজতলাগুলোতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিজেদের দাবি করলেও কোনো অর্থ প্রদান করা হচ্ছে না। হিসাব করে তৈরি করা বীজতলা বেহাত হওয়ায় কৃষকেরা চলতি ইরি-বোরো ধান আবাদ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বীজতলা তৈরি করে উৎপাদিত চারা কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রধান সড়কের পাশে থাকা কৃষকদের অধিকাংশ বীজতলাতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের আদর্শ বীজতলার সাইনবোর্ড ঝুলানো হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, বড় কর্মকর্তাদের অতি সহজে দেখানোর জন্য রাস্তার পাশে বীজতলাগুলোকে বেছে নেয়া হয়েছে।
বীজতলা তৈরিতে সরকারি বরাদ্দ সম্পর্কিত কোন তথ্য জানাতে অস্বীকার করেন জেল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ গোলাম মোস্তফা।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, নিজেদের স্বার্থের জন্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জোরপূর্বক এই পদ্ধতি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের জমিতে এ ধরনের প্রদর্শনী করতে হলে বীজ বপনের আগেই কৃষি অফিসকে লিজ বা বর্গা নিতে হয়। একইসাথে কৃষকদের প্রয়োজনীয় বীজ ও সার সরবরাহ করতে হয়।
অপরদিকে, আদর্শ বীজতলা তৈরি করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে করতে হয়। দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, আদর্শ বীজতলা তৈরির ক্ষেত্রে বীজ বপনের আগেই জমি প্রস্তুত করতে হবে। বীজ থেকে চারা গজানোর পর নালা তৈরি করা হলে তা আদর্শ বীজতলা হবে না। চারা গঁজিয়ে যাওয়ার পর নালা কাটা হলে যে চারাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা দিয়ে হাজার একর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদ করা সম্ভব হবে না।
জোরপূর্বক রাস্তার ধারে এই সব আদর্শ বীজতলার জন্য তৈরি করা হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চল বা গ্রামের ভেতরের বীজতলা আদর্শর ছোঁয়াও পায় না। উল্লেখ্য, জেলায় এ বছর প্রায় পোনে দুই লাখ একর জমিতে বোরো চারা রোপণের জন্য কৃষকেরা বীজ বপন করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ