পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সম্পদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে মিথ্যাচার করে এক ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গত বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী যে সম্পদের কথা বলছেন, সম্পদের যে নাম দেওয়া হয়েছে- বাস্তবে সেই সম্পদগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই। এই যে মিথ্যাচার, এই মিথ্যাচার করে গোটা দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী বিভ্রান্ত করছেন। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি যে বিভ্রান্ত করবার চেষ্টা করছেন, এটা এক ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতাও বটে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে অশ্রাব্য, হিতাহিত কাÐজ্ঞানহীন-বিবেচনাহীন, সভ্যতা-ভব্যতা ও সুরুচির ওপর হিং¯্র আগ্রাসন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের চেয়ারের তলা থেকে জনসমর্থন সরে গেছে। সেজন্যই জনগণের বদলে বন্দুকের ওপর ভরসার পাশাপাশি কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম জিয়াকে নিয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
জাতীয় সংসদে এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন দাবি করে একে শপথভঙ্গের সঙ্গে তুলনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন আন্ডার ওথ। শপথ নিয়েছেন যে উনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, সত্য কথা বলবেন, মিথ্যা কথা বলবেন না। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি মিথ্যা কথা বলতে পারেন না, সারা জাতিকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না। অথচ সংসদে তিনি এই মিথ্যাচার করছেন। এখনো বলছি এই সমস্ত বন্ধ করেন, মিথ্যাচার বন্ধ করেন। জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা বন্ধ করেন। জাতি কখনো বিভ্রান্ত হবে না, হয়নি কোনোদিন। পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে তৈরি হচ্ছে দাবি করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তাতে উঠতে সবাইকে বারণ করায় সংসদে বুধবারের প্রশ্নোত্তর পর্বে তাকে ‘পাগল’ বলেও আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ‘কুরুচিপূর্ণ’ দাবি করে এজন্য তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি করেন বিএনপির এই নেতা।
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে গণতন্ত্রের ওপর বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে তীর্যক ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন তা শুধু অনভিপ্রেত বা দু:খজনকই নয়, বরং এটি রাজনৈতিক পরিবেশ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় দানা বাঁধবে। প্রধানমন্ত্রীর কুৎসামূলক অপপ্রচারের এই বক্তব্য রাজনৈতিক বিভেদ-বিভাজনকে আরো প্রসারিত করবে ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাকে দানবীয় শক্তি প্রয়োগে বাধা দেয়ার সামিল বলে গণ্য হবে। ক্ষমতাসীনদলের নেতৃবৃন্দ কেন এখন বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে এতো তীব্র মিথ্যাচারে লিপ্ত হলেন, তার প্রধান কারণ হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের অনাচার-অপকর্মের বিরুদ্ধে বেগম জিয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। খালেদা-ভীতির কারণেই ক্ষমতাসীনদের মস্তিস্কে গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সাধারণত এসব কথা বলি না। কিন্তু উনি (প্রধানমন্ত্রী) বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যেসব উচ্চারণ করেছেন এটাতে আরেকটা মানহানি মামলা হতে পারে।
বিগত সময়ে সুপ্রিম কোর্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে ‘রং হেডেড’ বলার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ভদ্র মহিলাকে, এই রাজনীতিবিদকে, প্রধানমন্ত্রীকে রং হেডেড পারসন বলেছিলেন। উনি যখন অন্যকে কিছু বলতে যান তার ভাবা উচিৎ তার সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ও আদালতের ধারণা কি?
বিএনপি নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর প্রতিবাদ করেননি। এটা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যাচার। আমরা এখান (নয়া পল্টন কার্যালয়) থেকে সংবাদ সম্মেলন করেছি। শুধু তাই নয়, আমরা উকিল নোটিস পাঠিয়েছি, তার জবাব তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এখন পর্যন্ত দেননি। এটা প্রমাণিত যে, তিনি এই উকিল নোটিসের জবাব না দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তার বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। মিথ্যাচার করেছেন জনগণকে তিনি বিভ্রান্ত করার জন্য।”
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত ‘অবৈধ সরকার’ প্রতিষ্ঠার দিনটিতে ‘গণতন্ত্র ধ্বংস’ করার হয়েছে বলে সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজকে যে রাজনৈতিক সঙ্কট, দেশে যে দূরবস্থা, এদিনটির সূচনা হয়েছিল গণতন্ত্রকে হত্যা করে বেআইনি ও অসাংবিধানিক সরকার ফখরুউদ্দিনের (ফখরুউদ্দিন আহমেদ) নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল। সেই সরকার সম্পূর্ণ পরিকল্পিভাবে গণতন্ত্রকে ধবংস করার নীল নকশা করে ২০০৮ সালে অত্যন্ত বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আজকের এই অবৈধ ও অনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা এদিনকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সাথে স্মরণ করছি।
উন্নয়নের নামে সরকার লুটপাট করছে মন্তব্য বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বেপরোয়া দুর্নীতিকে উন্নয়নের বড় অংশীদার করা হয়েছে। সেজন্য উন্নয়নের অগ্রগতি নেই, আছে শুধু আস্ফালন ও কটুবাক্যের তীব্রতা। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্রীজ, কালভার্ট, ফ্লাই ওভার, সড়ক-মহাসড়ক, শেয়ার বাজার সবকিছুই লাগামহীন দুর্নীতির এক একটি মাইল ফলক। আর এসব দুর্নীতির সাথে ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ ব্যক্তিরাই জড়িত। রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্মমভাবে ব্যবহার করে বিরোধী মত ও বিশ্বাসকে দমন করে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েও সরকার তাদের দুর্নীতি চাপা দিয়ে রাখতে পারছে না। ২০১৬ সালে সুইজারল্যান্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়-২০১৫ সালেই বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশের ব্যাংকে জমা হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কার সেটা দেশবাসী জানে। কারণ এই সরকার অর্থপাচার রোধে তৎপরতা দেখায়নি। তবে কানাডায় বেগমপাড়া এবং মালেশিয়ায় সেকেন্ড হোমের মালিক কারা সেটিও দেশবাসী জানে। সুতরাং দেশের বাইরে বেগম জিয়ার সম্পদের কাল্পনিক ও মনগড়া কাহিনী রচনা করে কোন ফায়দা হবে না। সরকার প্রধান যে নির্বাচনের আগে জনগণের দৃষ্টির সামনে মিথ্যার ফানুস ওড়াতে চাচ্ছেন সেটি দেশবাসীর অজানা নয়।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, নাজিমউদ্দিন আলম, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন এবং রফিক শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।