Inqilab Logo

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নগরজুড়ে উৎসবের আমেজ আছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও

কাল রসিক নির্বাচন : সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

| প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : সকল ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ। কাল বহুল প্রতিক্ষীত রংপুর সিটি কপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে নগর জুড়ে বয়ে চলেছে উৎসবের আমেজ। পুরনো পোস্টার ফেলে দিয়ে নতুন পোস্টার লাগানো হয়েছে ভোট কেন্দ্রের আশ-পাশসহ গোটা নগরীতে। এ যেন এক নতুন সাজে সেজেছে রংপুর মহানগরী। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থরা টেনশনে থাকলেও ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন ভোটাররা। পাশাপাশি কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝেও আছেন ভোটাররা। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী গত রাত ১২টা থেকেই সকল ধরণের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রচারণা ও গণসংযোগ হিসেবে সকল প্রার্থীই গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ শেষে নির্বাচনী কার্যালয়ে ফিরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বৈঠকেই রাত ভোর হয়ে যায় তাদের। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে বেশি। মেয়র প্রার্থীদের তাদের সাথে দলীয় নেতাকর্মীরাও নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন গত কয়েক দিন ধরে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীদের সাথে প্রায় ৮/১০ দিন ধরে গণসংযোগ আর প্রচারণায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় হাই প্রোফাইলের নেতারা। ৩ দলের এসব হাই প্রোফাইলের নেতাদের পদচারণায় একদিকে যেমন মুখরিত থাকে গোটা নগরী, তেমনি অন্যদিকে তাদের কাছে পেয়ে নব উদ্যমে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করেন তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। শেষ মুহূর্তের প্রচারণা আর গণসংযোগে দলীয় প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ছুটে বেড়ান নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মত এই নির্বাচনে প্রধান তিন দলই নিজ নিজ প্রার্থীদের পক্ষে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যান তারা। এসব হেভিওয়েট আর হাই প্রোফাইলের নেতৃবৃৃন্দের পদচারণা আর গনসংযোগে নতুন উত্তাপের ছোঁয়া লেগে যায় ভোটের হাওয়ায়। তাদের কাছে পেয়ে প্রার্থীরাও তাদের ক্লান্তি ভুলে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ান দিন রাত। পক্ষকালের বিরামহীন গণসংযোগ আর প্রচার প্রচারণা শেষ করে প্রার্থীরা এখন ভোটের হিসেব কষছেন। কোন এলাকায় কি অবস্থা, কি ধরণের সমস্যা সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টায় উঠে-পড়ে লেগেছেন। সেই সাথে ভোটের দিনের কর্মকান্ড নিয়েও কর্মী-সমর্থকদের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।
একটা রাতের পর কাল ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কাঙ্খিত রসিক নির্বাচন। সে হিসেবে ইসির নির্দেশ মোতাবেক গত মধ্যরাত থেকেই শেষ হয়ে গেছে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। গতকালই বহিরাগতদের নগর ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। সে অনুপাতে সোমবার রাতেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুর থেকে চলে গেছেন। তবে আওয়ামলীগ ও জাতীয় পার্টির বেশ কিছু কেন্দ্রীয় নেতা গতকালও নির্বাচনী মাঠে ছিলেন এবং বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সভায় যোগ দেন।
এদিকে, নির্বাচন সুষ্ঠূুভাবে সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে প্রায় সকল প্রস্তুুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি পাঠানোও শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে চার স্তরের নিরাপত্তাসহ নগরজুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে কয়েকদিন ধরেই অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সব নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল দিনভর শেষ সময়ের প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন প্রার্থী-সমর্থকরা। শেষ দিন হিসেবে গতকাল সকাল থেকেই গনসংযোগে বেরিয়ে যান প্রার্থীরা।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সিটির ভোটার নয়, এমন বহিরাগতদের সিটির বাইরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হোটেল মোটেলে যাতে কোন বহিরাগত রাতযাপন করতে না পারে সেজন্য সতর্ক করা হয়েছে। ভোটের আগে-পরে এমনকি ভোটের দিন যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে, সেজন্য তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের খুঁজছে পুলিশ। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য নগরীকে চারটি ভাগে ভাগ করে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে নম্বরবিহীন দুইশ’ মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, আমরা চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। এজন্য বৃহৎ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার রসিক নির্বাচনে ১শ’ ৯৩টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯শ’ ৯৪ জন ভোটার ভোট দেবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬শ’ ৩৮ জন। মোট ১শ’ ৯৩ কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে।
এদিকে, গতকালও নগরীর বিভিন্ন স্থানে মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে গনসংযোগ ও নির্বাচনী পথসভা করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপি প্রার্থী কাওছার জামান বাবলার পক্ষে গতকাল বিএনপির তেমন কোন হাই প্রোফাইলের নেতা না থাকলেও বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগকালে তারা বলেন-বলেছেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে তাদের পোলিং এজেন্টদের হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে ভোট দিয়ে লাভ হবে না। এমনকি তাদের নির্ধারিত পথসভার জায়গায় আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। তারা এসব অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন উল্লেখ করে ২১ ডিসেম্বর ভোটের দিন যেন কেন্দ্র, বুথ দখল না হয় সেজন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের শনিবার রংপুর আসেন। রংপুরে আসার পর থেকেই তিনি নগরীর বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সভা ও গণসংযোগ করে চলেছেন। আর সোমবার দুপুরে আসেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি কোন নির্বাচনী সভা-সমাবেশে না গিয়ে তার নিজ বাসভবনে ‘পল্লী নিবাস’ এ অবস্থান করে নির্বাচন মনিটরিং করছেন। এছাড়াও রংপুরে আছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এলজিআরইডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলুসহ জাতীয় পার্টির প্রায় ডজন খানেক নেতা। গতকালও তারা দিনভর নগরীর বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সভা এবং গণসংযোগ করেন।
রংপুরের মানুষ শান্তিপ্রিয়, যে কোন পেশি শক্তিকে তারা প্রতিহত করবে : জিএম কাদের
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থানে লাঙ্গলের নির্বাচনী সভায় বলেছেন-রংপুরের মানুষ টাকার কাছে বিবেক বিক্রি করে ভোট দেয় না। তারা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। কোন পেশি শক্তির কাছে মাথা নোয়ায় না। বরং পেশি শক্তিকে তারা শক্তহাতে প্রতিহত করে এবং করবে।
তিনি গতকাল বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী পথসভায় এসব কথা বলেন। এসময় তার সাথে ছিলেন জাতীয় পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মহানগর জাতীয় পার্টির সেক্রেটারী এসএম ইয়াসির, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর যুব সংহতির সভাপতি হাজি আব্দুর রাজ্জাক, নাজিমুজ্জামান নাজিম, মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক লোকমান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম, মহানগর ছাত্র সমাজের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত আসিফ, সেক্রেটারী আমিনুল ইসলাম ছোট,সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আল আমিন সুমন প্রমুখ।
কালোটাকা এবং পেশিশক্তির বিষয়ে জিএম কাদের বলেন, রংপুরের মানুষের টাকার কাছে বিবেক বিক্রি করে না। তারা বিবেক বিক্রি করে ভোটও দিবে না। তারা আজীবন অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তীর ধনুক নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরার করে বিশ্বে আন্দোলন সংগ্রামের নজির সৃষ্টি করেছে। সুতরাং কেউ যদি পেশি শক্তি ব্যবহার করে, ১ টি ভোট পেলেও পেশি শক্তি ব্যবহার করে জয়ি হতে চায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে তা প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি রংপুরের মানুষ একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহনযোগ্য পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এর সামান্য ব্যত্যয় হলে তারা বরদশাত করবে না।
বিএনপির অভিযোগ মুখস্থ কথা : আহাম্মেদ হোসেন
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে বিএনপি যে অভিযোগ তুলছে সেটা তাদের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহাম্মেদ হোসেন বলেছেন, বিএনপি হেরে গেলে কী বলবে তা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। এমন বক্তব্য তাদের মুখস্থ থাকে। আগামী ২১ ডিসেম্বর লড়াই হবে আসল আর নকলের। আমরাই আসল আর বিএনপি নকল।
তিনি সোমবার রাতে নগরীর বেতপট্টি রোড়স্থ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে সতর্ক করে নোটিশ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আহাম্মেদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে কখনই হস্তক্ষেপ করে না। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ অবাধ ও স্বাধীন। রংপুরে নৌকার জয় হলে সারাদেশ জানবে রংপুরের মানুষ শান্তির পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে। তারা পেট্রোল বোমার পক্ষে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। বিএনপি নেতারা তাদের অবস্থান জানতে পেরে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং সাফল্যেরে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে উন্নয়ন ও শান্তির এ ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে নগারবাসীর প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের শীর্ষ এ নেতা। আওয়ামীলীগের স্থানীয় স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • মাহমুদ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৪০ এএম says : 0
    আশা করি রংপুর সিটি কপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠ হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রংপুর সিটি কপোরেশন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ