পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। পেশাগত জীবনের শুরুতে ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর (স্কুল শিক্ষক)। বাবার নাম আলহাজ্ব মামদুহুর রহমান। মাতা মোছাঃ আমেনা বেগম। বাবা-মা দু’জনেই বেঁচে আছেন। পেশাগত জীবনে বাবা ছিলেন একজন আদর্শ স্কুল শিক্ষক। মোস্তফার জন্ম ১৯৫৯ সালে। তিনি তার গ্রামের কমরগঞ্জ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস ভর্তি হন কারমাইকেল কলেজে। সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি এবং ১৯৭৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক পাস করেন। এরপর ফিরে যান নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে ১৯৮৩ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন কমরগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। দুই বছর শিক্ষকতা করার পর সেই চাকরি ছেড়ে আবারও রংপুর শহরে চলে আসেন। শুরু করেন ঠিকাদারী ব্যবসা। অল্প দিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ বিভাগের প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় তার পদচারনা। ছোট-বড় সকলের কাছেই তিনি পরিচিত। কোনও এলাকায় কোনও ধরনের সমস্যা হলে খবর পাওয়া মাত্রই তিনি ছুটে যান সেখানে। বিবাহিত জীবনে তিনি ২ মেয়ে সন্তানের জনক।
মুলতঃ এরশাদের মুক্তি আন্দোলনে মাধ্যমেই জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় চলে যান একেবারেই তৃণমূল পর্যায়ে। হয়ে ওঠেন গণমানুষের প্রিয় নেতা। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সদ্য অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নগরপিতা বনে যান।
যেভাবে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে এলেন
১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগের পর কারাবন্দি হন জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। কারাবন্দির পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ,এম এরশাদের মুক্তির দাবীতে রংপুরে শুরু হয় ‘এরশাদ মুক্তি আন্দোলন’। বিশাল আকৃতির লাঙল বানিয়ে ‘এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে’ ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেই আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন মোস্তফা। আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি সারা দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হন।
১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এরশাদ কারাবন্দি থাকা অবস্থায় রংপুরের ছয় আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। এ সময় কারাবন্দি এরশাদের মুক্তির আন্দোলনে আরও জোরদার হয় এবং তাতে নেতৃত্বের প্রথম সারিতে থাকেন মোস্তফা। এ সময় এরশাদের মুক্তি ও তার মনোনয়নপত্র গ্রহণের দাবিতে জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও অফিস ঘেরাও কর্মসূচিসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। এরপর ১৯৯৪ সালে জাতীয় প্রথমে পার্টির জেলা কমিটির সদস্য, পরে পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রংপুর সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টি রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সালে তিনি রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০১২ সালে প্রথম সিটি কপোৃরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হন। এ সময় জাপা চেয়ারম্যান প্রথমে তাকে সমর্থন দিলেও পরে তিনি সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। এসময় জাপার আরেক প্রার্থী আব্দুর রউফ মানিক ওই নির্বাচনে অংশ নিলে মোস্তফা জাপার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে হাঁস মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। ওই নির্বাচনে তিনি ৭৬ হাজার ৪’শ ভোট পেয়ে ঝন্টুর নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই নির্বাচনে সরফুদ্দিন ঝন্টু ১ লাখ ৬ হাজার ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত না হয়েও তিনি নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, প্রতিটি অলি-গলি ঘুরে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। কোথাও কোন সমস্যা হলেই তিনি সেখানে গিয়ে হাজির হতেন। সুখে-দুঃখে ধনী-গরীব সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে শুরু করেন। এভাবেই দিনে দিনে হয়ে ওঠেন গণমানুষের প্রিয় মুখ। মাটি ও মানুষের নেতা ‘মোস্তফা’।
২০১২ সালের নির্বাচনে দলের অসহযোগিতা ও আরও একজন প্রার্থী থাকার কারণে মোস্তফা মেয়র নির্বাচিত হতে না পারলেও সদ্য অনুষ্ঠিত রসিক নির্বাচনে মোস্তফা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে (৯৮ হাজার ৮৯ ভোটে) পরাজিত করে নগর পিতা আসনটি দখল করেন।
নগরপিতা নির্বাচিত হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মোস্তফা বলেন, ‘আমি ২০১২ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরের দিন থেকে রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করি। ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। গত ৫ বছরে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় যাই। এলাকার সমস্যাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নেই। ফলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি এলাকা ঘুরে-ঘুরে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করি। এতে যতটুকু যেতে পেরেছি, তার ফল পেয়েছি।
বিপুল পরিমানে ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হওয়ার পেছনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, সবার আগে বাবা-মার দোয়া আর নগরবাসীর অফুরন্ত ভালোবাসা। তার পরে দলের নেতাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের এই বিজয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের ৬ মাস আগেই নগরীর ১৯৩টি ভোট কেন্দ্র্রের প্রত্যেকটিতে দলের পক্ষ থেকে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ডে গঠন করা হয় মনিটরিং কমিটি। এসব কমিটি নির্বাচনের ৬ মাস আগে থেকেই কাজ করে ্আসছিল। প্রতিটি কেন্দ্রে আমরা সভা-সমাবেশ করেছি। তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছি।
নগরবাসীকে কেমন ‘মেয়র’ উপহার দেবেন? এ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আমার জীবনে আর চাওয়া-পাওয়ার কি থাকতে পারে? নগরবাসী যে ভালোবাসা আমাকে দিয়েছে, জীবনের বিনিময়ে হলেও তার মূল্য দেব। নগরবাসীর ভালোবাসার কাছে আমি চির ঋণী। তাদের সেবা করার যে সুযোগ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন-আমি সেটি করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। রংপুর সিটি কর্পোরেশনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রেখে একটি দুর্নীতিমুক্ত সিটি কর্পোরেশন উপহার দিতে চাই। যানজট মুক্ত করে রংপুর মহানগরীকে একটি মডেল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য তিনি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।