Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুভেচ্ছা বিনিময়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত নতুন নগর পিতা মোস্তফার

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

রংপুরের নব নির্বাচিত নগরপিতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা গতকাল দিনভর পরাজিত প্রার্থী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। মুলতগত শুক্রবার রাত থেকেই তিনি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি ও কৃতজ্ঞতাকে অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন নগরীর সাধারণ মানুষ। গতকাল শনিবার সকালেই তিনি তার নির্বাচনী কার্যালয়ে বসেন। সেখানে অপেক্ষমান বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় দলীয় নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। এ সময় তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। পরে তিনি দিনভর নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের সাথে কুশল বিনিময় ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বেড়ান। নির্বাচনী কার্যালয়ে কুশল বিনিময় শেষ করেই তিনি চলে যান নির্বাচনে পরাজিত ও তৃতীয় স্থান দখলকারী বিএনপির প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার বাড়িতে। বাবলার বাড়িতে গিয়ে তিনি ড্রইিং রুমে না বসে সোজা ভিতরে গিয়ে ডাইনিং রুমে থাকা বাবলার সাথে কোলাকুলি করেন। পরে তিনি নিজেই বাবলার গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন। এসময় সেখানে এক আবেগ ঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরে বাবলা সেই মালা মোস্তফার গলায় পরিয়ে দিয়ে বলেন কংগ্রাচুলেশসন। পরে বাবলার হাতে ফুলের তোড়া উপহার দেন মেয়র মোস্তফা।
এসময় মোস্তফা বলেন, আমরা ধারণা করেছিলাম এখানে আপনার (বাবলা) আর আমাদের কনটেস্ট হবে। কিন্তু কেন হলো না সেটা বিশ্লেষণের বিষয়। তবে আমাদের প্রথম থেকেই শংকা ছিল নৌকার প্রতীকের সমর্থকরা ঝামেলা করবে। এজন্য আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে ১০০ জন করে কর্মী রেখেছিলাম। তারা যদি সংঘাতের দিকে যেত তাহলে আমরা মোকাবেলা করতাম। কিন্তু জনগণের প্রস্তুতির কাছে সংঘাতকারিরা সাহস দেখায়নি। তিনি আরও বলেন, আমি আপনার (বাবলা) বাড়ি আসতে দেখলাম এই সময়ও রাস্তায় পানি। এটা কল্পনাই করা যায় না। আমি নগর উন্নয়নে সবার সহযোগিতা চাই। সেজন্য আপনার বাড়ি এসেছি। আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা নিয়েই এই নগরীর উন্নয়ন করতে চাই।
এ সময় বাবলা মোস্তফাকে বলেন, আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে আপনার প্রতি। আপনার প্রত্যেকটি ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপে আমাকে পাশে পাবেন। পরে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের সাথে কোলাকুলি ও কুশল বিনময় করেন। এ সময় তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত করায় ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এর আগে শুক্রবার রাতে তিনি পরাজিত প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর গুপ্তপাড়াস্থ বাড়িতে যান। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঝন্টুর গুপ্তপাড়াস্থ বাসভবনে গিয়ে তাকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন মোস্তফা। এ সময় সাবেক ও বর্তমান দুই মেয়র একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। আবেগঘন এ পরিস্থতিতে ঝন্টু বলেন, মোস্তফা আমার ছোট ভাই। জনগণের ভোটে সে মেয়র নির্বাচিত হয়েছে। রংপুর আমাদের সবার। আমরা রংপুরকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করবো।
ভোটের দিন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেছিলেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোস্তফা এক লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন। এরশাদের এই মন্তব্যের সঙ্গে ভোটের ফলাফল প্রায় মিলে যাওয়ায় অনেকটা রসিকতার সুরে ঝন্টু বলেন, তিনি (এরশাদ) একজন জ্যোতিষীও। কারো প্রয়োজন হলে আপনারা তার কাছে যাবেন।
‘দুর্নীতি করার কারণে ঝন্টুর পরাজয় হয়েছে’-স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে মোস্তফাকে উদ্দেশ্য করে ঝন্টু বলেন, তার (রাঙ্গা) এ কথায় মনে আঘাত পেয়েছি। আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, কোনো দুর্নীতি করিনি।
এ সময় নতুন মেয়র মোস্তফা বলেন, আপনি অনেক প্রবীণ রাজনীতিক। একবার পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং একবার সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনার কাছে আমার অনেক শেখার আছে। বিভিন্ন সময়ে আপনার পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে আমি নগরবাসীর সেবা করতে চাই। এ সময় ঝন্টু তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
কুশল বিনিময় শেষে মোস্তফা গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলেন, এ সময় তিনি বলেন, আমি শুনেছিলাম সাবেক মেয়র মহোদয় আমার বাসায় যাবেন। তিনি আমার বড় ভাই। তিনি কেন আমার বাসায় যাবেন। তাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে আমিই তার বাসায় এসেছি। তিনি আরও বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। তিনি যখন জাতীয় পার্টি রংপুর জেলার সেক্রেটারি ছিলেন তখন আমি সদস্য ছিলাম। উনি জ্ঞান-বুদ্ধিতে অনেক সমৃদ্ধ। তার অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা নিয়ে রংপুরের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। পরে তিনি নগরীর জাহাজ কোম্পানীর মোড়, পায়রা চত্বর ও শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তার এই
এ সময় যুবসংহতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর স্বেচ্ছা সেবক পার্টির আহŸায়ক ফারুক মন্ডল, সাবেক ছাত্র নেতা আমিনুল ইসলাম, মহানগর ছাত্র সমাজের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত আসিফ ও সেক্রেটারি আমিনুল ইসলামসহ দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

 



 

Show all comments
  • নাঈম ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:২১ এএম says : 1
    মোস্তফা সাহেবের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রংপুর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ