Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটের ছয় আসনে ঝুঁকিতে আ.লীগ ও শরিক দলের এমপিরা

সিলেটের ছয় আসনে ঝুঁকিতে আ.লীগ ও শরিক দলের এমপিরা

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দাপুটে ভ‚মিকায় নতুনরা : মনোনয়ন নিশ্চিতে চলছে জোর লবিং
বহুল প্রত্যাশিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরব মাঠ-হাট। ডিজিটাল দুনিয়ার কল্পনাতীত ছোঁয়ায় নির্বাচনী আবহে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এবার। হরদম নতুন নতুন তথ্যনির্ভর আলোচনাও জমছে বেশ। ইনফরমেশন এখন সবখানে, প্রায় সব জনমানুষেও। তথ্যের বরাতেই চলছে রাজনীতিক আলাপ-আলোচনা। বিশেষ করে প্রার্থীদের ইতিবাচন বা নেতিবাচক তৎপরতা ভোটারদের নখদর্পণে। নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে এ আলোচনা হটকেক এখন। আলোচনার মধ্যে দিয়ে উঠে আসছে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের ছয়টি আসনে আ.লীগ ও শরিক দল এমপিদের ঝুঁকির চিত্র। এমপিদের একটি অংশ দল ও সরকারের উঁচু অবস্থানে। তাদের নিয়েই আলোচনা এখন নিজ দল, বিরোধীদলসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। একই সাথে তাদের টপকিয়ে দাপুটে ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন নতুনরা। বিরোধী দল তথা বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন ভোট রাজনীতির কাজ। মাঠে তাদের আনাগোনা উল্লেখ্যযোগ্য না হলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দল ও বিভিন্ন স্তরের নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলছেন। তাদের প্রার্থীরা প্রতিটি আসনে একাধিক। জাপার দুইজন এমপি রয়েছেন সিলেটে। তারাও বসে নেই। আসন সংখ্যা নতুন করে বাড়াতে না পারলেও দুটি আসন দখলে রাখতে দৃঢ় প্রত্যয়ী তারা। জামায়াতের ভোটব্যাংক থাকলেও প্রকাশ্যে মাঠে নেই প্রার্থী। দলীয় গন্ডিতে প্রার্থিতার জানান দিয়ে, নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নিদের্শনা দিয়েছেন নেতাকর্মীদের।
সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা যায়, আগামী এপ্রিলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে এমনটি মাথায় রেখে কর্মমূখর এখন ভোট রাজনীতির মাঠে আ.লীগের প্রার্থীরা। বিরোধীদলকে তেমন পাত্তা না দিলেও দলের এমপিদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেই মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তারা। একই সাথে কেন্দ্রের নজরে পড়তে চালিয়ে যাচ্ছেন লবিং। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সোর্স মাধ্যমে মনোনয়ন নিশ্চিতে মরিয়াও তারা। সেই সাথে বিভিন্ন ব্যর্থতাও বির্তকিত কর্মকান্ডের আদ্যোপান্ত তুলে ধরে প্রমাণ করতে চাইছেন, এমপিরা যে জনবিচ্ছিন্ন ও দলবিচ্ছিন্ন। নতুন মনোয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় বলয়ের সাথে মিলিয়ে সাধারণ ভোটারদের নিয়ে উঠান বৈঠকসহ সভা-সামবেশ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের অনুসারীরা কৌশলী প্রচারণায় ব্যস্ত। নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দাপটে, এখন জনমূখী হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এমপিরা।
সিলেট-১ আসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আবার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোপূর্বে নিজে নির্বাচন না করার কথা বলে তার সহোদর ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক প্রতিনিধি ড এ কে আবদুল মোমেনকে মাঠে নামিয়েছিলেন তিনি। তারপর আিবার নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় চলে আসনে মন্ত্রী মুহিত। মুহিত-মোমেনকে মাঠে রেখেই এ আসনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন আ.লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এসব কিছু ছাপিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন। আ.লীগ ঘরাণার এই সাবেক আমলা সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হলে, নতুন মাত্রায় পূর্ণ হতে পারে সিলেট আ.লীগ। নির্বাচন এলেই বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাম চলে আসে প্রার্থিতার তালিকায়, একই সাথে জাপা চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের নামও। এরশাদ বিগত সময়ে সিলেটে কোনো সভা-সমাবেশে যোগ দিলেই সিলেটকে সেকেন্ড হোম ঘোষণা দিয়ে, নির্বাচনের খায়েশ তুলে ধরতেন। সে কারণে মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় থাকেন তিনি। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। এর মধ্যে আরেকটি নাম দলের নেতাকর্মীদের মন মস্তিষ্কে জোর কদমে বইছে, তিনি হলেন তারেক রহমানের সহধর্মিণী জোবেদা রহমান। শেষ অবধি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে তার অভিষেক ঘটলে সিলেটের একটি বনেদী পরিবারের মেয়ে হিসেবে তার বিকাশ ও প্রকাশ হতে পারে অনন্য।
সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন সাবেক এমপি ও জেলা আ.লীগের সেক্রেটারি শফিকুর রহমান চৌধুরী। একই সাথে যুক্তরাজ্য আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দুই চৌধুরীর মনোনয়ন দৌড়ে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন জাতীয় পাটির প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা পরস্পর সমঝোতায় পৌঁছলে এ আসনটি বঞ্চিত হতে পারে জাপা। গুরু শিষ্যের ঠান্ডা লড়াইর ইতি ঘটলে আ.লীগই থাকবে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতায়। বাস্তবতার ভিন্ন হলে ‘আমিও নাই তুমিও নাই’ হয়ে জাপার ঘরে উঠবে মনোনয়ন। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা। এ আসনে হেভিয়েট প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত তিনি।
সিলেট-৩ আসনে নির্বাচন করতে চান মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপি। তাকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে তৎপর রয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু জাহিদ। একই সাথে মাঠে তৎপর যুক্তরাজ্য আ.লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব। আবু জাহিদ ও হাবিব ভোট রাজনীতির মাঠে ব্যাপক তৎপর। তাদের দৌড়ের সাথে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি। জাহিদ-হাবিব এমপির বিরুদ্ধে একাট্টা। তাদের কারণে কোণঠাসা বলা যায় তিনি। রাজনীতি ও রাজনীতিকদের হাতে নিয়েই এমপিকে চাপে রেখেছেন তারা। প্রায় প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ উঠান বৈঠক করে করছেন জাহিদ-হাবিব। বৈঠকগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীর পাশপাশি সাধারণ ভোটারদের সমাগমও ব্যাপক। যে কারণে এ দুই প্রার্থিমুখী হয়ে উঠছে তৃণমূল আ.লীগ। এমনকি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কোনোভাবে দলীয় প্রতীক নিশ্চিত করলেও, এদের যেকেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই কঠিন হিসাব-নিকাশের মধ্যে রয়েছে সিলেট-৩ আসনের আ.লীগের প্রার্থিতা। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নাম রয়েছেন একাধিক। এদের মধ্যে সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব উছমান আলী চেয়ারম্যান, মহানগর জাতীয় পার্টির নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হাই কাইয়ুম।
সিলেট-৪ আসনে পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইমরান আহমদই ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের প্রার্থী। এ ছাড়া জেলা আ.লীগের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ ফজলুল হক ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফারুক আহমদ। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক আহŸায়ক অ্যাডভোকেট নূরুল হক, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান।
সিলেট-৫ আসনে জোটকে ছাড় দিতে নারাজ ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ। গত নির্বাচনে মহাজোটের বলি হয়ে এ আসনটি হাত ছাড়া হয় তাদের। সেখানে বাই চান্স এমপি হয়ে যান জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন। এবার আ.লীগের মনোনয়নযুদ্ধে মাঠে তৎপর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, সিলেট বিভাগীয় আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও রমনা শাহবাগ আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল মুনির চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা আবদুল মুমিন চৌধুরী। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেনÑ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন (চাকসু মামুন) ও খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর ভাই কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। জামায়াতের সাবেক এমপি ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর নামও আলোচিত হচ্ছে।
সিলেট-৬ আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। যদিও প্রার্থীর দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। বিএনপির প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ। এদের মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি ফয়সাল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাওলানা রশিদ আহমদ ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী। তাদের মধ্যে আরেক জনের নাম আলোচিত হয়ে উঠেছে তিনি হলেন- সাবেক এমপি ও দেশের অন্যতম ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়া। ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ম্ওালানা আব্দুর রকিব, জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা হাবিবুর রহমান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ