Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাংগঠনিক সফরে আওয়ামী লীগ

টার্গেট জাতীয় নির্বাচন

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলপর্যায়ে কোন্দল মেটানো, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচার, কর্মীদের চাঙ্গা করে সাংগঠনিক গতি বাড়াতে মাঠে নামছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব টিম দেশব্যাপী সফর শুরু করবে। তারা বিভিন্ন জেলায় কর্মীসভা ও জনসভায় অংশ নেবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন এলাকা সফর করবেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, সরকারের সফলতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারলে এবং
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ সম্ভব। এ জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কাজেই এখন বেশি মনোযোগী দলটি।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, স¤প্রতি অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমন্ডলীর সর্বশেষ বৈঠকে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশনার পর টিম গঠনের কাজও শুরু হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে সফরসূচি ও টিম গঠন চূড়ান্ত হবে। এ ক্ষেত্রে সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা একেকজন একেকটি বিভাগের দায়িত্ব নেবেন। আর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও বিভিন্ন টিমের সঙ্গে সফরে যাবেন। সরকারি কাজে অনেক নেতা জড়িত থাকায় প্রতি সপ্তাহে ছুটির দুই দিনে এসব টিম তৃণমূলপর্যায়ে সফর করবেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জানুয়ারির ১২ তারিখ থেকে ৩০টি দলে বিভক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা বেরিয়ে পড়বেন সারাদেশ সফরে। এই সময়ে তারা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে আওয়ামী লীগকে আরো সুসংগঠিত এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করবেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে যাবেন। ভোটও চাইবেন। বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির প্রভাব সম্পর্কেও অবহিত করবেন। দলকে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আনাই হলো নতুন বছরের নতুন টার্গেট। বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন বছর পথ চলবে আওয়ামী লীগ।
সূত্র জানায়, স¤প্রতি অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় সরকারে খানিকটা সন্তোষ থাকলেও নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভরাডুবির পর আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন তারা। সে জন্য মাঠপর্যায়ে কোন্দল নিরসন করে দল চাঙ্গা করা এবং সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন তারা। এ কাজে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা
এ ছাড়া গত এক বছর ধরে দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতারই তেমন কোনো সাংগঠনিক কাজ ছিল না। তাদের অনেকেই আবার আগামী নির্বাচনে প্রার্থী। বাকিরা দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে অলস সময় কাটিয়েছেন। আর সাংগঠনিক কোনো দায়িত্ব না থাকায় দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা এক রকম দলীয় কার্যালয়বিমুখ ছিলেন। এবার তৃণমূল সফরের মাধ্যমে তাদেরকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বর্তমানে আট বিভাগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বে আছেন আটজন সাংগঠনিক সম্পাদক। গত বছর অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে প্রথমবারের মতো তাদের সঙ্গে যুক্ত হন চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দু’টি বিভাগের দায়িত্বে আছেন। এবার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে নতুন করে টিম গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। জানুয়ারির শুরু থেকেই এ টিম তৃণমূলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস পালন করা হবে। এ ছাড়া ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠান থাকবে দলের। কেন্দ্রীয়ভাবে এসব অনুষ্ঠান করার পরই কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন তৃণমূলে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও এমন ১৭টি টিম গঠন করা হয়েছিল।
দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কৌশলের কারণে আগামীতে আবারো দল ক্ষমতায় আসবে বলে নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন। সে জন্য মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরাও অনেকটা নির্ভার বসে আছেন। যার উল্টো ফল হচ্ছে নির্বাচনে। সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর বিজয় হবে বলে অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচনে দলের প্রার্থীর ভরাডুবিতে অবাক হয়েছেন তারা। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারি দলের সর্বোচ্চ ফোরামের বৈঠকে দলের প্রধান শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের অতি আত্মবিশ্বাসী হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, অতি আত্মবিশ্বাস ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফরে বের হতে হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে আওয়ামী লীগের পক্ষে সমর্থন বাড়াতে হবে। মানুষকে বিএনপি-জামায়াতের অতীতের দুঃশাসনের পাশাপাশি সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিষয় এবং তারা আবারো ক্ষমতায় গেলে দেশের কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে, সে বিষয়ে বোঝাতে হবে। এ সময় দল ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে করা জরিপের ভিত্তিতে জনপ্রিয়, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদেরই আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে বলে আবারো স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সব কিছু ঠিক থাকলে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের কাছাকাছি সময়ে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও টানা ক্ষমতায় থাকায় নানা স্বার্থের সংঘাতে দলের তৃণমূল এখন বহুধাবিভক্ত। স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব বিরাজ করছে। দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিংয়ের জেরে মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
তাই নির্বাচনের আগে দলের তৃণমূলে ঐক্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবেই সিনিয়র নেতাদের দিয়ে তৃণমূল সফরের টিমগুলো করা হচ্ছে। এর আগে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে তৃণমূলে চিঠি দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। চিঠিতে দলীয় কোন্দল নিরসনের তাগিদ দিয়ে আগামী নির্বাচনের আগে আর কোনো কমিটি বিলুপ্ত কিংবা কাউকে বহিষ্কার করা যাবে না বলে জেলা নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন সময় দল থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনতেও বলা হয়েছে।
সাংগঠনিক টিম গঠনের ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে সফরসূচি ও টিম গঠন চূড়ান্ত হবে। এ ক্ষেত্রে সভাপতিমন্ডলীর সদস্যরা একেকজন একেকটি বিভাগের দায়িত্ব নেবেন। আর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যরাও বিভিন্ন টিমের সঙ্গে সফরে যাবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ