Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাঁধ রাস্তাঘাট ফসলি জমি ও শতাধিক গ্রাম হুমকির মুখে

নাগর নদ থেকে অবাধে বালু উত্তোলন

| প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে মো. গোলাম ফারুক : দুপচাঁচিয়া উপজেলার নাগর নদের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় এক শ্রেণির অর্থলিপ্সু বালু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন শুরু করছে। ফলে এলাকার নদ সংলগ্ন বাঁধ, রাস্তাঘাট, ফসলের জমিসহ শত শত গ্রাম মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
দুপচাঁচিয়া ও কাহালু উপজেলার সীমানার বুক চিরে বয়ে গেছে নাগর নদ। নদের দু’ধার দিয়ে এলাকা রক্ষার বাঁধ, নির্মাণ ও বিভিন্ন স্থানে ফসলের জমিসহ বহু গ্রাম গড়ে ওঠছে। এই গ্রামগুলোতে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ হয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তা। দীর্ঘ দিন যাবত উপজেলার চামরুলের বলদমারা সদরের জাঙ্গালপাড়া, নিমাইকোলা, লালুকা, তালোড়ার সাবলা (ব্রিজের উত্তর পাশের্^), নওদাঁপাড়া, পলিপাড়া, ভেলুরচক, গÐিশ্বর এলাকার বেশ কয়েকজন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী এলাকার প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে নাগর নদের বিভিন্ন স্থান থেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা নদের বিভিন্ন স্থানে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে বোরিং করে এই বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। অনেকে নদের দু’ধারে নাম মাত্র সামান্য জায়গা ক্রয় করে তাতে প্রথমে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করে। একইভাবে অনেক স্থানে নদের মাঝে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করে আসছে। এইসব বালু বহনের জন্য নদের রক্ষা বাঁধ কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আবার ওই সব ব্যবসায়ীরা উত্তোলনকৃত বালু নদের বাঁধের উপর রাখাসহ পাশের রাস্তাাঘাটের উপর রাখছে। ফলে ওই রাস্থা দিয়ে যানবাহন চলাচল সহ এলাকাবাসীর চলাচলে বিঘœ ঘটছে। গতকাল ৭ জানুয়ারি রোববার সরজমিনে ওই নাগর নদ সংলগ্ন সদরের লালুকা, তালোড়ার পলিপাড়া, ভেলুরচক, গÐিশ্বর, নওদাঁপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামগুলোর অবস্থা করুণ। গ্রামগুলোর চলাচলের রাস্তার উপর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় করে বালু স্ত‚প করে রাখা হয়েছে। বালু উত্তোলনের ফলে নদের দু’ধারে গ্রামগুলোর অনেক বাড়িঘরসহ ফসলের জমিতে ফাঁটল ধরেছে। নদ রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে নদের থেকে রক্ষা বাঁধসহ রাস্তাঘাট নদে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে প্রভাবশালী ওই অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস না পেলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ সব গ্রামের অনেকেই দৈনিক ইনকিলাব কে জানান, ওই সব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে অভিয়োগ করেও কোনো লাভ হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে অজ্ঞাত খুঁটির জোরে তারা অবৈধভাবে নদ থেকে এই বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) এই সব বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযানে নামলেও অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে এই সব বালু ব্যবসায়ীরা মেশিন ফেলে সটকে পড়ে। চোর পুলিশ খেলার মতো চলছে এই সব ব্যবসায়ীদের বালু উত্তোলন। কিছুতেই যেন এই বালু উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহেদ পারভেজ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নাগর নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা হয়েছে। এই সব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, নাগর নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে নদ সংলগ্ন বাঁধ, রাস্তা, ফসলি জমি, ঘড়বাড়িসহ অনেক গ্রাম ভ‚মিধসের মতো ঘটনা ঘটবে। তারা নাগর নদ থেকে স্থায়ীভাবে অবৈধ এই বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য সংশ্লি­ষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ