Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পাথরের চেয়েও কম দামি মানুষের জীবন

সিলেটে পাথুরে রাজ্য ১২ মাসে ১৩ জনের প্রাণহানী

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


ফয়সাল আমীন : সিলেটের পাথুরে রাজ্যগুলোতে অনাঙ্কাখিত মৃত্যুর মিছিল কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে। মনে হচ্ছে সেখানে পাথরের চেয়্ওে যেন কমদামী মানুষে জীবন। বিশেষত: জাফলং, বিছানাকান্দি ও লোভাছড়ায় মৃত্যুর ঘটনাগুলো তাই প্রমান করছে। গত ১২ মাসেÍ নারী-পুরুষ শিশুসহ এ পর্যন্ত ১৩জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিরাপত্তা ঝুকিতে কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন কালেই মাঠি ধসে মৃত্যু হয় তাদের। এনিয়ে থানায় মামলা হল্ওে নেপথ্যের পাথর খেকোরা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অথচ অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে নিষেধ রয়েছে উচ্চ আদালতের। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাথর উত্তোলন ্ও হতাহতের ঘটনা চলছে স্থানীয় প্রশাসনের সামনেই। প্রশাসন আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে বৈধ উপায় পাথর উত্তোলনের ্ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা রক্ষা হতো।
সূত্র মতে, অপরিকল্পিত ভাবে পাথর উত্তোলনকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার বিকেলে জাফলংয়ের মন্দিরের জুম এলাকায় পাথর উত্তোলনের একটি গর্ত ধসে মাটি চাপা পড়ে ৭ শ্রমিক। এসময় গর্ত থেকে সুনামগঞ্জ জগন্নাথপুরের মিরপুর গ্রামের মফিজ উল্লাহর ছেলে নুর মিয়া (৫০), হবিগঞ্জ বানিয়াচংয়ের বানেশ্বর বিশ্বাস পাড়ার মৃত ইব্রাহিম আলীর ছেলে জহুর আলী (৬৫), জহুর আলীর ছেলে মুজাহিদ মিয়া (২২) মেয়ে সাকিরুন বেগম (২৬) সহ ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আরও তিনজনকে। আহতদের মধ্যে সাদেক মিয়া (৪০) নামে এক শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যান। এর আগে গত বছরের ১৩ নভেম্বর একই স্থানে পাথর তুলতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে নিহত হয় নেত্রকোনা খালিয়াজুড়ের শ্যামপুর এলাকার রঞ্জিত দাসের মেয়ে চম্পা দাস (১৭) নামের এক কিশোরী শ্রমিক। একই বছরের ১৬ মার্চ জাফলংয়ের নয়াবস্তি এলাকার পিয়াইন নদীর তীরে পাথর কোয়ারিতে মাটি চাপা পড়ে সদর টুকের বাজার এলাকার নেখয় মিয়ার ছেলে আকরাম (৪০) ও একই এলাকার আব্দুল খালেক মিয়ার ছেলে লেছো মিয়া (২৫) মারা যায়। এর আগে ১০ ফেব্রæয়ারি বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি এলাকায় পাথর তুলতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে মারা যান সুনামগঞ্জ সদরের গুলেরগাঁও গ্রামের নজির আলীর ছেলে জাকির হোসেন (২০), ওয়াতির আলীর ছেলে তুলা মিয়া (২৫) এবং দিরাই উপজেলার পরিমল (২৫) নামের তিন শ্রমিক। এর ঠিক নয়দিন পর ১৯ ফেব্রæয়ারি জাফলংয়ের সংগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় চুনা কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করার সময় সিলেট কোম্পাণীগঞ্জ তেলিখাল গ্রামের মদরিস আলীর পুত্র কামরুজ্জামান (২৮)ও একই এলাকার জিয়াদুর রহমান’র পুত্র তাজ উদ্দিন (৩০) নামের দুই শ্রমিক মাটি চাপা পড়ে মারা যায়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, পাথর কোয়ারিতে শ্রমিকদের প্রাণহানীর জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী হচ্ছে প্রশাসন। অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলন ঠেকাতে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় শ্রমিকদের প্রাণহানীর মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা দীর্ঘ হচ্ছে। তাই এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে বলে জানান তিনি। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, জাফলংয়ের মন্দিরের জুমপাড় এলাকা থেকে অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলন না করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি অবৈধ গর্তগুলো ভরাট করার জন্য গতকাল শনিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলণকারীদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সাথে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে ধারাবাহিক ট্রাক্সফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ