Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সোনা পোড়ানো ধোঁয়ায় হুমকিতে কুমিল্লার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য

| প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : এডিস পোড়ানোর নীতিমালা না মেনেই কুমিল্লা নগরীর জুয়েলারি কারখানাগুলোতে চলছে মানবদেহ ও পরিবেশ ক্ষতির প্রতিযোগিতা। নগরীর ছাতিপট্টি ও আশপাশের তিনশতাধিক জুয়েলারি ও শিল্পালয়ের কারখানা ঘিরে সোনার গয়না তৈরি, উজ্জ্বল ও পাকাকরণের কাজে ব্যবহৃত নাইট্রিক এসিড ও সালফিউরিক এসিডের ধোঁয়া পথচারি, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন অফিসের লোকজনের স্বাস্থ্যহানী এবং পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরীতে পরিবেশ অধিদফতরের কার্যালয় থাকলেও জুয়েলারি কারখানাগুলোতে এসিড ব্যবহারে নীতিমালা মানা হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে সংস্থাটির কোন নজরদারি নেই। ফলে জুয়েলারি কারখানাগুলোতে এসিডের যত্রতত্র ব্যবহার বেড়েছে।
সোনার গয়না তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় এসিড। সোনা থেকে খাঁদ বের করা, উজ্জ্বলতা ও পাকাকরণে এটি নাইট্রিক ও সালফিউরিক এসিড দিয়ে পোড়ানো হয়। আর এটি পোড়ানোর সময় বের হওয়া ধোঁয়া বাতাসের সাথে মিশে বিষাক্ত গ্যাসে পরিণত হয়। নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডযুক্ত ওই ভারী গ্যাস বাতাসের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানী, হৃদরোগসহ নানা উপসর্গের জন্ম দিচ্ছে। কুমিল্লা নগরীতে সোনা বিক্রির এলাকা হিসেবে খ্যাত ছাতিপট্টি, গোয়ালপট্টি, রাজগঞ্জ, ডিগাম্বরীতলার প্রায় তিনশতাধিক জুয়েলারি ও কারখানায় এসিড ব্যবহারের নীতিমালা না মেনে সোনার অলঙ্কারের কাজ করতে গিয়ে ওইসব এলাকার প্রায় দুই হাজার পরিবারসহ, বিভিন্ন অফিসে কর্মরত লোকজন ও পথচারিদের স্বাস্থ্যহানীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কেবল তাই নয়, ওইসব এলাকার পরিবেশও দূষণীয় করে তুলেছে। সোনা পাকা ও উজ্জ্বলকরণে নির্দিষ্ট সময় না মেনেই স্বর্ণ দোকানিরা এসিড ব্যবহার করছেন। ফলে রাস্তার পথচারি, আশপাশের দোকানদার এবং স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিধিঅনুযায়ি জনবহুল এলাকায় এসিডে সোনা পোড়ানোর কোনো নিয়ম নেই। আর সোনা পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়া বের করার জন্য কারখানাগুলোকে কমপক্ষে ১০০ থেকে ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করতে হবে। নগরীর ছাতিপট্টি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব কারখানায় এসিড ব্যবহার করা হয় সেখানে সোনা পোড়ানোর জায়গা থেকে মাত্র ১০/১৫ উচ্চতার পাইপ বা ছাদের অংশ কেটে ইটের চিমনি দেয়া রয়েছে। কম উচ্চতার এসব চিমনি দিয়ে এসিডের ধোঁয়া বের হয়ে বাতাসের সাথে মিশে আশপাশের দ্বিতল থেকে বহুতল ভবনের ভেতর অনাসারে প্রবেশ করছে। প্রতিদিন এসিডের ধোঁয়ার ঝাঁঝালো ও উটকো গন্ধে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নগরীর জনবহুল এলাকা ছাতিপট্টি, রাজগঞ্জ, গোয়ালপট্টিতে অবাধে এসিড পোড়ানোর ধোঁয়া পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ক্ষতির মুখে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এনিয়ে এখানকার পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের মাথাব্যথা নেই।
জানতে চাইলে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, জুয়েলারি কারখানায় নাইট্রিক এসিড পোড়ানো কালো ধোঁয়া পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। সালফিউরিক এডিসেও প্রায় একই রকম ক্ষতি হয়। এসিডের এ ধোঁয়া ও গন্ধ ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়। বাতাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। হাঁপানী ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া শরীরে চর্ম ও রক্তজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ