Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওসমানীনগরে বাড়ছে চুরি ডাকাতি ছিনতাই জনমনে আতঙ্ক

| প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবুল কালাম আজাদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে : প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের ওসমানীনগরে চারদিনের ব্যবধানে আবারও প্রবাসির বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে ওসমানীনগরে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার দিবাগত রাত ৪টায় উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের বড় ইসবপুর গ্রামের প্রবাসী বদরুল ইসলামের বাড়িতে। ১৪/১৫ জনের মুখোশপরা ডাকাত দল তাদের বসত ঘরের প্রধান ফটকের স্টিলের গেইটের তালা ও দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে
জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাত ৪টায় বড় ইসবপুর গ্রামের প্রবাসী বদরুলের বাড়ির ষ্টিলের গেইট কেটে এবং দরজা ভেঙে ডাকাত দল প্রবেশ করে। ঘরের ভিতর বদরুল বৃদ্ধ মা আসিয়া খাতুনসহ দুইজনকে অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে সাত ভরি স্বর্ণসহ নগদ টাকা নিয়ে যায়। খবর শুনে ওসমানীনগর থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে থানার ওসি মো: সহিদ উল্যা ঘটনাটি ডাকাতি নয় বলে জানান।
তবে আসিয়া বেগম বলেন, আমার বাড়ি ডাকাতি হয়েছে এবং সাত ভরি স্বর্নসহ আরো মালামাল নিয়ে গেছে।
এদিকে একের পর এক চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইর ঘটনায় আইন শৃংখলার অবনতি হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার গভীর রাতে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের জায়ফরপুর গ্রামের মৃত আব্দুন নূর গজনবীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, মূল্যবান সামগ্রীসহ ১২ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এছাড়া গত ৩ মাসে এ উপজেলায় একাধিক ডাকাতি, চুরী ও ছিনতাইর ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১১টি ঘটনা ঘটে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্যস্ততম এলাকা ঘিরে। সরকারী বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে সংঘটিত এসব কর্মকাÐে জড়িতদের এখন পর্যন্ত সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। মালামাল উদ্ধারেও কোন অগ্রগতি নেই বলে অনেকে জানান।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর রাতে উপজেলার দয়ামীর ইউপি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি হয়। ২০ নভেম্বর রাতে তাজপুর ইউপির বরায়া মোল্লাপাড়া গ্রামের দবির মিয়ার বসত ঘরে গেইটের তালা ভেঙে ডাকাতরা প্রবেশ করে। গৃহকর্তা হাত পা বেঁধে পরিবারের লোজনদের আগ্নেয়াস্ত্রেয় ভয় দেখিয়ে স্বর্ণা অলংকার, নগদ টাকাসহ কয়েক লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
১৮ নভেম্বর শনিবার রাতে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের কুরুয়া এলাকায় প্রাণ কোম্পানির গাড়ি আটকে চালক ইমরুল ইসলামকে ছুরিকাহত করে করে একদল দুর্বৃত্ত। ১৮ নভেম্বর রাতে উপজেলার সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন সিলমানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ চুরির ঘটনাটি ঘটেছে। ৭ নভেম্বর রাতে সাদীপুর ইউনিয়নের কাগজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ম বারের মতো চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ল²ী রায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করে। ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় গোয়ালাবাজর-ইলাশপুর সড়কের ইটভাটা এলাকায় মুখোশধারী ৩জন এক মোটর সাইকেল আরোহীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সাথে ১৭হাজার টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়।
১৫ অক্টোবর ওসমানীনগরের তেরহাতি গ্রামে অঞ্জন দাশের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরেরা তার বসত ঘরের ভেন্টিল ভেঙে চুরেরা ঘরে প্রবেশ করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল সেট নিয়ে যায়। ৩০ অক্টোবর দুপুরে ওসমানীনগরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে যাত্রীবাহী বাস আটকে শানুর মিয়া (৩০) নামের প্রবাসীর ৩৭ হাজার টাকা ছিনতাই করা হয়। প্রবাসী উপজেলার উছমানপুর ইউপির ইছামতি গ্রামের আব্দুল হকের প্রবাসী পুত্র শানুর মিয়া গোয়ালাবাজারের একটি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে একটি লোকাল বাসে বাড়ি ফিরছিলেন। ডিবি পরিচয় দিয়ে শানুর মিয়াকে প্রাইভেটকারে তুলে সিলেট শহরের দিকে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে শানুর মিয়াকে মারধর করে তার নিকট থাকা ৩৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে শানুর মিয়াকে তেলীবাজার বাইপাস রোডে প্রাইভেট কার থেকে ফেলে ছিনতাইকারীরা পারিয়ে যায়।
২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউপির গ্রামতলা রোডের শাহজাহান মিয়ার বাসাতে চুরি সংগঠিত হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ওসমানীনগরের সাংবাদিক জুবেল আহমদ সেকেলের বাড়ীতে চুরির ঘটনা ঘটে। চোরেরা ঘরে থাকা ১৫ ভরি স্বর্ণ, ডায়মন্ডের অলংকার, ল্যাপটপ, ট্যাবসহ প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসমানীনগরে বিকাশ পরিবেশকের ৫ লাখ টাকা ছিনতাই হয়।
৮ সেপ্টেম্বর ওসমানীনগরের কাগজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরি সংগঠিত হয়। চোরেরা বিদ্যালয়ের দরজা ভেঙে বিদ্যালয়ে অফিস ও শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে আসববাবপত্রসহ কয়েক লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
চুরি হওয়া সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্যস্থতম এলাকাগুলো। একাধিকবার এসব প্রতিষ্ঠানের মালামাল খোয়া গেলেও পুলিশের ভুমিকা জোরালো নয় বলেই মনে করছেন একাধিক সচেতন ব্যক্তি। তারা বলেন, এলাকায় রাতের বেলা পুলিশি টহল থাকলেও চোরেরা ঠিকই তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে। যা উদ্বেগ গজনক বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সহিদ উল্যা বলেন, যে সমস্ত ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে তার সাথে জড়িত ডাকাত-চোর আটক করেছি। বাকিদের চিহিৃত করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যেই এলাকার অপরাধীদের চিহ্নিত করে আটকে সক্ষম হবো। সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি বন্ধ করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ