বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের বিচার ব্যবস্থা কুক্ষিগত করাকে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ‘বড় অর্জন’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে নাগরিক ঐক্য ‘বর্তমান সরকারের ৪ বছর এবং নির্বাচনের বছর’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে অত্যন্ত জবরদস্তিমূলকভাবে দেশের প্রধান বিচারপতির মতো পদাধিকারীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবিশ্বাস্যভাবে দেশের উচ্চ আদালত এখন চলছে একজন শপথহীন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির অধীনে। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের দিকনির্দেশনা না মেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ ও শৃঙ্খলাবিধিতে সরকারের কর্তৃত্বই বহাল আছে।
বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তুলে ধরা হয়নি এমন কয়েকটি বিষয়ে নাগরিক ঐক্য তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
শিক্ষা খাত নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নাগরিক ঐক্য মনে করে, গত চার বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের খুব ‘বড়’ একটি অর্জন প্রধানমন্ত্রী বলেননি। সেটা হলো প্রশ্ন ফাঁসের রেকর্ড। দলটির অভিযোগ, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রশ্ন ফাঁস রোগের শুরু। বাড়তে বাড়তে গত চার বছরে সেটি মহামারির আকার ধারণ করেছে। এই সময়ে শিক্ষার কাক্সিক্ষত মানের আশপাশেও যেতে পারেনি।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে বলা হয়, তুলনামূলক তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেখানোর চেষ্টা করেছেন, দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। সরকার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে জোর দিয়ে সামনে আনার চেষ্টা করে। গত নয় বছরের জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর পেছনে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। দেশের কৃষক, পোশাক শ্রমিক আর প্রবাসী শ্রমিকের শ্রমে ও ঘামে এই অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। বরং সরকার এত দুর্নীতিপরায়ণ না হলে এবং ন্যূনতম সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে এই প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে হতো এই ব্যাপারে অর্থনীতিবিদেরা একমত।
মাথাপিছু আয় প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মাথাপিছু আয় মানে দেশের মানুষের গড় আয়, এটা কখনো মানুষের বাস্তব অবস্থা প্রতিফলিত করে না। দেশের সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ শতাংশের খানা প্রতি আয় (হাউজহোল্ড ইনকাম) ২০০৫ সালে ছিল এক হাজার ১০৯ টাকা, যা কমে ২০১৬ সালে ৭৩৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ধনী পাঁচ শতাংশের খানা প্রতি আয় ৩৮ হাজার ৭৯৫ থেকে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা।
দারিদ্র্য হ্রাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের অর্জন বোঝাতে সরকার দারিদ্র্য হ্রাসের কথা বলছে। আগের এক বছরের সঙ্গে বর্তমান দারিদ্র্য হারের তুলনা করেছে। এখানেও শুভংকরের ফাঁকি আছে। ২০০০ থেকে ২০০৫ সালে দেশের দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে নেমে হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। দেশে দারিদ্র্য হ্রাসের হার এই সরকারের আমলে কমেছে।
কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্য মনে করে, সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার মিষ্টি প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল। কিন্তু দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ দুই বছরে মাত্র ৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ এই সময়ে প্রতি বছর দেশের কর্মবাজারে প্রবেশ করেছে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ। অর্থাৎ মাত্র দুই বছরে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ। কর্মসংস্থান করার ক্ষেত্রেও সরকারের ব্যর্থতা বিগত দিনের তুলনায় অনেক বেশি। ২০০০ থেকে ২০০৫ কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ৩, আর ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সেটা কমে হয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের প্রধান উপদেষ্টা এস এম আকরাম, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক শহীদুলাহ কায়সার, কেন্দ্রীয় সদস্য মমিনুল ইসলাম, জাহেদুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।