Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্ঘটনার আশঙ্কা নতুন ভবন নির্মাণ দাবি

রাউজান হলদিয়া রাবার বাগানের ১২ আবাসিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম বেলাল উদ্দিন, রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে : চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার হলদিয়া রাবার বাগানের ১২টি আবাসিক ভবন শতভাগ ঝুকিপুর্ণ। এসব আবাসিক ভবন যেকোন সময় ধ্বসে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ৩১৫৭ একরের বিশাল হলদিয়া রাবার বাগানের ১৯৮২/৮৩ সালে তৈরি করা এসব আবাসিক ভবন বর্তমানে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বাগান কর্তৃপক্ষ ঐসব বাসায় অফিসার ও কর্মচারীদের না থাকার জন্য নোটিশ প্রদান করেছেন। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখাযায় প্রায় ৩৪ বছর আগে নির্মিত এসব ভবনে তখনকার সময় আর সিসি পিলারবিহীন ডাবল ওয়ালের মাধ্যমে ছাদ ঢালায় করা হয়। যা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে প্রতিনিয়ত ছাদের কংক্রিট ও আস্তর ভেঙে ভেঙে পড়ছে। প্রতিটি বিল্ডিংয়ের ছাদের লোহা দেখা যাচ্ছে। ঐসব বাসায় বসবাসরত সকলে জানান, চাকরির জন্য এসব বাসা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও থাকতে হচ্ছে। ইয়াকুব নামে এক টেপার (কষ আহরনকারী) জানান, আমার বাসার ছাদের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে, প্রতিদিন কোন না কোন অংশে ছাদ থেকে আস্তর ভেঙে পড়ছে, বর্ষার সময় ছাদ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। সবকটি বাসা পরিদর্শন করে দেখাযায় সকল বাসার নাজুক অবস্থা। হলদিয়া রাবার বাগানের ৯ টিতে কর্মচারী ও ৩টিতে অফিসাররা বসবাস করে আসছেন দীর্ঘকাল থেকে। একটি বাসাতে দুই পরিবার করে মোট ২৪টি পরিবার এসব বাসায় অস্থান করেন। এক নং বাসায় থাকেন নুরুল আমিন ও ইয়াকুব, তাদের দুই পরিবারে ১৪ জন, ২নং বাসায় মিনা মার্মা ও আতুশি মার্মা, তাদের পরিবারে ১০ জন,৩নং বাসায় আমি মং মার্মা ও সত্যজিত রায়, তাদের পরিবারে ৭জন, ৪নং বাসায় রেম্রাসু ও মংলা শর্মা তারা দুই পরিবারে ৭ জন, ৫নং বাসায় জাহাঙ্গীর ও জাকির, তাদের পরিবারে ৯ জন, ৬নং বাসায় মহিউদ্দিন ও হুমায়ুন, তাদের বাসায় ১০ জন, ৭নং বাসায় আয়ুব আলী ও আশরাফ আলী, তাদের বাসায় ৫ জন,৮নং বাসায় শহীদুল্লাহ ও বাসু ড্রাইভার,তাদের পরিবারে ১০ জন,৯নং বাসায় পলাশ ও রুহুল আমিন, এদের বাসায় ৮ জন, ১০নং বাসায় হাবিলদার আসাদুজ্জামান ও জুলফিকার আলী, তাদের বাসায় ৭জন, ১১নং বাসায় জাকের ড্রাইভার ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, তাদের বাসায় ২ জন,১২ নং বাসায় বাগানের ব্যস্থাপক নন্দি গোপাল রায় ও নিরপত্তায় নিয়োজিত আনসার,তাদের বাসায় ১৪ জন। এছাড়া গেষ্ট হাউজ জরাজীর্ণ এবং বাগানের মুল অফিস তাও ঝুকিপূর্ণ। মোট ১২টি বাসায় ১০৩ জন অফিসার ও কর্মচারী পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করলেও তারা শংকায় ভুগেন কোন সময় এই ভবনগুলি ধ্বসে পড়ে। এ প্রসঙ্গে বাগানের ব্যস্থাপক নন্দি গোপাল রায় জানান, বহুদিন যাবত সংস্কারবিহীন এসব আবাসিক ভবনগুলি মারাত্তকভাবে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোন সময় বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি জানান, ভবনগুলি পরিত্যক্ত ঘোষানা করে ৪ তলা কিংবা ৬ তলার চার ফ্লাইট করে একটি ভবন তৈরি করা হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকবার লিখিত প্রস্তাব বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন রাবার বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছিল। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি আরো জানান, যারা বর্তমানে ঝুকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করছে তাদেরকে বসবাস না করার জন্য লিখিত নোটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, বৃহত এ বাগানের অফিসার ও কর্মচারীদের জন্য থাকার বাসা অতি সত্তর করা না হলে অনেক অফিসার কর্মচারী বদলি হয়ে অন্যত্রে চলে গেলে বাগান চালাতে কষ্টকর হয়ে যাবে। এদিকে হলদিয়া রাবার বাগানের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন অফিসটিও জরাজীর্ণ। বাগানেরসহ মাঠ তত্বাবধায়ক (এএফএম) রুহুল আমিন জানান, ৩১৫৭ একরের এ বাগানে ২২৪৬ একরে বাগান সৃজিত। বাকী জায়গাগুলির মধ্যে অফিস,বাসা,কারখানা থাকলেও অন্য বেশকিছু জায়গা জবর দখলে রয়েছে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম জোনে ৯টি রাবার বাগানের মধ্যে লাভজনক অবস্থানে এ রাবার বাগান। গত অর্থ বছরে ৮টি বাগান লোকসান গুনলেও হলদিয়া রাবার বাগান লোকসান ছাড়া ২৯ লক্ষটাকা সরকারকে আয় করেদেন। রুহুল আমিন জানান, এ বাগানে নুন্যতম নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। তৎকালীন ম্যানেজার মারুফ হোসেন ২০১২/১৩ অর্থ বছরে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন জরাজীর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মান করার জন্য। বাগানে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশি উৎপাদন হয়। এ সময়ে ১১ হাজার হতে ১২ হাজার কেজি পর্যন্ত কষ আহরন করা যায়। বর্তমানে গত ১৩ ডিসেম্বরে একদিনের হিসেব অনুযায়ী ১১ হাজার ৩শ কেজি কষ আহরন হয়েছে। বর্তমান ঠিকাদার কেজি প্রতি ৫১ টাকা ৬০ পয়সা দরে কষ বিক্রি করবে। বিশাল এ বাগানের জনবল সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে। জানাগেছে, সহকারী ম্যানেজার পদে ৪ জন থাকার কথা সেখানে ৪টি পদই শুণ্য, সহকারী মাঠ তৎত্ববধায়ক থাকার কথা ৭জন আছেন মাত্র ১ জন ৬টি পদই শুণ্য,প্রসাশন শাখায় ৪জন থাকার কথা সেখানে ৪টি পদই শুণ্য, সুপার ভাইজার পদে ৭ জন থাকার কথা আছে ৪ জন ৩টি পদই শুণ্য, হিসেব শাখাতে থাকার কথা ৩জন বর্তমানে ৩টি পদই শুণ্য। তবে ফটিকছড়ি রাঙ্গামাটিয়া রাবার বাগানে হিসাব ব্যবস্থাপক খোরশেদুল আলমকে ডিপোটেশনে এ বাগানে দেয়া হয়েছে তাও সাপ্তাহে ৩ দিন। বাগানে কোন কম্পিউটার অপারেটর নেই, যার কারনে অফিসিয়াল কাজকর্মে বিগ্নতা সৃষ্টি হচ্ছে। এয়াড়া সরকারি বিভিন্ন অফিসে ফটোষ্টেট মেশিন থাকলেও এ বাগানে তাও নেই। ফটোকপি করতে হলে ২/৩ কিলোমিটার দুরবতী আমিরহাট বাজারে গিয়ে ফটো ষ্টেট করতে হয়। বাগানের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ তহিদুল ইসলাম জানান, খুব জরুরি ভিত্তিতে জরাজীর্ণ ভবনগুলি ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মান করা না হলে যে কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টম্বর ব্যবস্থাপক হিসাবে যোগদান করা নন্দি গোপাল রায়ের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ঘামজরা পরিশ্রম করে এ বাগানের উৎপাদন বৃদ্ধি করছে এবং সব সময় যারা নিরপত্তা দিচ্ছে তাদের জন্য কতৃপক্ষ এগিয়ে না আসলে এ বাগান কে পরিচালনা করবে? তিনি বলেন, অনেকবার প্রস্তাব প্রেরণ করেও উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নিলে আমার করার কি আছে, কারন আমি তাদের অধিনস্থ, আমার কাজ হচ্ছে বাগানের সমস্যা এবং সম্বভনা উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নিকট উপাস্থাপন করা,সিদ্ধান্ত দেবেন ওনারা,তাই আশা রাখছি কতৃপক্ষ একটি বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এদিকে বৃহত এ বাগানের জরাজীর্ণ ভবন দ্রæত ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মান করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন বাগান সংশ্লিষ্ট ও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ