Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নরসিংদীর নতুন বছরের যাত্রা শুরু হলো খুনের মাধ্যমেই

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : খুনাখুনির জেলা হিসেবে পরিচিত নরসিংদীতে নতুন বছর শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী একটি খুনেরই মাধ্যমে। বাড়ীর আঙিনার জমির উপর দিয়ে রাস্তার জায়গা দিতে রাজী না হওয়ায় আবদুস সাত্তার (৫৫) নামে এক কাঠ মিস্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার চেলা চামুন্ডেরা। সদ্যাতীত ২০১৭ সালে নরসিংদীতে ২ শতাধিক হত্যাকান্ডের পর বছরের প্রথম দিন প্রথম প্রহরে গতকাল সোমবার সকালে বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের কান্দুয়া গ্রামে বছরের প্রথম এই পৈশাচিক হত্যাকাÐটি সংঘটিত হয়েছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, বেলাব উপজেলার আমলাব ইউপি চেয়ারম্যান বশির মোল্লা ওরফে পরশ মোল্লা একই ইউনিয়নের কাঠমিস্ত্রী আব্দুস সাত্তারের বাড়ীর আঙিনা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু কাঠমিস্ত্রী আব্দুস সাত্তার তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাড়ীর আঙিনার জমির উপর দিয়ে রাস্তা দিতে রাজী হচ্ছিল না। এই অবস্থায় ইউপি চেয়ারম্যান বশির মোল্লা ওরফে পরশ মোল্লা, বেলাব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শমসের জামান ভূঁইয়া রিটনকে জানায় যে, আব্দুস সাত্তার তার জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে দিচ্ছে না। তার বাড়ীতে দরবার করতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান পরশ মোল্লা আওয়ামী লীগ নেতা রিটন, স্থাণীয় ইউপি মেম্বার গোলাপ মিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গদেরকে নিয়ে সোমবার সকালে আব্দুস সাত্তারের বাড়ীতে যায়। তখন আব্দুস সাত্তার বাড়ী ছিল না। পরে আওয়ামী লীগ নেতা রিটন তাকে মোবাইলে কল করলে সে তড়িঘড়ি করে বাড়ী ফিরে যায়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা রিটন সকলের সম্মুখে তাকে রাস্তার জন্য জমি দিতে অনুরোধ করলে আব্দুস সাত্তার রাস্তা দিতে রাজী হয়নি। এতে উপস্থিত ্ইউপি চেয়ারম্যান পরশ মোল্লা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তারা কাঠমিস্ত্রী আব্দুস সাত্তারকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। এ অবস্থায় আব্দুস সাত্তার দৌড়ে তার ঘরের ভিতর চলে যায়। কিন্তু চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তাকে ঘর থেকে ধরে এনে লাঠি দিয়ে এলোপাতারি পিটাতে থাকলে সে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এই অবস্থায় চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আব্দুস সাত্তারকে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। পরে তার বড় মেয়ে সুরভী বেগম তাকে দ্রুত বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এই ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান বশির মোল্লা ওরফে পরশ মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শমসের জামান ভূঁইয়া রিটনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে তিনি জানান যে, তার অনুরোধে আব্দুস সাত্তার জায়গা দিতে রাজি হয়েছিল বিধায় তিনি দরবার থেকে চলে গিয়েছিলেন। পরে তিনি শুনতে পেয়েছেন যে, আব্দুস সাত্তারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বেলাব থানার ওসি বদরুল আলম জানিয়েছেন মিস্ত্রী আব্দুস সাত্তারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে সত্য। তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তা মামলা দায়ের করার পর বলা যাবে। নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গ থেকে নিহত কাঠ মিস্ত্রী আব্দুস সাত্তারের লাশ তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বেলাব থানায় তখনো মামলা দায়ের করা হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ