Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আনোয়ারায় লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত চাষিরা কম খরচে বেশি লাভের সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে জাহেদুল হক : বঙ্গোপসাগরে উপক‚ল বেষ্টিত চট্টগ্রামের আনোয়ারার দুই ইউনিয়নে লবণ চাষের জন্য মাঠ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। সবেমাত্র ওই জায়গায় চিংড়ি ঘের গুটিয়ে লবণ মাঠ তৈরি করছেন তারা। গত দুই বছরে পরীক্ষামূলক লবণ চাষে সাফল্যকে পুঁজি করে এ বছর চাষিরা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন।
শুক্রবার সরেজমিনে বারশত ইউনিয়নের পারকি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আড়াই’শ একর মাঠজুড়ে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠ পরিচর্যায় নিয়োজিত অর্ধশতাধিক চাষি পরিবার। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবদি যেন চাষিদের অন্য কোনো কাজ করার সময় নেই। উপজেলার উপক‚লীয় দুই ইউনিয়ন রায়পুরের দক্ষিণ গহিরা ও বারশতের পারকি এলাকায় লবণ চাষ হচ্ছে। এখানে আগে তেমন জনপ্রিয় ছিল না লবণ চাষ। কয়েক বছর ধরে কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাষিরা আনোয়ারা উপক‚লে লবণ উৎপাদন শুরু করে। কম খরচে উৎপাদন ভালো হওয়ায় দিন দিন লবণ চাষে আগ্রহ বাড়ছে অনেকের। বছরের পর বছর বাড়ছে লবণ চাষের মাঠ। এসব মাঠে পুরোদমে শুরু হয়েছে লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া।
জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ গহিরা ও পারকি এলাকায় চলতি মওসুমে বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার অর্ধশতাধিক চাষি প্রায় ২৫০ একর জমি লাগিয়ত নিয়ে লবণ উৎপাদন শুরু করেছেন। অথচ গেল মওসুমে সেখানে লবণচাষ হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ একর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে আরো চারগুণ। তাদের দেখার দেখায় স্থানীয়রাও লবণ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
চাষিরা জানান, লবণ চাষের জন্য প্রথমে জমিকে ছোট ছোট ভাগ করে নেয়া হয়। এরপর ভেজা মাটিকে রোলার দিয়ে সমান করে বিছিয়ে দেয়া হয় মোটা পলিথিন। জোয়ার আসলেই মাঠের মাঝখানে তৈরি করা গর্তে জমানো হয় সাগরের লবণ পানি। বালতি ভরে বিছানো পলিথিনের উপর রাখা হয় পানি। জলীয়বাষ্প হয়ে উড়ে যায় পানি আর মাঠে জমে যায় লবণের আস্তরণ। সেই লবণ তুলে স্ত‚প করে রাখা হয় যেন সরে যায় পানি। এরপরই বস্তায় ভরে লবণ তুলে দেয়া হয় বেপারীর হাতে। চাষিরা আধুনিক পলিথিন ও সনাতন পদ্ধতিতে মাঠে লবণ চাষ করছেন।
চকরিয়ার আরাফাত (৩৫) ও কুতুবদিয়া থেকে আসা চাষি কামাল উদ্দিন (৪২) জানান, প্রতি মওসুমের জন্য কানি প্রতি (৪০ শতক) জমি তিন হাজার টাকায় লাগিয়ত নিই। প্রতি কানিতে চাষাবাদে খরচ পড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। এতে লাভ হয় খরচের দ্বিগুণ।
তারা আরো বলেন, ২৫০ একর মাঠে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫০ হাজার মণ। প্রতি মণ লবণের দাম ন্যূনতম ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে বাজারমূল্য দাঁড়াবে ছয় কোটি টাকা। এদিকে সাধারণ লবণচাষিরা বলেন, সরকার যদি আনোয়ারা উপক‚লীয় এলাকায় উৎপাদিত এসব লবণ রফতানিতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণচাষিরা আরো বেশি উপকৃত হবে। তারা এই লবণশিল্প রক্ষা এবং মানসম্মত করার জন্য লবণ উৎপাদনে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ ইনকিলাবকে জানান, পারকি এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লবণচাষ। কম খরচে লাভ বেশি তাই স্থানীয়রাও লবণচাষে ঝুঁকছেন। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে আরো পাঁচ মাস লবণ উৎপাদন হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ