পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবী ভিলার জঙ্গি আস্তানায় র্যাবের অভিযানে তিন জন নিহত হয়েছে। র্যাবের দাবি নিহত ৩জনই জেএমবির সদস্য। তারা রাজধানীতে একটি সেল গঠন করে বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপরও নাশকতার পরিকল্পনা ছিল নিহতদের। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রুবী ভিলার সামনে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। গত বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্যরাতের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও এমপি হোস্টেলের ঠিক পেছনে ১৩/১ ঠিকানার বাড়িটিতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে অভিযানে নামেন র্যাব সদস্যরা। গতকাল সকালে অভিযান শেষ হলে পঞ্চম তলায় জঙ্গি আস্তানায় গিয়ে তিন জনের লাশ পাওয়া যায়। সূত্র জানায়, র্যাব ও পুলিশ এর আগে আরও ৩বার অভিযান চালিয়ে ছিল ওই ভবনে। ২০১৩, ২০১৬ ও গতবছর সেখানে অভিযান চালানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতের অভিযান নিয়ে মোট চার বার অভিযান চালানো হলো সেখানে। আগের অভিযানগুলোয় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয় বলে জানান এলাকার বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক সাব্বির, কেয়ারটেকারসহ বেশ কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়েছে র্যাব। গতকাল রাত পর্যন্ত নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে তাদের বয়স ২০-৩০ বছরের মধ্যে বলে র্যাব জানিয়েছে। আস্তানা থেকে ই¤েপ্রাভাইজম এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস, বিস্ফোরক জেল ও পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য নিহতদের লাশ শেরেবাংলা নগরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সেলিম রেজা জানান, লাশ তিনটি পৌঁছেছে। মর্গ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ জানান, অভিযানের পর তারা সেখানে তিন তরুণের লাশ পেয়েছেন। তারা গ্যাসের চুলার উপর গ্রেনেড রেখেও বিস্ফোরণের চেষ্টা করেছে। তিনি আরো জানান, রাত ২টার দিকে তারা অভিযান শুরু করেন। কেউ ফটক না খোলায় সেটি ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে আগেই বাড়ির কয়েকটি ফ্লোরের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়। তিনি বলেন, এখানে কেয়ারটেকারসহ আরো কয়েকজন আছে, যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এসব জিজ্ঞাসাবাদ থেকে আমরা আরো তথ্য পাবো বলে আশা করছি। বিশেষ করে যারা মারা গেছে, তাদের পরিচয় হয়তো জানা যাবে। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, নিহত তিন জনই জেএমবির সদস্য ছিল। আমরা গোপন সূত্রে খবর পাই, রাজধানীতে একটি সেল গঠন করে বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেই সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে এই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। আস্তানায় দু’টি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) পাওয়ার কথা জানিয়ে র্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, দু’টি পরিচয়পত্রধারীর মধ্যে একজনের নাম জাহিদ। বাড়িটির ম্যানেজার রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, গত ২৮ ডিসেম্বর এই জাহিদ রুবেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটের এক কক্ষে ভাড়ায় ওঠে। সেই ফ্ল্যাটের ৩টি কক্ষের একটি কক্ষে থাকতো জাহিদসহ ওই তিন জন। বাকি দু’টি কক্ষে থাকতেন আরও চার জন। যখন বাসা ভাড়া নেয়, তখন জাহিদ ম্যানেজার রুবেলকে বলে যে, তার সঙ্গে দুই ভাই থাকবে। সে কারখানায় কাজ করে। ২ হাজার টাকা প্রাথমিকভাবে দিয়ে বাসায় উঠলেও মাসিক ভাড়া দেয়ার কথা ছিল ৫ হাজার ৫শ’ টাকা। ওই ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জাহিদ ভোরে বের হয়ে যেতো, রাতে ফিরতো। বাকি দু’জন বাসায় থাকতো, তাদের কেউ বের হতে দেখেনি। র্যাবের মুখপাত্র বলেন, অভিযান শুরুর আগে সব বাসিন্দাকে ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। এর আগেও রুবী ভিলা’য় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ২০১৩ ও ২০১৬ সালে র্যাব এই বাড়িতে অভিযান চালায়। তখন সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নাশকতার পরিকল্পনা জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। রুবী ভিলায় এ নিয়ে তৃতীয় অভিযান চালানো হলো। মুফতি মাহমুদ খান জানান, আস্তানাটিতে যারা ছিলেন তারা সবাই জেএমবির সদস্য বলে তাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য ছিল। তবে তাদের নেতৃত্বে কারা, কী বা তাদের নাম-ঠিকানা, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে জাহিদ পরিচয় দিয়ে এই বাড়িটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল। মুফতি মাহমুদ জানান, রাতে বাড়িটির লোহার গ্রিল ভেঙে ঢুকেন তারা। আর এখানকার বাসিন্দাদের শুরুতে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে দোতলায় রাখা হয়। এরপর পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় যান তারা। এই ভবনের এই দুটি তলায় তিনটি ফ্ল্যাটে মেস বানিয়ে বসবাস করতেন ২১ জন। আর তাদেরকে তত্ত¡াবধান করতেন রুবেল নামে একজন। পঞ্চম তলায় সন্দেহভাজন কক্ষের দরজায় নক করলেই সেখানে গ্রেডেন ও গুলি ছোড়া হয় বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা। এতে আহত হয় দুই জন। এ সময় পাল্টা গুলিতে নিহত হন তিন জন। পরে কক্ষটি থেকে দুইটি পিস্তল, তিনটি আইইডি, তিনটি আত্মঘাতি বেল্ট ও বিপুল বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। র্যাব কমান্ডার জানান, তাদের অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে জঙ্গিরা গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে গ্র্রেনেড ও আইইডি রেখে দিয়েছিল যেন গোটা বাড়িটিই উড়ে যায়। বাড়িতে ঢোকার পরই গন্ধ পেয়ে গ্যাসের লাইন কেটে দেন তারা। কোথায় এবং কখন হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা-এমন প্রশ্নে র্যাব কমান্ডার বলেন, এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত কোনো তথ্যই পাইনি। আর যারা নিহত হয়েছেন তাদের নাম পরিচয় সম্পর্কেও তেমন কিছু জানতে পারিনি। তাদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানাতে পারব। যে তিন জন এখানে নিহত হয়েছে তাদের বিষয়ে যে তথ্য আমাদের কাছে ছিল তারা সবাই জেএমবির সদস্য। তাদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা করবে। সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর নাশকতার পরিকল্পনা আছে। বিধ্বংসী কোনো একটি কার্যক্রমের জন্য তারা এখানে জড়ো হয়েছিল। ওই বাড়ির মেসে ভাড়া থাকেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী পারভেজ (১৮)। তার বাবা কামাল হোসেন গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তাদের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জে। গত শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে কামাল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পারভেজ ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে আমাকে ফোন করে। সে জানায় বাসায় গোলাগুলি হচ্ছে। বাইরে থেকে দরজা লাগানো। ওরা বের হতে পারছে না। এরপরই আমি গাজীপুর থেকে নাখালপাড়ায় চলে আসি। আমার ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ সকাল ৮টায় কথা হয়েছে। এরপর থেকে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পশ্চিম নাখালপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম দৈন্কি ইনকিলাবকে বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথমে একটা শব্দ পাই। এর কিছুক্ষণ পর আবার শব্দ। শীতের কারণে বাসার দরজা-জানালা সব বন্ধ ছিল। তাই শব্দ খুব আস্তে শোনা গেছে। আমরা প্রথমে ভেবেছি আতশবাজি হচ্ছে। পাশেই চ্যানেল আই এর অফিস থাকায় প্রায়ই এমন আতশবাজি হয়। আমরা তাই ভেবেছিলাম। পরে জানতে পারি র্যাব অভিযান চালাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।