পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় জরুরি উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, প্রতিটি বিভাগের সফলতার জন্য পারস্পরিক আস্থা অপরিহার্য। তিনি বলেছেন, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক ও সমন্বয় খুবই জরুরি। তবে মনে রাখতে হবে এক্ষেত্রে কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং সহযোগী।
গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রেসিডন্ট। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির হিবেসে ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সদ্য পদত্যাগকারীর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিচারকদের গেজেট ও ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর বিভিন্ন বিষয়ে সরকার ও সংসদের সঙ্গে বিচার বিভাগের টানাপড়েন দেখা দিয়েছিল। বিচার বিভাগ নিয়ে সংসদ ও সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সমালোচনাও আসে। সরকারপন্থীদের ব্যাপক সমালোচনার পর বিদেশ থেকে পত্র যোগে পত্রত্যাগ কনে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
এদিকে সুপ্রিমকোর্ট দিবস উপলক্ষে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র ৬ জন আইনজীবী বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপমুক্ত পরিবেশের দাবি জানিয়েছে এক বিবৃতিও দিয়েছেন।।
আবদুল হামিদ বলেন, প্রতিটি বিভাগের সফলতার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও আস্থা একান্ত অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকালে মনে রাখতে হবে এক বিভাগের কর্মকান্ডে যাতে অন্য বিভাগের কর্মকান্ড কোনোভাবেই বাধাগ্রস্থ না হয় বা জাতীয় স্বার্থ বিঘিœত না নয়। সকল বিভাগের কর্মকান্ডে দেশ ও জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আইনের শাসন, জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার রক্ষা এবং অংশ গ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। একটি শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমেই সমাজ পরস্পর সংযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টকে জুডিশিয়াল রিভিউ এর ক্ষমতা সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে বলেন রাষ্ট্রপ্রধান। সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে জুডিসিয়াল রিভিউয়ের ক্ষমতা। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। তথ্য-প্রযুক্তির সব সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতা আনার পরামর্শ দেন প্রেসিডেন্ট।
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো: আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, সংবিধান জন্ম দিয়েছে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের। আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ। এই তিনটি বিভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া রাষ্ট্রযন্ত্র কাযকরভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারেনা। সংবিধানে এই তিনটি বিভাগের প্রত্যেকের নিজ নিজ কাজের পরিধি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণের ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে রাষ্ট্রের মৌলিক আইন সংবিধানে। সুপ্রিম কোর্ট হলো সে সংবিধানের জীবন্ত কণ্ঠ। সূচনালগ্ন থেকে আজ পযন্ত সংবিধানের এই কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়নি। কখনো কেউ রুদ্ধ করতে পারবেও না। তিনি বলেন আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বস করি সংবিধান সৃষ্ট আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই জনগণের আস্থার প্রতিফলন ঘটিয়ে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মাজদার হোসেন মামলার রায়ের পর আনুষ্ঠানিক ভাবে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পরও নিন্ম আদালতের বিচারকদের জন্য শৃঙ্খলাবিধি করা হয়নি। বর্তমান সরকার সকলের সাথে আলোচনা করে প্রেসিডেন্ট আদেশে শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি আজকের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তা স্বাধীন বাংলাদেশে কারো কাম্য নয়। সরকার এবং সরকারের নির্বাহী বিভাগ কোন অবস্থাতেই যেন বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তা দেখার দায়িত্ব দেশের অভিবাবক হিসেবে (প্রেসিডেন্ট) আপনার। আমরা চাই হস্তক্ষেপ মুক্ত বিচার বিভাগ। এই প্রসঙ্গে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের ৬ সিনিয়র আইনজীবীদের বিবৃতির প্রতি সকলকে দৃষ্টি দেয়ার আহব্বান জানাচ্ছি।
আইনজীবী নেতা বলেন, সুপ্রিম কোর্টে দিবস এমন একটি সময়ে পালন হচ্ছে যখন এ দেশের প্রধান বিচারপতির পদ শুন্য।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রমুখ। এর আগে প্রেসিডেনট সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে একটি বকুল গাছের চারা রোপণ করেন।
আইনজীবী সমিতির রক্তদান কর্মসূচি: সুপ্রিম কোর্ট দিবস উদযাপন উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এই রক্তদান কর্মসূচিতে সহযোগিতা দেয়। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বেলুন উড়িয়ে তিনি এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এসময় আপিল বিভগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমদু হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সুপ্রিম কোর্ট ল’ইয়ার্স মেডিটেশন সোসাইটির উপদেষ্টা, সিনিয়র আইনজীবী মো. আব্দুস সামাদসহ সমিতির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রথম কার্যক্রম শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম কার্যদিবসকে প্রতি বছর সুপ্রিম কোর্ট দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পূর্ব নির্ধারিত ছুটি থাকায় প্রথম কার্যদিবস (ছুটির পরে) ২ জানুয়ারি দিবসটি উদযাপিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।