Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন বই মুখে হাসি

বছরের প্রথম দিনে সারাদেশে বই উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নতুন বছরে নতুন ক্লাসে ওঠার আনন্দ। তার সাথে যোগ হয়েছে নতুন বই পাওয়ার খুশি। এই খুশি যেন কোনভাবেই বাধ মানতে চায় না শিক্ষার্থীদের। তাই তো নতুন ক্লাসের নতুন বই, নতুন নতুন গন্ধ ও মুখে হাসি। বই হাতে পেয়েই যেনো উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেছে সারাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। বই পেয়ে কেউ পড়তে চায় গল্প, কেউবা পরিকল্পনা করছে মলাট লাগানোর। শিশু শিক্ষার্থীদের তর সইছেনা বাবা-মাকে বই দেখানোর। বছরের প্রথম দিনে গতকাল সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছিল এরকই দৃশ্য। গতকাল (সোমবার) সকল স্কুলে বই উৎসবের মাধ্যমে ৪ কোটি ৩৭ লাখ ছয় হাজার ৮৯৫ জন শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই তুলে দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে গত শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণের উদ্বোধন করেন। আর নতুন বছরের প্রথমদিনে বই উৎসবের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের এবং আজিমপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের বই উৎসব করেছে এই দুই মন্ত্রণালয়। একইসাথে সারাদেশের সকল স্কুল-কলেজেও শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন বই।
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের বই উৎসব উপলক্ষে আজিমপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। উৎসবের মঞ্চ ছিল লাল-সবুজে মোড়ানো। ছাত্র-ছাত্রী আর অতিথিদের ক্যাপেও ছিল জাতীয় পতাকার রঙ। হাতে পাওয়া বই তুলে ধরে উৎসবের রঙে মিশে যায় শিশুরা। জাতীয় সংগীতের পর বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ২৫টি বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয় এই উৎসবে। তার মধ্যে সাতটি বিদ্যালয়ের সাতজনের হাতে বই তুলে দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, উৎসবের মধ্য দিয়ে চার কোটি ৩৭ লাখ ছয় হাজার ৮৯৫ জন শিক্ষার্থীর বই পাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বাড়িতে কোনো না কোনোভাবে নতুন বইয়ের ছোঁয়া লাগবে। এবারের পাঠ্যবইয়ে কিছু পরিবর্তন আনার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা বইয়ে অনেক পরিবর্তন এনেছি, আপনারা দেখতে পাবেন। শিক্ষাবিদদের মধ্যে দিয়ে ১২টি নতুন বইয়ের যাত্রা শুরু করলাম। বাঁধাই ও কলেবরের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন। গত বছর পাঠ্যপুস্তকে নানা ধরনের ভুলের কারণে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল সরকারকে; নানা বিতর্কের পর সংশোধনীও এনেছিল সরকার। সেদিকে ইঙ্গিত করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কিছু মূল বইয়ে সংস্কার ও সংশোধনী আনা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই তৈরি করে সেগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। অনুষ্ঠানে বারডো বøাইন্ড স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলামের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। মন্ত্রী বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা যাতে পড়তে পারে সেজন্য আমরা ব্রেইল পদ্ধতির বই তৈরি করে দিয়েছি। আমরা ৯৬৩জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর হাতে এই বই তুলে দিচ্ছি। তারা চাইলে অডিও শুনেও শিখে নিতে পারবে, সেই ব্যবস্থাও আমরা করে দিয়েছি।
বিনামূল্যে বই দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর সব দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে পারি, কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে। বছরের প্রথম দিন এত শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছি। সহপাঠীদের সঙ্গে দল বেঁধে বইয়ের উৎসবে হাজির হয়েছিল হাজারীবাগ গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী শাবনুর শেখ প্রিয়া। সে বলল, নতুন পেলে প্রথম কাজই হয় নতুন কী আছে দেখা। এখানে উৎসবে এসেছি, স্কুলে গিয়ে বই পাব। তারপর প্রতিবারের মতো সেই কাজই করব। উৎসবের শেষে নতুন বই নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলা আর কথা বলার পর্বে শিশুদের আনন্দ নতুন মাত্রা পায়। এসময় অন্যদের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাস, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা, মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বই উৎসবের উদ্বোধন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বিনামূল্যে বই দিই, উপবৃত্তি দিই বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিই বলেই এখন সবাই স্কুলে যায়- এটা আমার মনে হয় না। স্বাধীনতার মর্মবাণী উপলব্ধি করতে পারে বলেই তারা স্কুলে যায়। বিগত কয়েক বছরের প্রথম দিনই বিনামূল্যে বই বিতরণ করতে পারাকে সরকারের ‘অন্যতম বড় অর্জন’ হিসেবে দেখেন এই মন্ত্রী। তিনি বলেন, কামার-কুমার-জেলে-নাপিত যে যেখানে আছে সবাই মনে করে তাদের সন্তান দক্ষতার সাথে সুশিক্ষার সাথে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। এই মানসিকতা নিয়েই সবাই সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে চায়। আমরা এই স্বপ্নের সাথে আছি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে এমন কোনো গ্রাম থাকবে না, যেখানে মল্টিমিডিয়া সুবিধা পৌঁছাবে না। সরকার সেজন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের দুই কোটি ৪৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি ৭০ লাখ ৩৭ হাজার ৩০৪টি চার রঙা পাঠ্যপুস্তক। এছাড়া পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা, সাদরি) শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের ভাষায় দেশের ২৪ জেলায় পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ‘আমার বই’ ৩৪ হাজার ৬৪২টি, একই পরিমাণ অনুশীলন খাতা এবং প্রথম শ্রেণির ৭৯ হাজার ৯৯২টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ওই পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির মোট এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৬টি পাঠ্যপুস্তক ও পঠন-পাঠন সামগ্রী মুদ্রণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ছয়টি বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের বই দেওয়া হয়েছে। বই ও অনুশীলন খাতাসহ আরও ছয় ধরনের পঠন-পাঠন সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় এই উৎসবে। লালবাগ, মতিঝিল, কোতোয়ালি, রমনা, সূত্রাপুর ও ডেমরা থানার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ হাজার শিশু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এসেছিল বই নিতে। বই হাতে পাওয়ার পর মতিঝিল মডেল স্কুলের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নায়না তাবাসসুম বুশরার আনন্দ আর ধরে না। আমার নতুন বই ধরতে খুব ভালো লাগছে। বাসায় গিয়ে ভাইয়াকে দেখাব। গেন্ডারিয়া হাই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির রাজ মন্ডল উচ্ছ্বাস প্রকাশের বদলে বই নিয়ে পরিকল্পনায় মশগুল। বাসায় গিয়ে প্রথমে নতুন বইয়ে মলাট দেবে সে। তারপর পড়ে ফেলবে বাংলা বইয়ের গল্পগুলো।
প্রাথমিকের এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের শিক্ষকরাও এসেছিলেন বই উৎসবে। অন্যদের মধ্যে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন, উম্মে রাজিয়া কাজল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

 



 

Show all comments
  • তারেক মাহমুদ ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:০৩ এএম says : 0
    শিশু-কিশোরদের জন্য এই দিনটি খুবই আনন্দের।
    Total Reply(0) Reply
  • তামিম ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:২১ পিএম says : 0
    বছরের প্রথম দিনে সারাদেশে বই উৎসব-- এটা একটা খুব ভালো উদ্যোগ
    Total Reply(0) Reply
  • নাভিল ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:০৯ পিএম says : 0
    আমাদের সম্মানিত শিক্ষকগণ সুন্দরভাবে পাঠদানের মাধ্যমে তাদের এই হাসিটাকে ধরে রাখতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Hafiz ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৩৪ পিএম says : 0
    Thanks to the Bangladesh Government
    Total Reply(0) Reply
  • সাজিদ ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৩৫ পিএম says : 0
    শিক্ষা খাতের উন্নয়নের জন্য এরকম আরো ভালো ভালো কিছু পদক্ষেপ দেখতে চাই
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ২:৩৮ পিএম says : 0
    এই উৎসব দেখে ছোটবেলার নতুন বইয়ের কথা মনে পরে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • khadija ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ৭:১৩ পিএম says : 0
    এরকম একটা ভালো উদ্যোগ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বই

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ