Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিরানী-আমতলা সড়ক জলাশয়ে পরিণত

সাভার (ঢাকা) থেকে সেলিম আহমেদ | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকার সাভার উপজেলার জিরানী এলাকায় জিরানী-আমতলা সড়কের বেহাল অবস্থা দীর্ঘ দিনের সংস্কার হয়নি। রহস্যজনক কারনে বন্ধ রয়েছে সংস্কার কাজ। ফলে সড়কটি জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে হাঁটু পানি জমে থাকায় অটোরিকশা, রিকশা উল্টে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া যখন কোনো গাড়ি চলাচল করে তখন পানির ঢেউ সড়কের দুই পাশের দোকানের ভেতরে ঢুকে পরে। ফলে এলাকাবাসী দ্রæত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। তবে উপজেলা প্রকৌশলীর দাবি করছে সংস্কার কাজ চলছে কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দাবি সড়কের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর জিরানী-আমতলা সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করলেও কাজের শুরুতেই বিভিন্ন অনিয়ম দেখা যায়। পুরাতন ইট দিয়েই কাজ শুরু করে কর্মরত ঠিকাদার। তবে হঠাৎ করে সামনের কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও জিরানী স্ট্যান্ড থেকে টেংগুরী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের অভাবে জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি রয়েই গেছে।
এর আগেও জিরানী-আমতলা সড়কের ভোগান্তি নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তবে বর্তমানে এসড়ক দিয়ে চলাচলরত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। পথচারীদের মুখে চাউর রয়েছে এটি জলাশয় নয়, ‘মিনি কক্সবাজার’। কারণ যখন যানবাহন চলাচল করে তখন ঢেউয়ের দুলনী কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতকেও হার মানাবে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জিরানীর থেকে সড়কটির প্রবেশমুখে বাংলাদেশ কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতাল। এ হাসপাতালে প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী আসে সেবা নিতে। এ ছাড়া সড়কটির প্রবেশমুখে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, ওল্ড হোম, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি শিল্প কারখানা। অথচ সড়কটির এমনই অবস্থা যে যানবাহনতো দূরের কথা খালি পায়ে মানুষজনও চলাচল করতে পারছে না। রাস্তাটি বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে সেখানে প্রতিনিয়ত পানি জমে জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। আর প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে সুস্থ্য মানুষও অসুস্থ্য হয়ে পরছে।
গোহাইল বাড়ি এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, প্রতিদিনই কমবেশি এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কিন্তু সড়কের বেহাল দশার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পরে জিরানী-আমতলা সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করলেও সড়কের প্রবেশ পথ জিরানী থেকে টেঙ্গুরী পুকুরপাড় পর্যন্ত রয়েছে আগের অবস্তাতেই। ফলে এ অংশটুকু মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। আর জিরানীর সড়কের শুরুতে পানি জমে জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। তিনি দ্রæত সড়কটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রিকশা চালক ফজল মিয়া জানান, এটি সড়ক নয়, জলাশয়। এখানে মাছ চাষ করা যাবে। আর রিকশার বদলি নৌকা লাগবে। আরেক রিকশা চালক খবির উদ্দিন জানায়, দুঃখে মনে চায় রিকশা চালানো বাদ দিয়া নৌকা কিনে এ রাস্তায় নৌকা চালাই। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক যেখান দিয়ে দৈনিক শত শত যানবাহন চলাচল করছে। লাখ লাখ মানুষ চলাচল করছে সেই সড়কটির বেহাল দশা। তিনি বলেন, সড়কে পানি জমে থাকায় ছোট ছোট বাচ্চারা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে শীঘ্রই এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কিনা তানিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি।
সড়কটি দিয়ে চলাচলরত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানায়, সড়কটির বেহালদশার কারনে স্কুল-কলেজে যেতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে লেখাপড়ায় মারত্মক ব্যাঘাত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে রিকশা বা অটোরিকশা উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। একই কথা বলেন এসড়ক দিয়ে চলাচলরত বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকরাও।
শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ বলেন, এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে আমাদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, জিরানী-আমতলা সড়কের টেন্ডার আমি পাশ করিয়েছি। তবে কেন কাজ থমকে রয়েছে তা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রকৌশলী বলতে পারবে। তবে তিনি সংস্কার থমকে থাকার বিষয়ে আরো বলেন, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অন্য জায়গায় কাজ করতেছে তাই এই সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ দাবি করেন, সড়কে কাজ চলছে। তবে সরেজমিন গিয়ে এবং স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ সড়কটির সংস্কার কাজ রহস্যজনক কারণে বন্ধ রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ