পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একই ছাদ ও আকাশতলে মিলেমিশে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও সাধনায় ওরা ব্যাপৃত। ভিনদেশ জাতি নৃগোষ্ঠী ধর্ম-বর্ণ ও ভাষাভাষীর মিলনমেলা। যেন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মহাদেশ এশিয়ার একটি প্রতিচ্ছবি। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডবিøউ)।
অগ্রসরমান বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতার সাথে তাল মিলিয়ে নারীশক্তি বিকশিত করা এবং ‘চালকের আসনে’ চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণই এই ভার্সিটির লক্ষ্য। দশ বছর আগে এশীয় মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা সূচনা করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছে এ প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্যপানে। পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় আর্থ-সামাজিক বাধা-বিপত্তি, কুসংস্কার ও দারিদ্রপীড়িত এশিয়ায় পিছিয়ে পড়া মেয়েদের মাঝে যুগোপযোগী নেতৃত্বের ভিত তৈরী, নেতৃত্বের গুণাবলী সৃজন করতে চায় এইউডবিøউ।
সেই সাথে নারীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির সোপান রচনা করছে। এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বিশ্বমানের এবং কর্মসংস্থানমুখী উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার প্রত্যয় ও স্বপ্ন। এসব লক্ষ্য হাসিলের জন্য আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি কনসোর্টিয়াম তহবিল গঠন করে ধাপে ধাপে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মেগা বাজেটে এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটি বাস্তব রূপ লাভের অপেক্ষায়। বর্তমান প্রাথমিক অবস্থায় সীমিত পরিসরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্প ও পরিকল্পনা অনুসারে এইউডবিøউ সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে অর্ধেকেরও বেশী সংখ্যক ছাত্রীর জন্য বৃত্তি (স্কলারশিপ) সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। অন্তত তিন হাজার ছাত্রীর উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ অবারিত থাকছে। যার এককভাবে ২৫ শতাংশই বাংলাদেশী। নগরীর মেহেদীবাগ এম এম আলী রোডে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সীমিত পরিসরে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তবে নগরীর এক প্রান্তে বায়জিদ-পাহাড়তলীর মাঝামাঝি আরেফিন নগরে সবুজ পাহাড় টিলা বন-বাদাড় ও নীল হ্রদের কোলে নিটোল প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক পরিবেশে ১শ’ ৩১ একর উপত্যকাময় বিস্তীর্ণ জমিতে এইউডবিøউ’র স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ এবং পুরো এশিয়ায় নারীদের উচ্চশিক্ষায় জাগরণের লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনাভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডবিøউ) যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। এর অঙ্গীকার সত্যিকার অর্থে বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা এবং সেই সাথে কর্মমুখী শিক্ষা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল স্থায়ী ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যদিয়ে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। ইতোপূর্বে ২০০৪ সালের ১৩ জানুয়ারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এইউডবিøউ’র ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।
এশিয়ার সীমারেখা ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশের দানবীরের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয় বেশ আগে থেকেই। বিল গেটস ফাউন্ডেশনসহ আমেরিকা, আয়ারল্যান্ড, সউদী আরব, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, জাপান, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশের দাতা-হিতৈষী মিলে মোট প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি-উদ্যোগের সম্মিলিত প্রয়াস রয়েছে এই মহতি উদ্যোগের পেছনে। তাদের আর্থিক সহায়তায় ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফাউন্ডেশন’ গঠিত হয়। এই ফাউন্ডেশনই বাংলাদেশে ও এশিয়ায় বিশেষত উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতে নারী শিক্ষায় সামাজিক বিপ্লব আনার লক্ষ্য সামনে রেখে বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে দৃপ্ত প্রত্যয় সহকারে।
তবে পদে পদে বিভিন্ন ধরনের চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে স্বপ্নের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে নীরবে ও ধীরে এগিয়ে চলেছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডবিøউ) প্রকল্পটি। বন্দরনগরীর বায়েজিদ-পাহাড়তলী এলাকায় সরকার কর্তৃক এই বিশ্ববিদ্যালয়কে দুই ধাপে মোট ১শ’৩১ একর ভূমির বরাদ্দপত্র দেয়া হয়। কিন্তু ভূমির উন্নয়ন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে বায়েজিদ সংযোগ সড়ক নির্মাণে গৃহীত আরেক প্রকল্প নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাথে জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সময়োচিত উদ্যোগের ফলে সমস্যার সুরাহা হয়।
চট্টগ্রামে স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠাসহ এইউডবিøউ পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্প এগিয়ে চলেছে। এতে বাংলাদেশ সরকার শুধুই ভূমির সংস্থান করেছে। বাদবাকি সবকিছু ফাউন্ডেশনের তরফে থেকে করার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ ও সরকারের মধ্যে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন বিধি-বিধান বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিশাল আয়তনের ভূমিতে খ্যাতনামা আমেরিকান স্থপতি মুসে সাদ্দি দেশের বিশিষ্ট স্থপতি প্রকৌশলীদের সহযোগিতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ প্রকল্পের স্থাপত্য কলাকৌশল সম্বলিত নকশা তেরী করেন। সেই ডিজাইন অনুসরণে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হচ্ছে।
বর্তমানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ, চীন, শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল, আফগানিস্তান, ইরান, ফিলিস্তিন, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫শ’ ছাত্রী অধ্যয়ন করছেন। তারা নিজ দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বহন করছেন এবং পরস্পর আদান-প্রদানের অপূর্ব সুযোগ লাভ করছেন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি বেøয়ারের পতœী শেরী বেøয়ার এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নামকরা শিক্ষক, গবেষকগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে উচ্চশিক্ষা প্রদান করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশাবাদী, ধাপে ধাপে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডবিøউ) বিকাশ লাভ করবে বিশ্বে উচ্চশিক্ষা এবং জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্রে একটি মডেল হিসেবে। এ ভার্সিটির উল্লেখযোগ্য বিভাগগুলো হচ্ছে- আর্টস, হিউম্যান রাইটস, ক্যালকুলাস, প্রাণিবিজ্ঞান, রাজনীতি, দর্শন, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি।
এইচএসসি’র ধাপ উত্তীর্ণ ছাত্রী, যাদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে তারা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডবিøউ) ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে বিবেচিত হন। পূর্ববর্তী পরীক্ষায় ইংরেজি ও গণিতে ৬০ শতাংশ প্রাপ্ত ছাত্রীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রতিবছর ফেব্রæয়ারি মাসে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত ছাত্রীদের বাছাই করা হয়। ভর্তির পরপরই প্রাথমিকভাবে এক্সেস একাডেমি কোর্সে এক বছর মেয়াদে বিশেষত ইংরেজি ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এক্সেস একাডেমি প্রি-কলেজিয়েট ব্রিজ প্রোগ্রাম কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করার পর চার বছর মেয়াদি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকজন ছাত্রীর পড়াশোনা এবং থাকা-খাওয়া বাবদ বিরাট ব্যয়ভার মেটানোর ক্ষেত্রে এখানে মেধার দিকটি প্রাধান্য দেয়া হয়। এরফলে অধ্যয়নরত ছাত্রীরা প্রায় প্রত্যেকেই শিক্ষাবৃত্তির (স্কলারশিপ) আওতায় আসছেন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত মেধা-ফলাফলের ভিত্তিতে আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও মেধার দিক বিবেচনায় ৭০ শতাংশ ছাত্রীকে সম্পূর্ণ বৃত্তি এবং অবশিষ্ট ৩০ ভাগ ছাত্রীর জন্য আংশিক শিক্ষাবৃত্তি বিবেচিত হয়ে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।