বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী, (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে পাহাড়ি বাংলা মদ ও মরণঘাতি ইয়াবা। পৌর সদরসহ উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বিকিকিনি চলছে উন্মুক্ত-কোলাহলে। দীর্ঘদিন ধরে এসব মদের অবাধ বিকিকিনি ও সেবন চললেও তা প্রতিরোধে প্রশাসনের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। ফলে এ কাজে জড়িতরা দিনদিন হয়ে উঠছে ওপেন সিক্রেট ও অপ্রতিরোধ্য। মাদকের উশৃংখল প্রভাবে এখানকার সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে এবং বিভিন্ন পেশার উঠতি বয়সের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে এখানকার অভিভাবক মহল। এখানকার লাখো মানুষের এখন প্রাণের দাবী সর্বগ্রাসী মাদক যেন বন্ধ করা হয়।
জানাযায়, পাশ্ববর্তী উত্তরের উপজেলা রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ের বাঙ্গাল হালিয়া এলাকার চাকমা পাড়া থেকে ২০/২৫ বছর ধরে আসা পাহাড়ি এসব বাংলা মদ ও মাদক তৈরির কারখানা বন্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) ও সহকারী পুলিশ সুপার পটিয়া (সার্কেল) বারবার প্রতিশ্রæতি দিলেও কোন ধরণের কার্যকর ব্যবস্থা নেননি এ যাবৎ। মূলত: যে যখনই দায়িত্বে বা ক্ষমতায় আসে তারা শুধু প্রতিশ্রæতিই দিয়ে গেছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা রাজনৈতিক বক্তব্য ও নির্বাচনী প্রতিশ্রæতির মত আশ্বাস দিয়ে গেলেও আর যেন মনেই থাকেনা বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী। কথিত আছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনর কাছে সাপ্তাহিক ও মাসিক মাসোহারার প্যাকেট না আসলেই তারা হঠাৎ অভিযানে নেমে পড়ে। এ অভিযানে দু‘এক জন মাদক সেবী ও খুচরা ব্যাবসায়ীকে ধরে ভ্রাম্যমান আদালতে নাম মাত্র কিছু দিনের সাজা দেয়া হয় অথবা হালকা ধারায় মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়। কিছুদিন পর তারা জামিনে এসে আবারো পুরোদমে শুরু করে এ ব্যবসা। এদিকে অভিযান শুরু হলেই মাসোহারার প্যাকেট আবারো নিয়মিত আসতে শুরু করে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মদ ব্যবসায়িরা। এ ভাবেই মদ ব্যবসায়ীরা দিনকে দিন আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক সময়ের এক হিসেবে জানা যায়, গড়ে দৈনিক ১৫/১৮ লক্ষাধিক টাকার পাহাড়ি মদ ঢুকে বোয়ালখালীতে। এর বেশির ভাগ মদ এ বোয়ালখালীতেই বেচা কেনা হয়ে থাকে। সম্প্রতি মহামারি আকার ধারণ করেছে মরনঘাতি ইয়াবা। দেখায় দেখায় এখানকার উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে এসব মাদকের সাথে। ফলে এখানকার অভিভাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে। এ ছাড়া বোয়ালখালীর হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা পার্বণে বিশেষ করে দূর্গাপূজা, মন্সাপূজা, কালী পূজা আসলে বাংলা মদসহ ইয়াবার চালান দ্বি-গুন বৃদ্ধি পায় বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এখানকার খুচরা ব্যবসায়িরা।
জানা যায়, উপজেলার পৌরসভা ও ৯ ইউনিয়নের মধ্যে জ্যৈষ্টপুরা, শ্রীপুর-খরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও কড়লডেঙ্গার পাহাড়ের বেশ কিছু অংশ নিয়ে বিস্তৃত পাহাড়ী জনপদ। অরক্ষিত পাহাড়ী এ নির্জণ জনপদকে ব্যবহার করেই বোয়ালখালীর বেশকিছু অসাধু জনপ্রতিনিধি, সরকারি দলের নামধারী পাঁতিনেতার ছত্র-ছাঁয়ায় পাশ্ববর্তী রাঙ্গুনীয়া থানার বাঙ্গাল হালিয়া চাকমা পাড়ার কারখানা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার মদ নিয়ে আসে এখানে।
সন্ধ্যা হলেই উপজেলা জুড়ে মদের দুর্গন্ধে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। এলাকা ভিত্তিক ইয়বা সেবক, মদ্যপায়ী ও ব্যবসায়ীদের দাপটে কেউ মূখ খুলতে সাহস পায়না। প্রাণনাশের হুমকি ও পুলিশ দিয়ে মামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে থাকে। এভাবে তাদের দাপটে চলতে চলতে এক পর্যায়ে বোয়ালখালীতে গড়ে উঠে মাদকের স্বর্গরাজ্য। শুধু বোয়ালখালীতে নয় রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা এ মদের চালান বোয়ালখালীর চাহিদা পূরণ করে প্রতিদিন এখান থেকে পাচার চট্টগ্রাম নগরীতেও। আর এখান থেকে ভাগ চলে যায় থানা পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরসহ স্থানীয় রাজনৈতিক চালা-চামুন্ডু হয়ে উপর মহলেও। ফলে এখানে মদ বন্ধে ডিসি, এসপি ও এমপিদের নির্দেশ কোন কাজেই আসছেনা বলে জানান উপজেলা সদরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, উপজেলার কালাইয়ার হাট, কানুনগোপাড়া, মুরাদ মন্সিরহাট, জোটপুকুর, বেঙ্গুরা বাজার, শাকপুরা বাজার ও উপজেলা সদরের অনেক ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে বলেন, মুখ রক্ষার জন্য স্থানীয় থানা পুলিশ মাঝে মধ্যে ২/১জন মদ্যপায়ী ও খুচড়া মদ ব্যবসায়ী কে ধরে লোক দেখানো সাজা দিলেও এর পেছনে জড়িত রাঘব বোয়ালদের না ধরার কারণে উপজেলা থেকে মদ ও ইয়াবা কোন ভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছেনা। তবুও তারা আশায় বুক বাঁেধন যে, বোয়ালখালী থানা পুলিশ মদের বিরুদ্ধে সাড়াঁশি অভিযান চালিয়ে এলাকার উঠতি বয়সি যুব সমাজ তথা স্কুল-কলেজ পড়–য়া সন্তানদের নিয়ে উৎকন্ঠা থেকে মুক্তি দেবে পুলিশ।
বোয়ালখালী থানা এস আই মো. বিল্লাল হোসেন ও এএস আই ফরিদ উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে অনেক মদ ব্যবসায়ী ও মদ্যপায়ীকে আটক করা হয়েছে। অভিযানে গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর-১৭ইং এ ৩ মাসে বোয়ালখালী থানা পুলিশ পাহাড়ি বাংলা মদ-৩৬৩ লিটার, বিদেশি মদ-২ লিটার ও ২১৮পিচ ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। র্যাব-৭ এর অভিযানে ২ কেজি ১শ’ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছেন বলেও উল্লেখ করেন থানা পুলিশ। সব মিলিয়ে এ ৩ মাসে মাদক আইনে মামলা হয়েছে মোট ১৯টি। এসব মামলায় আসামী গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৩০জনকে। তবে নতুন বছরে এ সংক্রান্ত কোন অভিযান, মাদক উদ্ধার, মামলা বা আসামী গ্রেফতারের কোন রেকর্ড এখনো হয়নি বলেও জানান পুলিশ। এব্যাপারে বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ হিমাংশু কুমার দাশ বলেন, বোয়ালখালীতে মদ এবং ইয়াবা বন্ধে পুলিশের কোন গাফেলতি নেই। অভিযান অব্যাহত থাকবে। এব্যাপারে কারো সাথে আপোষ করা হবেনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।