Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাভারে মাদকে ধ্বংস যুবসমাজ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাভার (ঢাকা) থেকে সেলিম আহমেদ : রাজধানীর উপকন্ঠ সাভার উপজেলায় প্রায় ২০ লাখের অধিক লোকের বসবাস। মানুষের সাথে সাথে বেড়ে চলছে এ এলাকায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। সেই সাথে অপরাধী চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে আগের চেয়ে বহুগুন। আইনশৃংখলা বাহিনী এ ব্যাপারে মাঝে মাঝে তৎপর থাকলেও মাদক বিক্রির মূল কারিগররা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে মাদকের করাল গ্রাসে আজ ধ্বংসের পথে যুবসমাজ। স্কুল কলেজগামী ছাত্ররা আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকের এ মরন নেশায়। বিপথগামী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে অনেক সময় তারা চুরি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা। মাদকের এ করাল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষায় সাভারবাসী প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের নিকট জোর দাবী জানালেও পুলিশ বলছে, সাভারে কোন মাদক কিংবা মাদকের স্পট নেই।
এদিকে মাদক বন্ধের জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বিভিন্ন সভা করলেও ভেস্তে যাচ্ছে সব পরিকল্পনা।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির দাবী করেন, সাভারে কোথাও মাদক নেই, তবে যেসব যায়গায় অভিযোগ পাচ্ছি সেখানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদকের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জানাগেছে, সাভারের প্রায় শতাধিক মদকের স্পর্ট রয়েছে। এর মধ্যে ইমান্দিপুর, মজিদপুর, ব্যাংক কলোনী, রাজাশন, বিরুলিয়া, আমিনবাজার, সাধাপুর, বক্তারপুর, নিরিবিলি, জোরপুল, ভাগলপুর, আনন্দপুর, কর্ণপাড়া, নামাগেন্ডা, ব্যাংক টাউন, নামাবাজার, আকরাইন, চাঁপাইান, কলমা, রাজফুলবাড়িয়া, শ্যামপুর, সামাইর, বেদেপল্লী, বেগুনবাড়ি, ধরেন্ডা, বলিয়ারপুর, সাভার কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি মাদকের স্পর্ট উল্লেখযোগ্য।
সাদাপুরের পুরান বাড়ী এলাকার জুম্মন মিয়া ইয়াবা ব্যবসার কারিগর। তার সহযোগী পুরানবাড়ী এলাকার কামাল, আল আমিন (এলাকায় জামাই হিসেবে পরিচিত) ভবানীপুর এলাকার রাজীব। এরে মধ্যে কামাল জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে এবং রাজীব মাদকের মামলায় জেলহাজতে রয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশ সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। চলতি মাসে তারা বলিভদ্র, জিরানী ও ভাকুর্তার মুগরাকান্দা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে এক রাতে ৪০৫০০পিচ ইয়াবা উদ্ধার করে ও আমির হোসেন, আমিন উল্লাহ ও তোফায়েল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ভাকুর্তার মুগরাকান্দা এলাকা থেকে ৭৫০০পিচ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী তোফায়েল এবং বলিভদ্র ও জিরানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আমির হোসেন ও আমিন উল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ৩৩হাজার পিচ ইয়াবা।
এর কয়েকদিন আগে রাতে জামসিং এলাকার একটি বিউটি পার্লারের ভিতরে অভিযান চালিয়ে ডিবি পুলিশ আইনজিবী সোহরাব হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাহনাজ আক্তার ও তার সহযোগী রোমানা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। তখন তাদের হেফাজত থেকেও ৩হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
মাদক চক্রের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠেছে অপরাধীর অভয়ারন্য হিসেবে। ছিনতাই, চুরি, দেহব্যবসা, ভুমি দখলসহ নানারকম অপরাধের ঘটনা এ এলাকায় এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এলাকার লোকজন এদের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা মামলার স্বীকার হতে হচ্ছে। পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সক্ষ্যতার কারনে ভুক্তভোগীদের আরও ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে।
আবার সাভারে আবাসিক হোটেল ও মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোতেও মাদকের ব্যবসা চলছে বলে খোঁজ পাওয়া গেছে। সেখানার থেকে পুলিশের নাম করে তাদের সোর্সরা মাসোহারা নিয়ে থাকে বলে তাদের এ ব্যবসায় কোন সমস্যায় পরতে হয়না এমনটাই দাবী করেন।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও থানা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানাযায়, সাভারের ভাটপাড়া সোসাইটি এলাকার দেলু, আব্বাস, ইব্রাহিম তার ভাই রহমান (রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিত), হারুন, স্বপন, রাজু। সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর ও ছোটবলিমেহের মহল্লায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত মাদক স¤্রাট মুন্নার স্ত্রী শিল্পী আক্তার, খলিল, ইদ্রিস। ডগরমোড়া এলাকায় জুয়েল। মিটন গ্রামের নুর আলম, দারোগ আলী, ব্যাংকলোনীর ফরহাদ, কাতলাপুর মহল্লায় স্বপন, মোহাম্মদ আলী, রেষ্টহাউজ গলির সুমন, ভান্ডারীর মোড়ে কালু, আনন্দপুরের ফজলু, নামাগেন্ডায় রিপন। জালেশ্বর এলাকায় জুম্মত পাগলা, নাহিদ। নিমেরটেক এলাকায় মোতালেব, ইমান আলী, বিপ্লব, জাবেদ, মোখলেছ। জোরপুল এলাকায় হাসান, ইয়াদ আলী। চাকুলিয়ার তানজিল, বনগ্রামের রশিদ, সাদাপুরের চুন্নু। আমিনবাজার এলাকায় সোহেল, কালাচাঁন। সলমাসির ইয়ার আলী, ঝাউচরের বারেক। জামসিং এলাকার সাইফুল, বিল্লাল, গোপাল, রিপন, নান্নু। রেডিও কলোনী এলাকায় শান্তিবাবু। বিরুলিয়া এলাকার রসুল, আয়নাল, হাসনা, কালাম, বাতেন, আনোয়ার। ছোট কালিয়াকৈরের হামিদ। ভবানীপুরের আল আমিন, তারেক। হেমায়েতপুরের দুদু, মনির, শামীম, মোতালেব। যাদুরচর এলাকার আনসু। রাজফুলবাড়িয়ার সোহেল, পারভেজ। পানপাড়ার যাদব, আক্তার, শামীম। বলিয়ারপুরের আকালি। এছাড়া সাভার থানা পুলিশের একাধিক সোর্স মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে।
তবে এদের মধ্যে অনেকেই জেলহাজতে রয়েছে। আবার অনেকেই সম্প্রতি জামিনে এসেছে।
এ সব এলাকায় র‌্যাব ও ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশ এাধিকবার অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও কয়েকদিনের মধ্যে আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের পূর্বের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ