Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পিইসির খাতা মূল্যায়নে জালিয়াতি রংপুরে কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ

| প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পীরগাছা (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : প্রশ্নপত্র ফাঁসের রেশ কাটতে না কাটতেই রংপুরের পীরগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ৬ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের পিইসি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে রংপুর সদরের ১২শ পরীক্ষার্থীর খাতা জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষকদের জিম্মি করে খাতায় ভুল উত্তর সংশোধন করে প্রাপ্ত নাম্বারের চেয়ে বেশি নাম্বার দিয়ে অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় এক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও বাকিদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নেয়া হয়নি অতিরিক্ত নাম্বার প্রদান করা খাতাগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা। ফলে ফলাফলে প্রভাব পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, চলতি পিইসি পরীক্ষার খাতা রংপুর জেলার মধ্যে এক উপজেলার খাতা অন্য উপজেলায় মূল্যায়ন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুর সদর উপজেলার খাতা মূল্যায়নের জন্য পীরগাছা উপজেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ খাতা মূল্যায়ন করেন। খাতা মূল্যায়নের সময় প্রধান পরীক্ষকদের জিম্মি করে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীর খাতার মধ্যে ১২শ শিক্ষার্থীরখাতা বাছাই করা হয়। পরে খাতাগুলি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা নিজেরাই উত্তর পত্রের ভুল সংশোধন করে পরীক্ষকদের নিকট থেকে নাম্বার বাড়িয়ে নেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক-উজ-জামানসহ ৬ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অসাদুপায় অবলম্বন করে অতিরিক্ত নম্বর প্রদান করেন। এতে উপজেলা শিক্ষা অফিসের ওই কর্মকর্তাগণ প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন রংপুরের বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও কিন্ডার গার্টেন। বিষয়টি জানাজানি হলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে।
এঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মাহবুব এলাহী স্বাক্ষরিত এক পত্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কাজে অসাদুপায় অবলম্বনের অভিযোগের কারণে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াৎ হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন। তাকে গত ১১ ডিসেম্বর পুণরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে সাময়িক ভাবে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াৎ হোসেন গাইবন্ধার সুন্দরগঞ্জের জাতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রাপ্ত শিবরাম আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে রংপুরের পীরগাছা উপজেলা শিক্ষা অফিসে যোগ দেন। প্রাথমিক শিক্ষায় শিবরাম আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তাই ‘শিবরাম’ নাম ব্যবহার করে রংপুরে একাধিক আবাসিক, কোচিং ও কিন্ডার গার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশির ভাগই পরিচলানা করছেন সুন্দরগঞ্জের কতিপয় ব্যক্তি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাগণ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াৎ হোসেনের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ওই সব প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এঘটনায় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াৎ হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক-উজ-জামানসহ অন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এদিকে দায়সারা ভাবে একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও প্রায় ১২শ পরীক্ষার্থীর খাতায় প্রদান করা অতিরিক্ত নাম্বার সংশোধনের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে পরীক্ষার ফলাফলে এর প্রভাব পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
সহকারী শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, বিষয়টি ডিডি স্যার তদন্ত করছেন। আপনার কিছু জানার থাকলে ওনাকে জিজ্ঞাস করেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক-উজ-জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মাহবুব এলাহী জানান, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কাজে অসাদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেনকে সাময়িক ভাবে বিভাগীয় কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এবিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ