Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রূপগঞ্জে ভূমি অফিসে ডিসিয়ার আটকিয়ে ঘুষ বাণিজ্য!

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মরত নাজির কাম ক্যাশিয়ারকে ঘুষ না দিলে ডিসিয়ার পাচ্ছেনা স্থানীয় জমি মালিকরা। নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত প্রদানে ব্যর্থ হলে জমাভাগ ও নামজারী করার অনুমোদিত ফাইল পক্রিয়ার খাজনাপূর্ব ডপ্লিকেট কার্বন রশিদ (ডিসিআর) দি্েচ্ছন না বলে অভিযোগ ওঠেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মুড়াপাড়াস্থ ভূমি অফিসের কর্মরত নাজির কাম ক্যাশিয়ার আদিলুর রহমানের টেবিলে শতাধিক ডিসিআর আবেদন জমা পড়ে আছে। এসব ডিসিআর প্রাপ্তিতে সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ১শত ৫০টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও আবেদনকারীকে ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে জমির রকমভেদে ১০হাজার টাকা প্রদান করতে হচ্ছে। উপজেলা ভুমি অফিসের একমাত্র সরাসরি টাকা গ্রহণের বৈধ টেবিল হিসেবে পরিচিত নাজিরের টেবিলে ঘুষ না দিলে সময়মত মেলে না ডিসিআর। বিধিমতে ডিসিআর ফি প্রদানের সাথে সাথে তা জমি মালিককে বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও তা প্রাপ্তিতে সময় ব্যয় হয় ১০দিন থেকে ১৫দিন। আর অতিরিক্ত ঘুষ প্রদান করতে যেয়ে হিমসিম খাচ্ছে এই এলাকার জমিমালিকরা।
সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নামজারী জমাভাগের মাধ্যমে জমির খাজনা পদ্ধতি চালু রয়েছে । খাজনা আদায় পক্রিয়ায় সাধারনত সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকার নিয়ম থাকলেও টেবিলে টেবিলে ১০হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা ঘুষ না দিলে নড়ছেনা ফাইল। তাতে নির্ধারিত জমির খাজনা খারিজ করাতে ব্যর্থ হচ্ছে জমি মালিকরা। এসব জমাভাগ আবার ভুয়া মালিকের নামেও করে দিচ্ছে ঘুষের বিনিময়। শধু তাই নয়, নাজির আদিলুর রহমানের বাড়ি একই উপজেলার দাউদপুরে হওয়াতে প্রভাব খাটিয়ে চুক্তি করে জমাভাগ করিয়ে দিয়ে কোটিপতি বনে গেছে। বেশ কয়েকবার নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির দায়ে বিভিন্ন উপজেলায় বদলি হলেও বিশেষ কায়দায় ফের স্বস্থানেই বহাল থাকে সে। এতে অন্যান্য কর্মচারীরা তাকে আতঙ্ক মনে করেন। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, আদিলুর রহমান উপজেলা ভুমি যোগদানের পর থেকেই স্থানীয় একটি দালাল চক্রের সাথে প্রকাশ্য ঘুষ বাণিজ্য গড়ে তুলে। তার টাকা লেনদেনে বৈধ রয়েছে বলে নামজারীর ঘুষ প্রকাশ্যেই আদায় করতে দেখা গেছে।
রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কেয়ারিয়া মৌজার জালিয়াত চক্রের সদস্য নজরুল ও তার ছেলে জাইদুলকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে একটি খারিজ করিয়ে দেয়ার জন্য টাকা নেয় আদিল। পরে বিষয়টি প্রকৃত মালিক আদালতে মামলা দিলে স্থগিত রাখে জমাখারিজ। তবে ঘুষের টাকা ফেরৎ দেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। জাঙ্গীর এলাকার সাখাওয়ার হোসেন জানান, সম্প্রতি উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর মৌজার একটি জমির ডিসিআর নিতে আদিলকে ১০হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে। জরুরী দলিল সম্পাদন কাজে ডিসিআর নেয়ায় তাকে এ ঘুষ দিতে হয়েছে। দাউদপুরের কবির হোসেন জানান, তার ১৩শতক জমি ডিসিআর নিতে ৪হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে আদিলকে। না দিলে ফাইল এসিল্যান্ড পর্যন্ত নিবেনা বলে হুমকী দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ভুলতার মাঝিপাড়া এলাকার মনসুর মিয়া বলেন, উপজেলা ভুমি অফিসের নাজির আদিলকে তাদের মালিকানায় থাকা ৮শতক জমির জন্য ৩ হাজার টাকা দিয়ে ডিসিআর নিয়েছেন।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত আদিলুর রহমান বলেন, আমার টাকা নেয়ার বৈধতা আছে। তবে সরকার নির্ধারিত ফিএর অতিরিক্ত নেয়া হয়না। তবে কেউ খুশি হয়ে দিলে সহকারীদের খরচ রাখা হয়।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, এসিল্যান্ড কার্যালয়ে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা লেনদেনের বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন প্রকার অতিরিক্ত ফি নেয়ার নিয়ম নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ