Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অন্যের সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেয়ার অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দিদারুল আলম রাজু, খাগড়াছড়ি থেকে : কেবল বাবার নামেই মিল, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অন্যের সনদ ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নিয়েছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়নের গৌরাঙ্গপাড়ার বাসিন্দা চাঁন মিয়ার ছেলে মো. ফরহাদ আলী। এমন অভিযোগ এনে গত মাসের ২২ তারিখে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
সম্প্রীতি রাজস্ব খাতে পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ২৯৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরমধ্যে ২৫১ জন বিভিন্ন কোটায় এবং ৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পায়। এতে সন্তান সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পান ফরহাদ আলী (রোল নং ৯৫০)।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তবলছড়ি ইউনিয়ন কমান্ডার মো. ওহাব মিয়ার লিখিত অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়, ফরহাদ আলী চাকুরি নিয়েছেন চাঁন মিয়া নামে যশোরের এক মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ ব্যবহার করে। তবে ফরহাদের পিতা চাঁন মিয়া মুক্তিযোদ্ধা নন। চাকরির ক্ষেত্রে যে সনদ ব্যবহার করা হয়েছে তাতে চাঁন মিয়া, পিতা- গণি মিয়া দেখানো হয়েছে। তবে ফরহাদের পিতা চাঁন মিয়ার পিতার নাম নছিমুদ্দিন।
অভিযোগের সূত্র ধরে ওই এলাকার ভোটার তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার ২নং তবলছড়ি ইউনিয়নের ১৮৪নং বড়বিল গৌরাঙ্গপাড়ার ২৯৩নং ক্রমিকের ভোটার (৪৬০৪০২৪৬৩৯৬২) হলেন ফরহাদের পিতা চাঁন মিয়া। যেখানে চাঁন মিয়ার পিতার নাম রয়েছে ‘নছিমুদ্দিন’। অথচ ফরহাদ চাকরি নেন চাঁন মিয়া, পিতা- গণি মিয়া নামের এক মুক্তিযোদ্ধার সনদে।
তবে অন্যের সনদে চাকরি নেয়ার অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করলেন সহকারী শিক্ষক ফরহাদ আলী। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে তিনি বলেন, আমার পিতা চাঁন মিয়ার ভোটার আইডি কার্ডে আমার দাদার নামটি ভুল রয়েছে। এবং তা সংশোধনীর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদনও করা আছে। তবে চাঁন মিয়া যুদ্ধকালীন সময়ে কোন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এমন প্রশ্নে চটে ওঠেন ফরহাদ। রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘আপনার কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? কৈফিয়ত দেবো না, আপনি যা মনে চায় তাই লিখেন।’
এর আগে নভেম্বর মাসের ৭ তারিখ ‘অন্যের সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দুই বোন প্রাইমারী শিক্ষক!’ শিরোনামে ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একই উপজেলার ফুল বানু (রোল নং ৮৬৩) ও পারুল আক্তার শ্রাবন্তী (রোল নং ৯২৮) নামে আপন দুই বোনও নিয়োগ পায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। এরা উভয়েই আব্দুল রহমান নামে এক মৃত মুক্তিযোদ্ধার কন্যার ঘরের নাতনী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। অথচ ভোটার তালিকা ঘেঁটে দেখা যায় তাদের মাতা জুলেখা খাতুনের পিতার নাম মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক।
এদিকে তাদের বিরুদ্ধে ইনকিলাবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কাগজপত্র সংশোধনে বেশ দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ওই দুই বোন। বিভিন্ন মহলে চালিয়ে যাচ্ছেন জোর তদবির। এ প্রসঙ্গে আর কোনো প্রতিবেদন না করার অনুরোধ নিয়ে প্রতিবেদকের কাছেও এসেছিলেন দু’বোন।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির ক্ষেত্রে সম্পর্ক সনদ প্রত্যয়ন করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তবে তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের বলেন, ফুলবানু, পারুল এবং ফরহাদ মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশ কিনা আমার জানা নেই। আর এদের কাউকেই আমি কোনো সম্পর্ক সনদ প্রত্যয়ন দেইনি।
এসব বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, অভিযোগ প্রসঙ্গে তদন্ত চলছে। সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ