Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে

সংসদে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

| প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপপ্রয়াস চালায় তাদের বিরুদ্ধেও ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে। এ ধরণের অপরধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চার বছর পর্যন্ত কারাদন্ড কিংবা অর্থদন্ড অথবা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।
গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এতথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে এসংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। জবাবে মন্ত্রী আরো বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রকে সনাক্ত করেছে। তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। একই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ইতোপূর্বে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত কিছু অসাধু শিক্ষককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অপরাধীদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র আপলোডকারীদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মামলা করা হয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, প্রশ্নপত্র প্রণেতা সংশ্লিষ্ট বোর্ডে উপস্থিত থেকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করছেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারীর ও পরিশোধনকারীর গোপনীয়তা রক্ষায় শপথ এবং এ বিষয়ে লিখিত অঙ্গীকারনামা নেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ বোর্ডের মডারেশন কক্ষে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারী মনোয়নের ক্ষেত্রে সৎ যোগ্য মেধাবী এবং মাস্টার ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষকদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে। বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র মুদ্রণের সঙ্গে জড়িতদেরকে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারীতে রাখা হয়েছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিজি প্রেসে এখন প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নেই। কিন্তু পরীক্ষার সময় কিছু অসাধু শিক্ষক সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেয়। এখন কোন স্কুলে এ ধরণের ঘটনা ঘটলে শুধু শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নয়, ওই স্কুলকেই বাতিল করে দেওয়া হবে। এখন পরীক্ষার সময় শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকরাও মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে পারবেন না।
একই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষা ক্ষেত্রে যে কোন ধরণের দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সকল সময় কঠোর অবস্থান নীতি অবলম্বন করে আসছে। সম্প্রতি দুর্নীতির দায়ে একজন কর্মকর্তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় হাতেনাতে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ কার্যক্রম ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধ \ শিক্ষামন্ত্রী সংসদে জানান, দেশে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ’শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য মেট্টোপলিটন- বিভাগীয় পর্যায়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে তৎপর রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম চলাকালীন শ্রেণী সময়ের মধ্যে কোন শিক্ষক কোচিং করাতে পারবেন না। তিনি জানান, কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে কোচিং বাণিজ্য জড়িত শিক্ষকগণের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ সকল কমিটির তৎপরতায় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া বাস্তবতা পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে সকল শিক্ষক দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে কর্মরত আছেন তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এরূপ শিক্ষকদের বদলী-পদায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় \ সংসদে সরকারি দলের সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রী জানান, দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের জন্য উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, এ কার্যক্রমের আওতায় সরকারের বর্তমান মেয়াদে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। আর ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া দেশে সরকারি উদ্যোগে আরো ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে। এরমধ্যে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ ইতোমধ্যে মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। একই প্রশ্নের জবাবে নূরুল ইসলাম নাহিদ জানান, ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৭’ জাতীয় সংসদে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ’, ‘ল²ীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ল²ীপুর’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এভিয়েশন এন্ড এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা’, ‘হাজী আসমত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ’, ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর’ এবং ‘বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,’ নামে আরও ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রশ্নপত্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ