মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
এহসান বিন মুজাহির
আমরা ছিলাম পরাধীন। আমাদের দেশকে কখনো সেন, কখনো পাল, কখনো আর্য, শক, অহম, আরাকান, পাঠান, মোগল, পর্তুগিজ, ইংরেজ এবং সবশেষে পাকিস্তানি হানাদাররা শাসন করেছে। দীর্ঘদিন ইংরেজরা আমাদের গলায় গোলামির শিকল পরিয়ে রেখেছিল, কেড়ে নিয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। আমরা পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে রচনা করেছি শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীর, নুরউদ্দিন জঙ্গীর ইতিহাস। যারা বাংলার শান্তিপ্রিয় মানুষকে পরাধীনতার আগুনে জ্বালিয়ে রেখেছিল আমরা সেই পরাধীনতার গ্লানিকে চিরতরে মুছে বাংলার বুকে স্বাধীনতার মানচিত্র আকাশে উড্ডীন করেছি। ফিরিয়ে এনেছি আমাদের স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়। বহু রক্ত দিয়ে কেনা আমাদের স্বাধীনতা। এ দেশ স্বাধীন করতে তাজা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, অজুত দেশপ্রেমিক। সারাজীবনের জন্য বিকলাঙ্গ হয়েছেন অনেকেই। ইজ্জত লুণ্ঠন হয়েছে অসংখ্য মা-বোনের। ঘরবাড়ি-ক্ষেতখামার নস্যাৎ হয়েছে অগণিত মানুষের। সাগরসম রক্তের দামে কেনা আমাদের স্বাধীনতা।
১৯৭১-এর পঁচিশ মার্চ দিবাগত রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার নিরীহ জনসাধারণের ওপর বর্বর নির্যাতন ও অমানবিক হত্যাকা- চালিয়ে ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার দামাল ছেলেরা একাত্তরের ছাব্বিশ মার্চ পাকিস্তানের অন্যায়, জুলুমের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে, নয় মাস অমিত বীর-বিক্রমে হানাদারদের সাথে সংগ্রাম করে এ দেশের আকাশে স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করে। তাই তখন থেকে ছাব্বিশ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। একাত্তরের ছাব্বিশ মার্চ আমরা পৃথিবীতে স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। ফিরিয়ে এনেছি স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা প্রত্যেক মানুষের জন্মগত অধিকার। যতদিন না মানুষের মৌলিক দাবিগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ততদিন পর্যন্ত স্বাধীনতা নিষ্ফল বলে ধর্তব্য হবে। স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছর হলো। এখনো কী আমরা পূর্ণ স্বাধীন? যে উদ্দেশ্যে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতা, তাদের উদ্দেশ্য কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? স্বাধীনতা মানে; নয় কারো গোলামি করা। নয় পরাধীনতা। স্বাধীনতার মর্ম কথা আমরা ভুলতে বসেছি। যার কারণেই আমরা পরদেশের প্রভুত্বের গোলামি শুরু করেছি। দেশে একের পর এক সরকার পরিবর্তন হলেও দেশ-জাতির ভাগ্যের উন্নতিতে আশানুরূপ ছোঁয়া লাগেনি। এখনো সোনার বাংলা পরনির্ভরশীল। প্রতিনিয়ত স্বাধীনতা হরণ হচ্ছে স্বাধীন নাগরিকদের! স্বাধীনতা, গণতন্ত্র আজ পদদলিত। গুম, হত্যা, দুর্নীতি, ইভটিজিং, চুরি-ডাকাতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ব্যাংক লোপাট, ছিনতাই, শোষণ, জুলুম অতীতের সকল রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে। বেপরওয়াভাবে বেড়ে চলেছে শোষণ। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির তকমা আমাদের জাতির ভাগ্যে লিখন হয়ে ওঠছে বারবার।
বিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসেও সা¤্রাজ্যবাদী ও কায়েমিবাদী স্বার্থপরের আচার-আচরণে জনগণের ভাগ্য আজ বিড়ম্বনার শিকার। মানবাধিকার আজ পুলিশের পায়ের নিচে পদদলিত। নব্য নাস্তিক-মুরদাতদের আস্ফালন উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। খোদাদ্রোহীরা ইসলাম, মুসলমান ও রাসূল (সা.) নিয়ে একের পর এক কুৎসা রটনায় নির্লিপ্ত। স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বনির্ভর হতে পারেনি। আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড আজ শিল্প উন্নয়ন বিশ্বের উদাহরণ। অথচ, বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল। দেশে দারিদ্র্য কমেনি, মাথাপিছু আয় বাড়েনি। গরিবের মাথা গোঁজাবার ঘর নেই। নৈতিক শিক্ষা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি খেয়ে ফেলছে আমাদের বিবেক।
স্বাধীনতার চার দশক পেরিয়ে গেল; এখনো আমরা সোনার বাংলা গড়তে পারিনি। গরিবদের ভাগ্যে উন্নতি হয়নি। দুঃখী, হতদরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারিনি। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে পারিনি। বেকারত্বের সংখ্য ক্রমাগত বেড়েই চলছে। তাদের কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা করতে পারিনি আজও।
রাজনৈতিক রেষারেষির বিষাক্ত ছোবলে দেশের জনগণ উৎকন্ঠিত। ’৭১ থেকে এ পর্যন্ত দেশের মানুষ দেখেছেন একদলীয় শাসন! দেখেছেন সামরিক শাসন! দেখেছেন স্বৈরশাসন! দেখছে ভোটারবিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন! দেখছে গণতান্ত্রিক দেশে অগণতান্ত্রিক বিচিত্র আচরণ!
আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন একটি দেশ। স্বাধীন দেশে প্রয়োজন ছিল ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, কলমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকতার অবাধ স্বাধীনতা, ইসলামী রাজনীতির স্বাধীনতা, ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের অবাধ স্বাধীনতা, গণতন্ত্র চর্চার স্বাধীনতা। কিন্তু কতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করতে পেরেছি আমরা?
স্বাধীন দেশের জনগণ আজ সরকার ও প্রশাসনের কাছে ষোল আনাই জিম্মি। এটার নাম নয়, স্বাধীনতা! এজন্যই মুক্তিযোদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল বলেছিলেন, ‘অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা’।
মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন কিসের জন্য করেছিলেন? আমরা কি পেরেছি তাদের রক্তের ইজ্জত দিতে? আমাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতার সাথে সাথে আমরা চাই আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, কলমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা।
ষ লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।