Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিলে অনিয়ম

| প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

২০ হাজার শ্রমিক পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : এক সময়ের এশিয়ার বিখ্যাত চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিলস লি: (কেপিএম) দেশীয় উৎপাদিত কাঁচামাল বাঁশ-গাছ সংগ্রহ না করায় না করায় ২০ হাজার শ্রমিক পরিবার মানবেতর দিন যাপন করছেন। কেপিএমের ইজারাকৃত বাগান থেকে সংগৃহীত প্রায় ৮-৯ লাখ বাঁশ গত সাত মাস ধরে কাপ্তাই জেডিঘাট ও মিল গুদামে ১২-১৫ হাজার মে.টন চিপস (মÐ) মজুদ রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা। সংগৃহীত বাঁশ কেপিএম সংগৃহিত না করায় রোদে পুড়ে, ঝড়ে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিদেশি পাল্প ও ছেড়া কাগজ দিয়ে মিলের উৎপাদন কোনমতে চালু রাখা হয়েছে। দেশীয় কাঁচামাল বাঁশ ও নরমকাঠ দিয়ে উন্নতমানের কাগজ উৎপাদন হয়। বিদেশি পাল্প এর পরিবর্তে দেশীয় পাল্প দিয়ে কাগজ উৎপাদন করলে লাখ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে।
কেপিএমের শ্রমিকরা জানান, কাপ্তাই জেডিঘাটে প্রতি মঙ্গলবার খোলা বাজারে বাঁশ বিক্রি হয়। হরিণা, কাঁচালং, বাঘাইরহাট, দুরছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ভাসিয়ে হাটবারের দিন প্রায় চার-পাঁচ লাখ বাঁশ পরিবহন করে আনা হয়। ৮০ হাজার থেকে এক লাখ মিতিঙ্গা বাঁশ খোলা বাজারে বিক্রি হলেও বাকি বাঁশ কাপ্তাই হ্রদে মজুদ থেকে যাচ্ছে।
খোলাবাজারে একটি মিতিঙ্গা বাঁশের দাম ৩০ টাকা। একটি বাঁশের ওজন সাত কেজি। এক কেজি বাঁশের দাম হচ্ছে চার টাকা ২৮ পয়সা। এক হাজার কেজি সমান ১টন বাঁশ ক্রয়ে খরচ পড়ে চার হাজার ২৮০ টাকা। দেশীয় উৎপাদিত চার-পাঁচ টন বাঁশ-নরমকাঠ দিয়ে এক টন পাল্প তৈরি হয়। যার মূল্য ১৭ হাজার ১২০ টাকা। কস্টিক ও অন্যান্য কেমিক্যাল সংমিশ্রণে আরো ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। সর্বমোট দেশীয় কাঁচামাল বাঁশ ও নরমকাঠ দিয়ে এক টন পাল্প তৈরিতে বায়ান্ন হাজার ১২০ টাকা খরচ পড়ছে। বর্তমানে কারখানায় প্রতি টন বিদেশি পাল্প ক্রয় করতে হচ্ছে ৭০-৭৫ হাজার টাকা। দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরিকৃত কাগজ টেকসই এবং প্রতিটনে ২২ হাজার ৮৮০ টাকা সাশ্রয় সম্ভব। এখাতে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে। গত দুই বছর যাবত দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে কাগজ উৎপাদন না করায় কেপিএমের আর্থিক ক্ষতি ও নিযুক্ত ঠিকাদার, হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। কেপিএম চলতি বছর আগস্ট মাসে ২০ হাজার টন কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য টেন্ডার আহŸান করা হয়। একজন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করলেও কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। গত দুই বছর যাবত বাঁশ ও পাল্পউড সংগ্রহের জন্য আর কোনো টেন্ডার আহŸান করা হয়নি।
অন্য একটি সূত্র জানায়, কারখানার নিজস্ব গুদামে ১২-১৫ হাজার মে.টন সমান প্রায় ১০ কোটি টাকার চিপস (মÐ) মজুদ রয়েছে। মিলের মেশিনারি নষ্ট ও কেমিক্যালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে চিপস দিয়ে কাগজ উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। মিলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে এসব মেশিনে দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে কাগজ উৎপাদন করা সম্ভব। এসব মেশিনে উৎপাদন না করায় যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন মেশিনারি নষ্ট ও অকেজো হয়ে পড়ছে। ফলে মিলের কোটি কোটি টাকার মেশিন ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মিলের নিজস্ব ক‚প মাচালং, কাচালং, মারিশ্যা, বাঘাইহাট, মাইনি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রাইখিয়ং, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি সোয়ালাখ হেক্টর এলাকায় কাঁচামাল বাঁশ, নরমকাঠ (পাল্পউড) সংগ্রহ ও কার্যক্রম প্রক্রিয়া না থাকায় ভ‚মিদস্যুরা মূল্যবান জায়গা দখলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স¤প্রতি মারিশ্যা এলাকায় মিলের জায়গা দখলে নেয়ার ঘটনায় এক ভ‚মিদস্যুর বিরুদ্ধে কেপিএম মামলা করেছে। কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম এম কাদের বেদখলে যাওয়া ভ‚মিতে একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ