Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বনি¤œদের বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেয়ার গোপন প্রক্রিয়া ফাঁস

সওজের ৮০ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে তোলপাড়

| প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো: শামসুল আলম খান : ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) প্রায় ৮০ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে কানাকানি শুরু হয়েছে। অদৃশ্য নিয়মের ধোঁয়া তুলে রহস্যজনক কারণে ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা সড়ক উন্নয়নের এ টেন্ডারের কার্যাদেশ র‌্যাব আরসি প্রাইভেট লিমিটেড, মেসার্স রিজভী কনস্ট্রাকশন ও রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের (জয়েন্ট ভেনচার) নামক সর্বোচ্চ দরদাতা একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার গোপন প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ প্রক্রিয়া ফাঁস হয়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছে তোলপাড়। দেশের বিভিন্ন মেঘা প্রকল্পে অংশ নেয়া আরো তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনি¤œ দরদাতা হলেও তাদের আমলে নিচ্ছে না স্থানীয় সওজ। এতে করে সরকারের প্রায় ৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতি হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে তারা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা যায়, গত ৩০ অক্টোবর ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা-সুনামগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য একটি দরপত্র আহবান করে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এ কাজে ব্যয় ধরা হয় ৮০ কোটি ২৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৯ টাকা। পরে র‌্যাব আরসি প্রাইভেট লিমিটেড, মেসার্স রিজভী কনস্ট্রাকশন ও রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের (জয়েন্ট ভেনচার) নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৭৯ কোটি ৬০ লাখ ৭ হাজার ৫’শ টাকার দরপত্র জমা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়।
কিন্তু কনকর্ড প্রগতি কনষ্ট্রাকশন লিমিটেড ও মনিকা লিমিটেড (জয়েন্ট ভেনচার) ৭২ কোটি ২৩ লাখ ৮২ হাজার ২৯৯.২৬৭ টাকায় দরপত্র জমা দেয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, মেসার্স ভাওয়াল কনষ্ট্রাকশন, এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও তমা-এসইএল (জয়েন্ট ভেনচার) একই টাকার সর্বনি¤œ দরপত্র জমা দেয়।
অভিযোগ উঠেছে, সর্বনি¤œ দরদাতা হয়েও দেশের এ তিনটি নামিদামি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অদৃশ্য নিয়ম ও খোঁড়া যুক্তিতে বাতিল করা হয়েছে। আর তাদের বাতিল করতে দশমিকের পর ৩ ঘরকে গণ্য না করে অযৌক্তিক এক নিয়ম তৈরি করা হয়েছে।
সর্বনি¤œ দরদাতা তমা-এসইএল (জয়েন্ট ভেনচার) প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি কাওসার আহমেদ অভিযোগ করেন, সওজ কর্তৃপক্ষ আমাদের দেয়া দর বিবেচনা করেনি। তারা সর্বোচ্চ দর দেয়া কম যোগ্যতাসম্পন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ফলে সরকারের প্রায় ৬ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার ৭০৬ টাকা অতিরিক্ত ক্ষতি হবার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ দরপত্রে অংশগ্রহণকারী সর্বনি¤œ দরদাতা আরেকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, আগে দরপত্রে দশমিকের পর ৩ ঘরকে ধরা হতো। কিন্তু এবার এটি ধরা হয়নি। ফলে সর্বনি¤œ দরদাতা হয়েও ভৌতিক এক নিয়মে আমাদের বাতিল করা হয়েছে। তারা আমাদের তাদের দাবি করা নিয়মের কথা আগে জানায়নি।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ একতরফাভাবে সওজ কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতেই তারা এমন ছলচাতুরি শুরু করেছে বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ টেন্ডার সাবমিশন হয়েছে। এখনো কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেই কাজ দেয়া হয়নি। আমরা যাচাই-বাছাই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
তবে সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার গোপন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ইজিপি’র নিয়মের কারণেই আমরা দশমিকের পর ৩ ঘরকে বিবেচনা করিনি। এ সংক্রান্ত নিয়ম পিপিআরএ উল্লেখ আছে। চাইলে ঠিকাদাররা দেখতে পারেন।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ