Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অসময়ের বৃষ্টিতে আলুচাষিদের হাহাকার

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল : অবিরাম টানা বর্ষণের ফলে চলতি রবিশস্য মৌসুমে কুমিল্লার চান্দিনার আলুচাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাকৃতির দুর্যোগের কারণে স¤প্রতি সারাদেশে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর এ বৃষ্টির কারণে কুমিল্লায় রবিশস্য চাষি জমিগুলোতে জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কুমিল্লার সব আলুচাষির চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
এখন চলছে শীতকাল, রবিশষ্য চাষের মৌসুম। এ রবিশস্য চাষের মৌসুমে অধিকাংশ কৃষক আলু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সে কারণে অধিকাংশ জমিতে তারা আলু রোপণও করেছেন, অনেকে হালচাষ দিয়ে আলু চাষের জন্য জমিকে উপযুক্তভাবে তৈরি করেছেন। কিন্তু হঠাৎ গত তিন-চারদিনের বৃষ্টির কারণে আলুচাষের জমিগুলোতে কাদা সৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
কুমিল্লায় টানা বর্ষণের কারণে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আলু পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকগণ আলুর জমি থেকে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন। জমিগুলোকে চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কারণ আলু চাষের জন্য এখনই হচ্ছে সঠিক সময়। এদিকে আলু চাষের এখন সময় হওয়ার কারণে কুমিল্লার অনেক কৃষি ইতোমধ্যে তাদের জমিতে আলু রোপণ করেছেন। অনেক কৃষক বীজ আলু কেটে, সার ও কীটনাশক মিশিয়ে প্রস্তুত করে রেখে মহাবিপাকে পড়েছেন। এ নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই বলেলেই চলে। এমনিতেই এ বছর বর্ষা শেষে পুনঃরায় অবিরাম বর্ষণে বিলের মাঝে দ্বিতীয়বার পানি জমেছিল। সে পানি যে একটু দেরি হওয়ায় আলু চাষের অনেক বিলম্ব হয়েছে। সে কারণেও কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সে পানি যাওয়ার পরপরই আলুচাষি কৃষকগণ আলু চাষের জন্য জমিগুলো তৈরি শুরু করেন। এর ফাঁকে হঠাৎ বৃষ্টিতে আলুচাষিদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। প্রকৃতি উপর যদি ও কারো কোনো প্রকার হাত নেই তারপর ও কৃষকগণ টানা বর্ষণের ফলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স¤প্রতি কৃষকরা আলু চাষের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে, কিন্তু বৃষ্টির কারণে তাদের আলু চাষ অনেকটা অনিশ্চয়তায় পড়ছে। সার-বীজ ও কীটনাশক ক্রয় করে মহাবিপাকে পড়েছেন তারা।
একাধিক কৃষক জানানা, এভাবে আর যদি দুই-একদিন বৃষ্টি হয়, তাহলে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
তারা বলেন, অনেক কৃষক বছরে শুধু আলু চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এ বছর অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির কারণে ব্যাপকহারে দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে। আলুচাষি কৃষকদের বর্তমানে একটাই চাওয়া, যাতে প্রতিনিয়ত ইউনিয়নপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের পাশে থেকে সঠিকভাবে পরামর্শ দিতে পারেন। এদিকে লাগাতার অবিরাম বৃষ্টির কারণে কুমিল্লার সর্বস্তরের জনজীবনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গ্রামঞ্চলের অধিকাংশ রাস্তায় নতুন করে কাদা সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের মারাত্মক ভোগান্তীর কবলে পড়তে হচ্ছে। শীতের মৌসুমে থেমে থেমে টানা বৃষ্টিতে শিশু থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী মানুষের সীমাহীন কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্য, কর্মজীবী মানুষের যাতায়াতে লাগামহীন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণের ফলে বিভিন্ন অফিসগামী মানুষ অফিসে না যেতে পেরে বাসা বাড়িতে বসে অলস সময় পার করছেন। অপর দিকে বিভিন্ন কোম্পানির এসআরদের বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। প্রাইভেট এনজিও কোম্পানির চাকরিরত ব্যক্তিরা রেইনকোট ও মাথার ছাতা নিয়ে বের হচ্ছে। এ বৃষ্টির কারণে ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। ক্রেতাশূন্য শহর থেকে শুরু করে গ্রামের হাটবাজারগুলোতে। এর মাঝে খেতে খাওয়া মানুষ হুলে পেটের তাগিদে বৃষ্টিকে মাথায় নিয়ে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ