Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আলো ছড়াচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের শত বছরের দুর্ভোগে

কমিউনিটি পানি সরবরাহ প্রকল্প

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : নওগাঁর খরা পীড়িত ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলে রান্না-খাবারসহ দৈনন্দিন প্রতিটি কাজেই ভরসা একমাত্র পুকুর আর কুপের পানি। তাও ফুরিয়ে যায় চৈত্র-বৈশাখ মাসে। বছরের ৯ থেকে ১০ মাস এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। শুরু হয় পানির জন্য হাঁহাঁকার। শত বছরের প্রাচীন এই দুর্ভোগ লাঘবে আশার আলো ছড়াচ্ছে স্থানীয় এমপির নেতৃত্বে সম্মিলিত উদ্যোগে স্থাপিত ‘কমিউনিটি পানি সরবরাহ প্রকল্প’। আবার পানি সরবরাহ এই প্রল্পের আওতায় একজন মানুষ মাত্র তিন টাকায় মাসজুড়ে অনায়াসে পাচ্ছেন বিশুদ্ধ পানি। এতে করে বরেন্দ্র এলাকার চিরচেনা দুঃসহ চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর উপজেলা ও পতœীতলা-ধামইরহাট উপজেলার আংশিক এলাকা ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকা হিসাবে পরিচিতি। এসব এলাকার ভুগর্ভস্থ ২০০ থেকে ৩০০ ফুট অভ্যন্তর পর্যন্ত রয়েছে কঠিন শিলাপাথরের স্থর। এর নিচে রয়েছে পানির স্থর। সাধারণ নলক‚প বসিয়ে বর্ষাকালে পানি পেলেও অন্য সময়ে এক ফোঁটা পানিও পড়ে না এসব নলক‚প থেকে। পানি সংগ্রহে যুদ্ধ নামতে হয় এসব এলাকার মানুষদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই এ সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রতি বছরই প্রকপ হচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার পানি সঙ্কট। খরা মৌসুমে এ অঞ্চলের নারী-পুরুষদের পানি সংগ্রহে ছুটতে হতো গ্রাম থেকে প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে গভীর নলক‚পের দিকে। কোথাও বড় দীঘি অথবা পুকুরে যেতে হতো তাদের। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই পানি সংগ্রহেই চলে যেত দিনের অর্ধবেলা। কখনো কখনো বাধ্য হয়ে এলাকার ডোবা-নালার পানি ব্যবহার করতে হতো তাদের। এতে করে পানি বাহিত নানা রোগের প্রকোপও ছিল বরেন্দ্র এলাকার যত্রতত্র।
ঠিক সেই মুহূর্তে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে জেলার সাপাহারে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রথম স্থাপন করা হয় কমিউিনিটি বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প। স্থানীয় এমপি মুক্তিযোদ্ধা বাবু সাধন চন্দ্র মজুমদারের ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, এলজিইডি বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থায়নে এক লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা ব্যায়ে গ্রামে সাবমারসিবল মোটরের সাহায্যে প্লাস্টিকের ট্যাংকি উঁচু স্থানে স্থাপন করে পাইপ লাইনে ট্যাপকল বসিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিজ নিজ উদ্যোগে বাড়ির উঠানেও পানি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সরবরাহে শুধু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বাড়তি কোনো অর্থ পানির জন্য দিতে হচ্ছে না। পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী এই অর্থ নেয়া হচ্ছে। এতে করে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য মাসে তিন থেকে চার টাকা করে খরচ পড়ছে। প্রাথমিক অবস্থায় জেলার সাপাহার উপজেলার ৫০টি গ্রামে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আরো ১০০টি প্রকল্প চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। মাত্র তিন টাকায় মাসজুড়ে পানি পেয়ে এলাকাবাসীর কাছে এই প্রকল্প অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হযে উঠেছে। আবার পানির কোন অপচয়ও নেই। কারণ উদ্যোক্তারা প্রতিটি ট্যাংকির পাশেই পৃথক আরো একটি পাইপ বসিয়েছেন। ট্যাপ হতে অতিরিক্ত পানি সেই পাইপ দিয়ে আবারো ভ‚গর্ভস্থ গিয়ে ফ্লিটার হয়ে সেই পানি চলে আসছে মূল পাইপে।
উপজেলার গোডাউনপাড়া, কাবুলপাড়া, তুড়িপাড়া, তাজপুর পশ্চিমপাড়া, তাজপুর পূর্বপাড়া, তেহরিয়া, খোট্টাপাড়া, মানিকুড়া, দীঘিপাড়া, কল্যাণপুর, মালিপুর, বড়ডাঙ্গা, ভিকনা ও ইসলামপুরসহ স্থাপিত পানি সরবরাহ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা দেখা গেছে, এসব এলাকার মানুষ এখন অনায়াসে বিশুদ্ধ খারাবর পানি পাচ্ছে। কেউ ট্যাংকির নিচে প্রধান ট্যাপকল থেকে গ্রামের গৃহবধুরা পানি সংগ্রহ করছে, কেউ বাড়ির উঠানেই ট্যাপকলেই পানি নিচ্ছে। এ সময় এসব নারীদের চোখেমুখে ছিল হাসির ঝিলিক।
নওগাঁর সীমান্ত ঘেষা খোট্টাপাড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষিকা সানজিদা বেগম। গ্রামে কোন টিউবওয়েল না থাকায় তার দায়িত্ব প্রতিদিন তিন বেলা ক‚প থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হতো। চৈত্র-বৈশাখে কুপের পানিও পাওয়া যায় না। তখন তিন-চার কিলোমিটার দূরে গভীর নলক‚প অথবা বড়দীঘি থেকে পানি সংগ্রহ করতে হতো। এখন সেই পানি হাতের কাছে পাচ্ছি। এর চেয়ে বড় আর কি পেতে পারি। তিনি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ