পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭১ সালে আমরা একটি গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও মুক্ত রাষ্ট্র পাবার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। সেই স্বপ্ন আজও বাস্তবায়ন হয়নি। আজকে যে দলটি (আওয়ামী লীগ) জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। আজকের মতো ১৯৭১ সালের পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের শাসনামলে কথা বললেই জেলে নেয়া হতো, গুম করা হতো। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় মহানগর নাট্যমঞ্চে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ জয়ের পর আওয়ামী লীগ যে সরকার গঠন করেছিল সেই সরকারের কাছে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ছিল অনেক। মানুষ মনে করেছিল তারা বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকারগুলোকে প্রতিষ্ঠা করবেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথকে সুগম করবে। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। আওয়ামী লীগ সেই সময়ও তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য একে একে সমস্ত অধিকারগুলোকে হরণ করে নিয়েছে। আজকের মতো তখনো রাস্তার পাশে, ক্ষেতের মাঝে, নদীর তীরে, নদীর পানিতে লাশ পড়ে থাকতো। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে অসহনীয় জীবন যাপন করতো। আজকের মতো তখনও কথা বললেই জেলে নেয়া হতো, গুম করা হতো। তিনি বলেন, আমরা যে চেতনা ও লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম এই ৪৭ বছরে তা আমরা এখনো অর্জন করতে পারেনি। দেশ তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী শাসনের যাঁতাকলে পড়েছে। যারাই ভিন্নমত পোষণ করেছে তাদের নির্মূল করে দেওয়ার জন্য কাজ করছে। তাই এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি লাভ করতে, নিজের স্বাধীণতা, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সরকার পরিকল্পিতভাবে আমাদের সব অর্জনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক স্বপ্ন তারা একে একে নষ্ট করেছে। পালার্মেন্ট বলতে একটা আজব জিনিস তৈরি করে রেখেছে। যেখানে ১৫৪জন বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছে। বিরোধী দলের তিনজনকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। আবার বিরোধী দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরাশদ, যাকে দেশের মানুষ স্বৈরাচার হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল তাকে বিশেষ দূতের চাকরি দেয়া হয়েছে। আজকে প্রশাসনকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ চূড়ান্ত হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আবারো সেই প্রশাসনের অর্থাৎ সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণের নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে কোথাও কোনো স্বাধীনতা নেই, এখান কোথাও কেউ তার নিজের মত প্রকাশ করতে পারেনা। প্রকাশ করলেই মামলা, খুন, গুম। এমনকি কে আছেন, যারা শিকার হননি। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও নিখোঁজ-খুন-হত্যার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে- এই দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বার বার বলছি, এই সংবিধানের বুলি না আওড়িয়ে বাস্তবতাকে স্বীকার করে জনগণের আশার মনের ভাষা বুঝতে শিখুন। আসুন আলোচনা বসুন, সংলাপ করুন। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের যে পথ সেই পথ বের করুন। অন্যথায় অতীতে যেমন গণবিচ্ছিন্ন সরকার জনগণের কাছে পরাজিত হয়েছে, তাদের সমস্ত খারাপ ইচ্ছাগুলোকে তারা পরাজিত করেছিলো এবারো করবে। আসুন আজকের এই দিনে আমারা শপথ নেই যে, একাত্তরের যুদ্ধের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে পরাজিত করি যারা আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। ক্ষমতাসীনরা ২০১৪ সালে তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে বাক্সবন্দি করেছে। তাই একটি কথা স্পষ্ট দেশে আগামী নির্বাচন হবে সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে এই সরকার। শুধু তাই নয়, যে বা যারা তাদের (সরকার) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কথা বলতে চায়, লিখতে চায়, তাদেরকে গুম করে দেয়া হচ্ছে। তবে স্পষ্ট করে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, ২০১৪ সালের মতো প্রহসনের নির্বাচন আর হতে দেয়া হবে না। এবারও যদি সেই ধরনের নির্বাচনের চেষ্টা করা হয়, তাহলে সেই চেষ্টা হবে গণতন্ত্রকে হত্যা করা, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চেতনাকে হত্যার চেষ্টা করা।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা দুই বছর আন্দোলন করিনি, অপেক্ষা করেছি সরকারের বোধদয় হবে। আমরা আশা করেছিলাম নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সরকার আলোচনা করবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে বার বার সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তিনি বলেন, আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে। আগামী বিজয় দিবসের আগ পর্যন্ত আন্দোলনের পাশাপাশি ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ আমরা জানি কোনো স্বৈরচারী সরকারের কাছ থেকে সমঝোতার মাধ্যমে কিছু আশা করা যায় না। মওদুদ বলেন, আজ দেশে আইনাঙ্গণে যে ঘটনা ঘটছে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। সরকার নিজের হাতে বিচার ব্যবস্থাকে খন্ড বিখন্ড করে দিয়েছে। ফলে এখন সরকার ইচ্ছে করলে যে কোনো বিচারককে অপমাণিত করতে পারবে, অযুহাত দিয়ে বিদায় করতে পারবে। এ জন্য নেতাকর্মীদেরকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বাংলাদেশে একটি সুস্থ রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর ড. সুকোমল বড়–য়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, আব্দুল বাসিত আঞ্জু প্রমুখ। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন- দলের ভাইস-চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ মহানগর বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।