পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। ২০১৬ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হয়। একই বছরের ২ জুলাই এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পটির অধীনে তিনটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি কয়েকদিন আছে চালু হয়েছে। বাকী দুটি ফ্লাইওভার ও রেল ওভারপাস নির্মাণ এখনও সম্পন্ন হয়নি। নির্মাণকালেই নানা জটিলতা দেখা দেয় চার লেন নিয়ে। প্রকল্প শেষে এখনও জটিলতা কাটেনি।
নির্মাণকাজে বিলম্বের কারনে তিন দফা বাড়ানো হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের ব্যয়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ বৃদ্ধির পর প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বিশাল অঙ্কের ব্যয়ে এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী ঢাকার সাথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা, অর্থনীতির লাইফলাইনকে সচল রাখা। একই সাথে মানুষের ভোগান্তিও কমানো।
কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন রুপে দেখা দিয়েছে। চার লেন মহাসড়ক চালু হওয়ার এক বছরের মাথায় বদলে গেছে দৃশ্যপট। প্রকল্পের অধীনে দুটি ফ্লাইওভার ও একটি ওভারপাসের কাজ চলছে। সেগুলোকে কেন্দ্র করে মহাসড়কের বেহাল দশা এখনও বিদ্যমান। বিকল্প রাস্তা না করে এক লেন দিয়ে গাড়ি চালানোকে কেন্দ্র করে মহাসড়কের ফেনীর অংশে যানজট এখন নিত্যসঙ্গী। সর্বোপরী চার লেনের গতি থামিয়ে দিচ্ছে মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোলপ্লাজা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে এই দুই টোলপ্লাজা এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। টোল আদায়কারী কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, জনবল সঙ্কট, পুলিশের গাফিলতি, ফিটনেসবিহীন যানসহ নানা কারনে সব দুর্ভোগের ঠিকানা টোলপ্লাজা।
এ বিষয়ে মহাসড়কের যাত্রী ও চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চার লেনের মহাসড়ক ধরে ঢাকা থেকে অনায়াসে ৪-সাড়ে ৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। কিন্তু পথিমধ্যে মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু (দাউদকান্দি ব্রিজ) আর প্রথম সেতু ( মেঘনা ব্রিজ) কেন্দ্রিক যানজট সব ধরণের গাড়ির গতি থামিয়ে দিচ্ছে। জানতে চাইলে স্টারলাইন বাসের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, চার লেন মহাসড়ক ধরে চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা বিশ্বরোড, ময়নামতি, চান্দিনা পার হয়ে সাঁ সাঁ গতিতে আসা কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু দাউদকান্দি ব্রিজের কাছাকাছি আসলেই গাড়ির চাক্কা থাইমা যায়। এই কয় ফুট আগানোর পরে আবার থামতে হয়। এভাবে এক ফুট, দুই ফুট করে ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে কয়েক বার স্টার্টও বন্ধ করতে হয়। এর মধ্যে যাত্রীদের কি অবস্থা হয় তা বুইঝা লন।
চট্টগ্রাম থেকে প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় আসেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা শওকত আলী। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বা ঢাকা থেকে বাসে উঠলেই যাত্রীরা সবাই মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজ আতঙ্কে ভোগেন। ব্রিজ পার হলে আর তেমন কোনো চিন্তা নাই। কিন্তু ব্রিজের টোলপ্লাজায় কতোক্ষণ লাগবে তা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। ওই যাত্রী বলেন, যেদিন টোলপ্লাজার সবগুলো বুথ খোলা থাকে, পুলিশ ঠিকমতো ডিউটি করে, সেদিন খুব বেশি ঝামেলা হয় না। আধা ঘণ্টা বা পৌনে এক ঘণ্টা পর গাড়ি আবার মহাসড়কে ওঠে। আর মহাসড়কে ওঠা মানেই গন্তব্য বেশি দূরে নয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের শ্যামলী পরিবহনের চালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রথমত: মহাসড়কে পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না। তারা ইচ্ছা করে মহাসড়কের উপরে গাড়িগুলো দাঁড় করায়। এতে করে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে বেশ বেচাকেনা হয়। পুলিশ ওই সব দোকান থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলে উল্লেখ করে ওই চালক বলেন, পুলিশকে টাকা না দিয়ে কেউই মহাসড়কের উপর দোকান বসাতে পারে না। বরং গাড়ির জ্যামে বেচাকেনা বেশি হলে সেখান থেকে কতিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্য ভাগ পায়। ওই চালক বলেন, দ্বিতীয়ত: দুই সেতুর টোল প্লাজার চরম অব্যবস্থাপনায় দু›পাশে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে যাত্রীবাহী পরিবহনসহ যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। আর এতে যেমন সাধারণ যাত্রীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে, তেমনি সরকারের চার লেন প্রকল্পও জনগণের কাছে বিফল মনে হচ্ছে।
দাউদকান্দির বাসিন্দা ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বলেন, যেদিন টোল প্লাজার ব্যবস্থাপনা বিদেশীদের হাত থেকে দেশী বিশেষ কোম্পানীর হাতে গেছে, সেদিন থেকেই অব্যবস্থাপনা আর অনিয়ম লেগেই আছে। তার ভাষায়, অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে দুই টোল প্লাজাই। মহাসড়ক ধরে দ্রুত গতিতে এলেও গাড়িগুলো টোলপ্লাাজায় এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে। অদক্ষ কর্মচারী দিয়ে পরিচালিত টোল বুথগুলোতে সময় লাগছে কয়ে গুণ বেশি। বগুড়ার ট্রাক চালক সৌখিন বলেন, ট্রাক, লরি বা কাভার্ড ভ্যান টোল প্লাজায় ওজন করতে গিয়ে তর্কাতর্কি হয়, তার জেরে দীর্ঘ যানজট হয়। তিনি বলেন, প্রথমে কোনো লরি ওজন করার স্কেলে দেওয়া হলে ওজন দেখায় ২০ টন, কিন্তু ড্রাইভার বলে, আমি তো আনলাম ১৫ টন। তখন তারা বলে, পেছনে গিয়ে আবার আসেন। আবার স্কেলে ওঠানো হলে হয়তো একটু কমায়- ১৮ টন, কিন্তু ড্রাইভারতো মানে না। সে বাড়তি ফি দেবে না বলে গোঁ ধরে। এবার তাকে গাড়ি সাইড লাগাতে বলা হয়। এমন করতে করতে ওই গাড়ির পেছনে লেগে যায় দীর্ঘ লাইন।
উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের আওতায় ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার নতুন দুই লেন নির্মাণের পাশাপাশি পুরোনো দুই লেন ওভারলে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সড়কের উপরিভাগের পুরোনো অংশ তুলে ফেলে নতুন করে পিচ ঢালাই করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।