পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানের ফুৃটপাতসহ রাস্তা আবার দখলে নিয়েছে হকাররা। এতে করে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গুলিস্তানে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তা দখল করে রাখায় হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নামতে গিয়ে শত শত গাড়ি আটকা পড়েছে। অন্যদিকে, নবাবপুর রোডে রাস্তার উপর বসানো হয়েছে টেম্পুস্ট্যান্ড। এতে করে ওই রাস্তা দিয়েও যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে করে গুলিস্তানকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানজট। তার প্রভাব গিয়ে পড়ছে পল্টন, কাকরাইল, প্রেস ক্লাব, হাইকোর্ট, শাহবাগ, মতিঝিল, টিকাটুলীসহ আশপাশের এলাকায়। শুধু গুলিস্তান নয়, পুরো রাজধানীর একই চিত্র। শুধুমাত্র রাস্তা দখলের কারনে যানজটের ভোগান্তি বাড়ছে কয়েক গুণ।
বিভিন্ন কারনে ঢাকা শহরে যানজটের মাত্রা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডায়াগনস্টিক স্টাডিতে বলা হয়, বর্তমানে ঢাকায় যানজটে বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর্থিক হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। যানজটের ক্ষতি পরিমাপে সময় ও জ্বালানি তেলের অপচয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও শহরমুখী প্রবণতা বৃদ্ধিকে বিবেচনা করেছে এডিবি। এ হিসেবে যানজটে ব্রিটেনে জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ফ্রান্সে এ ক্ষতি জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ, জার্মানিতে দশমিক ৯ ও আমেরিকায় দশমিক ৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশের মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে যানজটে ক্ষতি জিডিপির ৩ শতাংশ। যদিও এ ক্ষতিকে বাস্তব অবস্থার চেয়ে অনেক কম বলে মনে করছে এডিবি নিজেই।
এডিবির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার যানজটের মূল কারণ হলো ব্যক্তিগত গাড়ি। এর বাইরে যানজটের আরও চারটি কারণ রয়েছে। এগুলো হলো-জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সব ধরনের যানবাহন বাড়া, একই সড়কে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যান চলাচল, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও নিম্নমানের পরিকল্পনা। যানজটের ক্ষতি পরিমাপে এডিবি প্রান্তিক বাহ্যিক ক্ষতি ব্যবহার করেছে। আর এটি পরিমাপে পাঁচটি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো হলো-যানজট, বায়ুদূষণ, সড়ক দুর্ঘটনা, সড়ক ও যানের ক্ষয়ক্ষতি এবং শব্দদূষণ। এর ভিত্তিতে দেখা যায়, ব্যক্তিগত গাড়ির প্রান্তিক বাহ্যিক ক্ষতি গণপরিবহনের ১৩ গুণ বেশি। তবে অফপিকের চেয়ে পিক আওয়ারে ক্ষতি বেশি। এক্ষেত্রে যানজটে ব্যক্তিগত গাড়িতে পিক সময়ে ঘণ্টাপ্রতি ক্ষতি ৪৫ টাকা ৯০ পয়সা ও অফপিকে ক্ষতি ২২ টাকা ৩৮ পয়সা। এদিকে বাসে পিক সময়ে ঘণ্টাপ্রতি ক্ষতি ৬০ পয়সা ও অফপিকে ২৯ পয়সা।
যানজটে রাজধানীর ক্ষতির চিত্র ২০১১ সালে তুলে আনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইইবি)। তাদের হিসাবে, ২০১১ সালে যানজটে নষ্ট হয় ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। এর আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। সে বছর পরিবহন খাতের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার কোটি টাকা। এছাড়া যানজটে আটকে থাকার কারণে পণ্য পরিবহনে ক্ষতি হয় দুই হাজার কোটি, জ্বালানি বাবদ ৫৭৫ কোটি ও পরিবেশগত দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর চিকিৎসা ব্যয় বাবদ ক্ষতি হয় ৭৩০ কোটি ও দুর্ঘটনায় ৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০১১ সালে রাজধানীর যানজটে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। প্রায় একই সময়ে রাজধানীর যানজটের অর্থনৈতিক ক্ষতি পরিমাপ করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও দ্য চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট। ২০১১ সালের ওই গবেষণায় রাজধানীর যানজটে বাণিজ্যিক ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয় ২১ হাজার কোটি টাকা। ২০১২ সালে ঢাকার যানজট নিয়ে এক সমীক্ষা চালায় ইউএনডিপি। অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি যানজটের বেশ কিছু কারণও উঠে আসে ওই সমীক্ষায়। এতে বলা হয়, ২০১২ সালে যানজটে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সমীক্ষায় বলা হয়, ঢাকায় নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা দুই লাখের বেশি। এসব গাড়ি রাজধানীর সড়কগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে থাকে। মাথাপিছু গাড়ি ব্যবহারও ঢাকায় অনেক কম। প্রতি হাজারজনের জন্য তিনটি গাড়ি। তবু গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলকারী ৬ শতাংশ মানুষ ঢাকার ৭৬ ভাগ সড়ক দখল করে আছে। মোট সড়কের ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ থাকে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। গণপরিবহনের দখলে থাকে ৬ থেকে ৮ শতাংশ। বাকি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সড়ক অবৈধ দখল ও অবৈধ পার্কিংয়ের দখলে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার রাস্তাকে পুরোপুরি দখলমুক্ত করলে যানজটের ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে।
রাস্তাকে দখলমুক্ত করার জন্য চলতি বছরের শুরুতেই দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে উত্তরের মেয়র মরহুম আনিসুল হক অনেকটাই সফল হয়েছিলেন। বিশেষ করে অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী-ধানমন্ডিসহ গাবতলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুরের অনেকাংশের ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করেছিলেন তিনি। এদিক থেকে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন পিছিয়ে থাকলেও গুলিস্তানকে তিনি অনেকটাই হকারমুক্ত করেছিলেন। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল এলাকার ফুটপাত ও রাস্তা আবার বেদখল হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকা শহরের যানজট ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০০৪ সালে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বরং এসটিপিকে পাশ কাটিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে যানজটকে স্থায়ী রূপ দেওয়া হচ্ছে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।