বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মোঃ হায়দার আলী গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দেশী মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। কোন কোন জাতের দেশী মাছ বিলুপ্ত প্রায়। এক সময় খরস্রোত পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে প্রচুর দেশী মাছের দেখা পাওয়া যেত কিন্তু আর পাওয়া যায় না। পদ্মা ও মহানন্দা নদী এখন পানির অভাবে মরা বিলে পরিনত হয়েছে। অথচ পূর্বে এ সব নদীÑনালা, খালÑ বিল পুকুর, ডোবাকে বলা হতো মৎস্য সম্পদ আহরণের অন্যতম মাধ্যম। দেশের মাছের চাহিদার একটি বিরাট অংশের যোগান হতো নদীÑনালা খালÑ বিল পুকুর, ডোবা থেকে। কিন্তু কালক্রমে নদীÑ নালা, খালÑবিল, পুকুর, ডোবা ভরাট হয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া, অপরিকল্পিতভাবে মাছ আহরণ, মা মাছ ধরা এবং অত্যাধিক রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার প্রভূতির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন কমে আসতে আসতে এমন এক পর্যয়ে এসেছে যে হাটে বাজারে এখন আর দেশীয় প্রজাতির মাছ দেখা যায় না। গত রবিবাার গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিশালবাড়ী বাজারে এ প্রতিবেদক ১ হাজার ১শ টাকা কেজি দেশীয় শিং মাছ ও ১ হাজার ২শ টাকা কেজি কৈ মাছ বিক্রি হতে দেখেছেন কিন্তু পরিমান ছিল কম। অবশ্য প্রাকৃতিক মাছের বংশবিস্তারে বিপর্যের আরও নানা কারণ রয়েছে মৎস্যকর্মকর্তা ও মৎস্য চাষীরা মনে করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়া যার কারণে নদীÑ নালা, খালÑ বিল, পুকুর, ডোবা শুকিয়ে যাওয়ায় যেমন একদিকে প্রাকৃতিক মৎসম্পদ ধবংস হয়ে গেছে, তেমনি অন্য দিকে ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। প্রবীণ জেলেদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সাধারণত মে Ñ জুন মাসে বেশীর ভাগ প্রাকৃতিক মাছ ডিম ছাড়ে। আর এই ডিম ফুটে জুলাইÑ আগস্টে। পোনা মাছ আকারে তা এই সময়টায় বড় হয়। কিন্তু এবার জলবায়ু পরিবতনের প্রভাবে মেÑ জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত বলতে তেমন কোন বৃষ্টিপাত হয় নি। গত কয়েক বছর থেকে গোদাগাড়ীতে উল্লেখযোগ্যে হারে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৫ সালের পর থেকে গোদাগাড়ীতে বৃষ্টিপাতের পরিমান আশাংকাজনকভাবে কমে গেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৬ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ৮৮৩ মিলি মিটার, ২০০৭ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ১১৬৩ মিলি মিটার, ২০০৮ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ১১১৩ মিলি মিটার, ২০০৯ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ১০২৫ মিলি মিটার, ২০১০ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ৯০৫ মিলি মিটার, ২০১১ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ১৫০৮ মিলি মিটার, ২০১২ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ৮০০ মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে। ২০১৩ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ৯৫০ মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ৯৮০ মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে। ২০১৫ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ৯৯০ মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে আবার উচ্চ তাপমাত্রার কারণে অনেক মাছের ডিম শুকিয়ে গেছে মাছের পেটেই। জুলাই মাসের শেষের দিকে সামান্য বৃষ্টির পানিতে এলেই পঁটি, সরল পঁটি, কৈ, শিং, মাগুর, টেংরা, বোয়ার, চিতল, চিংড়ি, দারকিনা, মলা, ঢেলা ইত্যাদি মাছ ছাড়াও প্রাকৃতিক বড় মাছ পাওয়া যেত এখানে। কিন্তু কালক্রমে বর্তমানে চলছে দেশীয় প্রজাতির মাছের তীব্র আকাল। এখনও পদ্মা নদীতে কিছু কিছু মাছ স্বল্প পরিমানে পাওয়া যায় যার দাম ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে। পাবদা ১২ শ থেকে ১৫শ টাকা কেজি, রিঠা ১ হাজার টাকা কেজি, বাচা ৮শ থেকে ৯শ টাকা কেজি, পাঙ্গাস ৭শ টাকা কেজি, বাঘাইড় ৮শ টাকা কেজি। জেলে ও মৎস্য চাষী ও এলাকাবাসীরা অভিযোগের ভাষায় বলেন, গোদাগাড়ী মৎস্য কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কর্তব্যে অবহেলার কারণে পদ্মা নদীতে দিনে দিনে মাছের আকাল হচ্ছে জাটকা নিধন প্রতিরোধ, কারেন্ট জালের ব্যবহার তেমনভাবে বন্ধ করতে পারছেন না। মাছ চাষীরা ভাল পরামার্শও পাচ্ছে না তাদের নিকট থেকে। নদীতে অভায়াশ্রম ছিল তা এখন কার্যকারিতা নেই রহস্যজনক কারণে। পূর্বে এ সব নদী Ñনালা, খাল Ñ বিল পুকুর, ডোবাতে যে মাছ পাওয়া যেত, যা এখানকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে চলে যেত। কিন্তু এবার টানা অনাবৃষ্টি এবং উচ্চ তাপমাত্রার কারণে প্রাকৃতিক মাছ ডিম ছাড়তে না পারার কারণে গোদাগাড়ীতে দেশীয় মাছ (প্রাকৃতিক মাছ) দারুণ সংকট দেখা দিয়েছে। আর এ সংকট দূর করতে বর্তমান সরকারের মৎস্য মন্ত্রণালয় দেশব্যপি ব্যাপকহারে নদী, বিল, পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেছেন। সচেতন মহলের মতে, অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে দেশীয় মাছ ধ্বংস হওয়ার প্রধান কারণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।