Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে বিভক্ত আদেশ

নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দল থেকে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার কারণে আসন শূন্য হওয়ার বিধান সম্বলিত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার এ বিষয়ে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ এই বিভক্ত আদেশ দেন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ কেন সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। অন্যদিকে বিচারপতি আশরাফুল কামাল এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে রিট আবেদনটিই খারিজ করে দেন। নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি রিট শুনানির জন্য নতুন একটি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন। ওই বেঞ্চেই এর নিষ্পত্তি হবে। আদালতে রিটকারীর আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৭ এপ্রিল এই রিট আবেদনটি করেন ইউনুছ আলী আকন্দ। রিট আবেদনে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও আইন সচিবকে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনটি করার পর ইউনুছ আলী আকন্দ বলেছিলেন, একজন সংসদ সদস্য দলের বাইরে সংসদে নিজস্ব মত দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হচ্ছে ৭০ অনুচ্ছেদ। কারণ দলের সিদ্ধান্তের বাইলে গেলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকছে না। এটি অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিলের রায়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, এই অনুচ্ছেদ সংসদ সদস্যদের বেদনাহত এবং অসংগতভাবে তাদের অধিকারকে শৃঙ্খলিত করেছে। তাই সংসদের কোনো ইস্যুতেই তারা দলীয় অবস্থানের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নিতে পারেন না। ৯৫(২) গ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো আইন না করা সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে নির্বাহী বিভাগকে একটি বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। আর ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ ’৭২-এর সংবিধানে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নির্বাহী বিভাগের প্রভাব পড়বে।
এস কে সিনহা প্রশ্ন রাখেন, সংসদ সদস্যদের যদি সন্দেহের চোখেই দেখা হয়, তাহলে তাদের কী করে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের মতো দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজে ন্যস্ত করা যায়। তাই এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্যের চেতনা হলো সংসদের নির্বাচিত সদস্যরা তাদের মনোনীত করা দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখবেন। আসলে তারা তাদের দলের উচ্চপর্যায়ের হাতে জিম্মি। তাই ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছেন, তার মধ্যে আমরা কোনো বৈকল্য দেখি না। সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হলে বিচারকেরা দলের হাইকমান্ডের অনুকম্পানির্ভর হয়ে পড়বেন।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) উক্ত দল হতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তা আসন শূন্য হবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হবে না। রিটটি জনস্বার্থে নয় এমন দাবি করে তা খারিজের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের জবাবে আদালত বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সর্বোচ্চ আদালতের একটি পর্যবেক্ষণ রয়েছে, যা মানা হাইকোর্টের জন্য বাধ্যতামূলক। আর সেজন্যই এ সংক্রান্ত রিটটির ওপর শুনানি হওয়া প্রয়োজন।



 

Show all comments
  • Habibur Rahman ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১:৩২ এএম says : 0
    we are waiting to see .............
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্টে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ