Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানছড়ি ও গুইমারায় বিজয় মেলায় জুয়ার আসর অশ্লীলনৃত্য

| প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দিদারুল আলম রাজু, খাগড়াছড়ি থেকে : মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক-সংগীত-চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে বিজয়ের গৌরবগাথা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার কথা। অথচ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি ও গুইমারা উপজেলায় বিজয় মেলার নামে সগৌরবে চলছে চেতনার জমজমাট ব্যবসা। আয়োজকরা এই মেলাকে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা’ হিসেবে নামকরণ করলেও মেলায় নেই কোন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নিদর্শন। নেই চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার ছিটেফোঁটাও। তবে মেলার নামে দেখা গেছে স্বাধীন জুয়াড় আসর ও অশ্লীলনৃত্য। প্রশাসনের নাকের ডগায় দেদারসে চলছে চেতনার রমরমা বাণিজ্য। আর নির্বিকার হয়ে তা পাহারা দিচ্ছে পুলিশ।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর ও বিজয় দিবসকে উপলক্ষ্য করে জেলার পানছড়ি এবং গুইমারা উপজেলায় পক্ষকালব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে বিজয় মেলার। আর তা পরোক্ষভাবে তত্ত¡াবধান করছেন উপজেলা প্রশাসন। ১৮-ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই মেলা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার রাতে পানছড়ি উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মেলার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, মেলা প্রাঙ্গণের পূর্ব পাশের্^ খাম খেলার নামে চলছে জুয়া। কিশোর থেকে শুরু করে নানা শ্রেণী-পেশার উৎসুক খেলোয়াড় অংশ নিয়েছে তাতে। তবে এর মধ্যে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা বেশী। প্রতি মিনিটেই কয়েক হাজার টাকা পকেটে পুরছে আয়োজকরা। আর কষ্টার্জিত টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে খেলায় অংশগ্রহণকারীরা। এছাড়া মেলার মাঠের উত্তর প্রান্তে বড় প্যান্ডেল টাঙিয়ে হাউজি খেলার বন্দোবস্ত। হাজারো মানুষের অংশগ্রহণ দৃষ্টি কেড়েছে তাতে। তবে সবচে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, ভেতরে মেলার নামে সাধারণের সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজকরা, আর বাইরে বসে তা পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। এছাড়া বিক্রি হচ্ছে ‘র‌্যাফেল ড্র লটারির টিকিট’। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে বিক্রি হয় এসব টিকিট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেলা আয়োজক কমিটির একজন জানালেন, প্রতিদিন দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হচ্ছে। আর পুরস্কার বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকার মতো।
স্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, ‘বিজয় মেলা আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ের গৌরবগাথা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার কথা। তবে তা না করে আয়োজকরা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লটারি ও জুয়ার আসর বসিয়ে সাধারণের সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম উজ্জীবিত হওয়ার কথা সেখানে এই মেলা থেকে তারা অশ্লীল ও অবৈধ শিক্ষা গ্রহণ করছে।’
নামকরণ যদিও ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা’, তবে মেলা আয়োজনের ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কোন সমন্বয় করা হয়নি। এছাড়া মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সাথে পানছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে আসন দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পানছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মনিরুজ্জামান। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘শুনেছি মেলা পরিচালনা কমিটিতে আমাকে সর্বশেষ সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তাবে তাও আমি নিশ্চিত নই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, ‘মেলায় জুয়ার সংবাদ পেয়ে একবার তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি তা অব্যাহত থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ আর মেলায় জুয়ার কোন অস্তিত্ব নেই বলে জানালেন পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। এতো গেলো পানছড়ির বিজয় মেলার গৌরবগাথা। গুইমারার চিত্রও প্রায় অভিন্ন। তবে গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া এলাকায় আয়োজিত বিজয় মেলায় জুয়া ও হাউজির পাশাপাশি বাড়তি সংযোজন হলো ‘জীবন্ত পুতুল’ নৃত্য। অশালীন পোশাক পরে অশ্লীল নাচ দেখাচ্ছে যুবতীরা। আর ১’শ টাকার টিকিটে দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা। এদিকে খাগড়াছড়ি পৌরসভার আয়োজনে পৌর বাসটার্মিনাল সংলগ্ন ধানের জমিতে বিশদাকারে আয়োজন করা হয়েছে বিজয় মেলার। এই মেলা শুরু হবে ২৪-শে ডিসেম্বর। এখানেও জুয়া এবং হাউজি খেলার বন্দোবস্ত চোখে পড়েছে। এসব বিষয়ে অবগত হওয়ার পর তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিলেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম। জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছে, বিজয় মেলার নামে এসব কর্মকান্ড দৃষ্টিকটু। সচেতন সমাজ এটিকে কোনভাবেই সমর্থন করে না। অশ্লীল নৃত্য এবং জুয়া-হাউজি ছাড়াও মেলা পরিচালনা করা সম্ভব। অচিরেই এসব অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধে প্রশাসন কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ