বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বরিশাল ব্যুরো : বরিশাল মহিলা কলেজ সহ মহানগরীর ৩টি সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীর বাছাই পরীক্ষার ফলাফলে বিষ্ময়কর বিপর্যয়ে চরম হতাশ অভিভাবক মহল। সরকারী মহিলা কলেজ, সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ও সরকারী বরিশাল কলেজের আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক-এর বাছনিক পরীক্ষায় পাশের হার মাত্র ৪০ ভাগ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বরিশাল মহানগরীর শিক্ষার মান যে ক্রমবনতিশীল তার একটি জলন্ত প্রমাণ উচ্চ মাধ্যমিকের এবারের বাছাই পরীক্ষায় এ ফলাফল বিপর্যয়। এ মন্তব্য নগরীরর বিশষ্ট শিক্ষাবীদদের। ফলাফল বিপর্যয়ের এ তিনটি সরকারী কলেজ হচ্ছে- সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ও সরকারি বরিশাল কলেজ।
গত কয়েক বছর ধরে বরিশালে শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে বরিশাল জেলার অবস্থান নিচের দিকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোচিং বাণিজ্য অনেকটা ‘মুখস্থ বিদ্যা শিল্প’র রূপ নিয়েছে। উপরন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকমন্ডলী ছাত্র-ছাত্রীদের যথেষ্ঠ সময় দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রীই সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীরের রাস্তা-ঘাট, পার্ক ও নতুন গজিয়ে ওঠা কতিপয় ‘মিনি চাইনিজ’ রেষ্টুরেন্টগুলোতে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা ও মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বলেও অভিযোগ রেেয়ছে। অনেক অভিবাবকই ছেলে-মেয়েদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেই দায়িত্ব শেষ করছেন। অথচ তাদের সন্তানেরা গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডাবাজীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ফলে বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রীর লেখা পড়াই শিকেয় উঠেছে।
এ নগরীর বেশীরভাগ সরকারীÑবেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৮ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার চলমান ফরম পূরণের আগে বাছনিক পরীক্ষার ফলাফলে চরম হতাশ অভিবাবক মহলও। গণহারে ফেল করায় ফের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘বিশেষ পরীক্ষা’ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অথচ এসএসসিতে জিপিএ-৪.৫ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করা শিক্ষার্থীদেরকেই নগরীর ঐ তিনটি সরকারী কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল। আর বিশেষ পরীক্ষা গ্রহণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বিষয়ে ২শ’ থেকে তিনশ’ টাকা করে কথিত ফি নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে বাছনিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের গণহারে ফেল করায় সরকারি এই কলেজগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে অভিভাবক মহলেও নানামুখী প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর এবারের বাছনিক পরীক্ষায় ১ হাজার ১৩৮ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে মাত্র ২৫৬ জন। পাশের হার ২৮ ভাগ। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৪২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১১৬ জন। পাশের হার মাত্র ২৭ ভাগ। মানবিক বিভাগে ৪২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১১৬ জন। পাশের হার মাত্র ২৫ ভাগ। বাণিজ্য বিভাগে ২৮৮ জনের মধ্যে পাশ করেছে ২৪ জন। পাশের হার মাত্র ৮.৩৩ ভাগ। ফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে বাছনিক পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক সহকারী অধ্যাপক জিএম আবুল বাশার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা উচ্চমানের হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আশানুরূপ পাস করতে পারেনি। ইংরেজী বিষয় সৃজনশীল হওয়ায় পরীক্ষার ফলাফল বেশী খারাপ হয়েছে।
তবে সরকারী মহিলা কলেজের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্তরা এ কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। কলেজে নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিকের বাছনিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি। ২০১৮ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও শঙ্কিত বেশীরভাগ অভিভাবক। এ প্রসঙ্গে সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আ: মোতালেব হাওলাদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইংরেজী বিষয়ে ফল বেশি খারাপ হয়েছে। তবে অনুর্ত্তীনদের ফের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারী বরিশাল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর মোঃ অলিউল ইসলাম জানিয়েছেন, তার কলেজে তিন বিভাগ থেকে মোট ৪৫৮ জন পরীক্ষা দিয়ে ৪০ ভাগ পাশ করেছে। পাশের হার বিজ্ঞান বিভাগে ৬১ ভাগ, মানবিক বিভাগে ৩৩ ভাগ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৬ ভাগ। তবে প্রিন্সিপাল অলিউল ইসলাম স্বীকার করেন, বাছনিক পরীক্ষায় পাশের হার সামান্য। এর কারণ হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের অমনোযোগিতা পাশাপাশি অভিভাবকদের অসচেতনতাকেও দায়ী করেছেন।
সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের বাছনিক পরীক্ষা কমিটির আহবায়ক সহযোগী অধ্যাপক সোহরাব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ৯০০ শতাধিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪০ ভাগ পাশ করেছে। ইংরেজী বিষয়ে ফেল করেছে ৭০ ভাগ। তিনি বলেন, বাছনিক পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের পর অভিভাবকদের ডেকে তাদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষ মতবিনিময় করেছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর বিপ্লব কুমার ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় ভাল করার জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা দরকার। শিক্ষা বোর্ড এজন্য প্রশ্নব্যাংক করার চিন্তাভাবনা করছে বলেও জানান তিনি।
তবে বরিশাল মহানগরীরর শিক্ষার এ বেহাল দশা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।