Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাল-ডাল ও পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে জনমনে হতাশা

দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বিরূপ প্রভাব

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চাল-ডাল ও পেঁয়াজ সহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য আমজনতার নাগালের বাইরে চলে যাবার মধ্যে অসময়ের বর্ষণে প্রধান ফসল সমূহের ব্যাপক ক্ষতি দক্ষিণাঞ্চলের আর্থÑসামাজিক অবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যথেষ্ঠ কষ্টে আছেন। এমনকি চালের দরে উর্ধ্বগতিতে ধানের ভাল দাম পাবার আশায় বুক বেধেছিল দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকগণও। কিন্তু অগ্রহায়ণের প্রথম ও শেষভাগে দু’দফার অকাল বর্ষণ আমনের ও তার সাথী ফসল খেশারী ডাল ছাড়াও তরমুজ ও গোল আলুর জন্য ব্যাপক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ফলে নতুন ধান উঠলে বাজারে যে অনুক‚ল পরিস্থিতির আশা করা হয়েছিল, তা ইতোমধ্যেই যথেষ্ঠ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষক ও কৃষির এখন মহাদুর্দিন।
এবার বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় আবাদকৃত সোয়া ৭ লাখ হেক্টর জমির ৬০ ভাগ পাকা আমন ধান কর্তনের অপেক্ষায় থাকার মধ্যেই গত কয়েকদিনের অকাল বর্ষণে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মাঠ থাকা বেশীরভাগ জমির ধানই মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। তিন দিনে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ৫০ থেকে ১শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে বেশীরভাগ ফসলী জমিতেই পানি জমে যাওয়ায় এসব ধানে চিটা হওয়া ছাড়াও গুনগত মান নষ্ট বিনষ্টের আশঙ্কাও করছেন কৃষকগণ। ফলে উৎপাদন লক্ষ অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কার সাথে ধানের ভাল দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কিত সাধারণ কৃষকরা।
অপরদিকে পেঁয়াজের ঝাঁঝে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ গৃহস্থের মানুষের সংসারে টান লাগছে। গত কয়েকমাস ধরইে পেঁয়াজের বাজারে উর্ধ্বগতি নভেম্বরের শুরুতে যথেষ্ঠ গতি লাভ করে। এখন খোদ বরিশাল শহরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রী হচ্ছে ৮০ টাকা করে। গ্রামঞ্চলে তা আরো ৫টা বেশী। তবে বাজারে পেঁয়াজের কোন সরবারহ ঘাটতি নেই। আশ্চর্জজনকভাবে অতীতের সব হিসেব উল্টে দিয়ে বাজারে পেঁয়াজের চেয়ে আদা ও রসুনের দর এখন কম। এমনকি মাস দুয়েক যাবত গত মওসুমের গোল আলু বাজারে বিক্রী হচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরে। অথচ গত বছর দেশে উৎপাদিত প্রতিকেজি গোল আলুর উৎপাদন ব্যায় ছিল ১০ টাকার ওপরে। পুরনো আলুর দাম কম থাকায় বাজারে আসা নতুন গোল আলুরও দর পতন ঘটেছে। বরিশালের পাইকারী বাজারে গতকাল নতুন গোল আলু বিক্রী হয়েছে ২০ টাকা কেজি দরে। ফলে এবার দেশে যে ১ কোটি ৫ লাখ টনের মত গোল আলু উৎপাদনের লক্ষ স্থির করা হয়েছে, কৃষক পর্যায়ে তার ভাল দাম না পাবার আশঙ্কাও প্রবল হচ্ছে।
তবে এর চেয়েও বড় দুঃসংবাদ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের আলু ও তরমুজ চাষীদের জন্য। এ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে আবাদকৃত কোন গোল আলু উত্তলন সম্ভব হয়নি। অথচ গত কয়েকদিনের বর্ষণে বেশীরভাগ জমির আলুর জমিতে পানি জমে পচন ধরতে শুরু করেছে। চলতি মওসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১৫ লাখ টন গোল আলু উৎপাদনের কথা। অপরদিকে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। ইতোমধ্যে যারা তরমুজের আগাম আবাদ করেছেন তাদের মাথায় হাত। বেশীরভাগ জমির তরমুজের গাছে পচন ধরার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে অকাল বর্ষণে। গত মার্চের অকাল বর্ষণেও দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার। গোল আলুর ক্ষতিও ছিল ব্যাপক। ভোলাতে এক গোল আলু চাষি নিজের আবাদকৃত জমির ভয়াবহ ক্ষতি প্রত্যক্ষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
একের পর এক প্রকৃতিক দুর্যোগের সাথে চাল ও পেয়াজের স্মরণকালের সর্বোচ্চ মূল্য বৃদ্ধিতে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক সহ সাধারণ মানুষ যথেষ্ঠ দুর্ভোগের শিকার। গত ছয় মাসাধীককাল যাবত নিম্নমানের মোটা চালের কেজিও ৪৫ টাকায় স্থির হয়ে আছে। মধ্যম মানের বিআর-২৮ বালাম চাল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। মধ্যম-ভাল মানের মিনিকেট চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এমনকি ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যে ৩৬ ভাগ আমন ধান কেটে কৃষকরা গোলায় তুলেছে তার কোন প্রভাব এখনো বাজারে লক্ষনীয় নয়।
চালের সাথে মুশুর ও খেশারী সহ মুগডালের দামও এবার অন্য বছরের তুলনায় বেশী। উপরন্তু অতি সা¤প্রতিক অকাল বর্ষণে খেশারীর ব্যাপক ক্ষতি ডালের বাজরকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকগণ। সারাদেশে উৎপাদিত খেশারী ডাল প্রায় ৬০ ভাগই দক্ষিণাঞ্চলে আমনের সাথী ফসল হিসেবে আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ