Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কয়েক হাজার কৃষক পরিবারে বিষাদের ছায়া

মঠবাড়িয়ায় সহস্রাধিক একর জমিতে আমন আবাদ হয়নি

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আবদুল হালিম দুলাল, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) থেকে : পাকা আমন ধান কাটায় যখন কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছে তখন উপজেলার মিরুখালী ও ধানীসাফা ইউনিয়নের আমন আবাদ করতে না পারা কয়েক হাজার কৃষক পরিবারে বিরাজ করছে বিষাদের ছায়া। ২ ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রামে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে সহাস্রাধিক একর ফসলি জমিতে আমন আবাদ করতে পারেনি কৃষকরা। ইরি-বোরো চাষের জন্য জলাবদ্ধ অনাবাদী জমিতে জন্ম নেয়া কচুরি পানা ও আগাছা পরিস্কার করতে কৃষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জানাযায়, বেরি বাঁধ না থাকা এবং অপরিকল্পিতভাবে বেরি বাঁধ, শাখা খালে বাঁধ ও ¯øুইজগেট নির্মাণের কারনে উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে প্রতিবছর সহাস্রাধিক একর আবাদী জমি জলাবদ্ধ থাকায় কৃষকরা আমন আবাদ করতে পারছেনা। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলার মিরুখালী ও ধানী সাফা ইউনিয়নের ১২ টি গ্রাম। গ্রাম সমূহ হলো মিরুখালী ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া, ছোট শৌলা, বড় শৌলা, উত্তর মিরুখালী, ওয়াহেদাবাদ, দেবীপুর, পশ্চিম মিরুখালী, বাদুরা, ভগিরথপুর ও ঘোপখালী এবং ধানী সাফা ইউনিয়নের পূর্ব ধানী সাফা ও তেতুলবাড়িয়া। উপজেলা কৃষি আফিসের সূত্র মতে উপজেলায় মোট অনাবাদী জমির পরিমান এক হাজার একর। তবে কৃষকদের দাবী মিরুখালী ও ধানী সাফা ইউনিয়নেই অনবাদী জমি আছে প্রায় এক হাজার একর। পানি নিষ্কাশন না হতে পারার প্রধান কারন আমুয়া-মিরুখালী-ধানী সফা খালের উত্তর পারে বেরি বাঁধ না থাকা এবং কয়েকটি শাখা খালে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি নিষ্কাশন না হতে পারায় জলাবদ্ধ জমিতে কচুরিপানা ও টেপ্পোনাসহ বিভিন্ন আগাছায় ভরে গেছে। আগাছার জন্য বর্তমানে ইরি-বোরো ধান আবাদ করতে পারছেনা অনেক কৃষক। কারন জমি চাষ, সার ও কীটনাশকের টাকার সাথে আগাছা পরিস্কারের ব্যয় যুক্ত হয়ে আবাদে যে টাকা ব্যয় হয় উৎপাদিত ফসলে সে টাকা পায় না কৃষক।
বড় শৌলা গ্রামের কৃষক আঃ গফফার হাং (৫২) জানান, জলাবদ্ধতার কারনে তার প্রায় ২ একর জমিতে ৮/১০ বছল ধরে আমন আবাদ হয়না। আঃ গফফার আরও জানান, অধিক মূল্যে বীজ, সার ও কীট নাশক ক্রয় এবং আগাছা পরিস্কার ও চাষ খরচসহ এক একর জমিতে ইরি-বোরো আবাদে প্রায় ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা ইরি-বোরো আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাঁশবুনিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ জাকির হোসেন খান জানান, তার ওয়ার্ডের আমন আবাদ করতে না পারা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে আউষের বীজ ও সার দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়নি।
জলাবদ্ধতায় ভূক্তভোগী উত্তর মিরুখালী গ্রাম নিবাসী, খুলনা মেট্রাপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবি ড. মোঃ জাকির হোসেন জলাবদ্ধতা নিরসনে মিরুখালী বাজার থেকে ধানী সাফা বাজার পর্যন্ত খালের উত্তর পারে (৮ কিলোমিটার) বেরি বাঁধ নির্মাণ এবং মিরুখালী-ঘোপখালী খাল, ধোপার খাল, ডাক্তার বাড়ি খাল, তেতুল বাড়িয়ার খাল, দেবীপুর খাল, ভগিরথপুর বাজার খাল ও তোফেল হাওলাদার বাড়ির সামনের খালে দ্রæত ¯ুইজ গেট নির্মাণের দাবী জানান। তিনি উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে কৃষি মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
এব্যপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনিরুজ্জামান জানান, গত মাসে বরিশাল আঞ্চলিক ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় সভায় জলাবদ্ধতার সমস্যাটি উত্থাপন করলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহন করা হয়েছে। এর আগেও ৩ বার কৃষি মন্ত্রণালয় রিপোর্ট দিয়েছেন বলে কৃষি কর্মকর্তা জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ