পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচন এলেই একটি মহল সরকারের সাথে বৃহত্তর আলেম সমাজের বিরোধ সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেছেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেন, কারো নির্দেশে দলীয় কর্মীর মত কাজ আলেম শিক্ষাবিদ ও পীর মাশায়েখরা করেন না। এক শ্রেণির লোক আছে যারা নির্বাচনের আগে আগে জটিল মুহূর্তে সরকারের সাথে আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে দেয়। পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী ধর্মপ্রাণ মানুষকে যতটা কাছে টানেন শেষ দিকে তারা ততটাই দূরে ঠেলে দেয়। দ্ব›দ্ব ও বিরোধ বাধায়। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে সচেতন হতে হবে। আলেম সমাজকে সঠিক বার্তা দিতে হবে। নতুবা যে কোন সময় সকল হিসাব নিকাশ ও পূর্বধারণা পাল্টে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে আলেম-ওলামাদের সমর্থন ও দোয়া ছাড়া সরকার টিকতে পারবে না। গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসুল আযম কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়ন ও কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ঢাকা অঞ্চল এই প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ঢাকা মহানগরীর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আ খ ম আবুবকর সিদ্দীকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন, প্রধান আলোচক ছিলেন মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, সম্মানিত অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) প্রফেসর এ কে এম জাকির হোসেন ভূঞা। সম্মেলনে জমিয়াত সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আগামী দিনের বিশ্ব হবে ইসলামের। সংঘাত ও অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ১৭০ কোটি মুসলিম। আর অল্প কিছু দিনের মধ্যে তারা ২০০ কোটিতে পৌঁছাবে। ভারতে মুসলিমরা জ্বলে পুড়ে খাঁটি হচ্ছে। বাংলাদেশ গড়ে উঠছে এ অঞ্চলের ১০০ কোটি মুসলমানের নেতৃত্ব দিতে। ধর্মীয় উগ্রবাদ ও চিন্তার প্রান্তিকতা শেষ হয়ে ফিরে আসছে সহনশীল মানবিক ইসলাম। সউদী আরবের পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন পথে নিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের উত্থান সময়ের ব্যাপারমাত্র। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সেই উত্থানের প্রাতিষ্ঠানিক ও ঐতিহ্যগত সংস্থা। অতীত মুরব্বীদের ঈমান নিষ্ঠা ও জ্ঞান সাধনা, নতুন প্রজন্মের গবেষণা, প্রযুক্তি ও দক্ষতার অপূর্ব সমন্বয়ে এ কাফেলা বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেলে রূপান্তরিত করবে। ইসলামপন্থীদের ঐক্য ও সরকারের সচেতনতা এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন লক্ষ কোটি মানুষের অন্তর জয় করে এ দেশে জনমত গঠন করে থাকে। এক শ্রেণির লোক আছে যারা নির্বাচনের আগে আগে জটিল মুহূর্তে সরকারের সাথে আলেমসমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে দেয়। পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী ধর্মপ্রাণ মানুষকে যতটা কাছে টানেন শেষ দিকে তারা ততটাই দূরে ঠেলে দেয়। দ্ব›দ্ব ও বিরোধ বাধায়। ২০০০ সালে শায়খুল হাদীস ও মুফতি আমিনীর সাথে বৈরি আচরণ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারায়।
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, শাপলা চত্ত্বরের ঘটনার পর ২২ মে প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছিলাম, দেশের আলেম সমাজকে সান্ত¦না দিয়ে সব বাড়াবাড়ির জন্য জাতীয় ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলন করে দুঃখ প্রকাশ করলে ভাল হবে। সময় মত তা করা হয়নি। ভুল সিদ্ধান্তে পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় আওয়ামী লীগের মত বৃহৎ সংগঠনকে ২০১৪ এর মত ভীত, বিপন্ন, কোনঠাসা ও জনবিচ্ছিন্ন নির্বাচন করতে হয়েছে। ফলে পরবর্তী ৪ বছর ধরেই এ কাজগুলো করতে হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, আলেম-ওলামাদের সমর্থন ও দোয়া ছাড়া সরকার টিকতে পারবে না। তিনি বলেন, নিঃস্বার্থ ও আল্লাহমুখী আলেম-পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের দাবি কেবল ইসলামী দাবি। ধর্মীয় দাবি-দাওয়া পূরণ না করা হলে এর জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়। আল্লাহ ও নবী প্রেমিকদের ধর্মীয় দাবি না মেনে ২০/৩০টি আসন দিয়েও প্রকৃত আলেমদের সমর্থন পাওয়া যাবে না।
মাদরাসা শিক্ষকদের দাবির কথা জানিয়ে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, সামনে নির্বাচনী পরিবেশ আসছে। আলিয়া ও কওমীর বহু আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান ভাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ, চাকরির বয়স ৬৫ বছরে বৃদ্ধি, এবতেদায়ীর মঞ্জুরি, শতভাগ এমপিওভূক্তি এখন সরবার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এখন জ্বলন্ত বাস্তবতা। কিন্তু সেই চক্রটি কার্যকর। পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের নামে সরকারের অহিতাকাংখী আমলা ও কর্মচারিরা বিশেষজ্ঞ আলেম ও শিক্ষাবিদদের অপমান করছে। তারা নানা ধরণের কথায় ও কাজে আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষকে যথারীতি বিরক্ত ও লাঞ্ছিত করা শুরু করেছে। নির্বাচনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। সরকার ও সচেতন ভোটারদের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে সচেতন হতে হবে। আলেম সমাজকে সঠিক বার্তা দিতে হবে। নতুবা যে কোন সময় সকল হিসাব নিকাশ ও পূর্বধারণা পাল্টে যেতে পারে। জমিয়াত সভাপতি বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দেশব্যাপী সম্মেলনগুলো থেকে আমরা মাঠ পর্যায়ের মনোভাব বুঝতে পারছি। সর্বশেষ রাজধানীর এ সম্মেলন থেকেও প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতৃবর্গের মনস্তত্ত¡ টের পাচ্ছি।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, একটি জাতির অবকাঠামো ও বস্তুগত উন্নয়নই মূল উন্নয়ন নয়। আসল উন্নয়ন হলো তাদের নৈতিক ও মানসিক উন্নয়ন। মানুষ যদি মাদকাসক্ত, দুশ্চরিত্র ও উশৃঙ্খল হয়ে যায় তাহলে বড় বড় ব্রীজ, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল আর বহুতল ভবন নিয়ে কী হবে? সরকারের কাছে খবর আছে, বড় বড় কর্মকর্তা, পুলিশ, গোয়েন্দা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাদকের সাথে নানাভাবে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আলেম সমাজ এসব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যদি প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে কেউই দেশ চালাতে পারবে না। সরকার ও সংগঠন কোনটিই সফল হবে না। অসভ্য দেশের মত দাঙ্গা, খুনোখুনি ও অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। মনে রাখতে হবে, মসজিদ থেকেই শান্তির বাণী প্রচার করে ইমাম ও আলেমরা জাতিকে যুগ যুগ ধরে সভ্যতা সহনশীলতার শিক্ষা দিয়ে এসেছেন।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বিরুদ্ধে সব সময় ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা কবি রুহুল আমিন খান বলেন, শুরু থেকেই জমিয়তের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কখনই জমিয়াতের চলমান ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। এই জমিয়াতের নেতৃত্বেই ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষকদের বেতন স্কেলসহ সকল দাবি-দাওয়া পূরণ হয়েছে। এখন আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে না পারলে মাদরাসা শিক্ষার জন্যই ক্ষতি হবে।
সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্র করছে। এবতেদায়ী নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। বলা হচ্ছে আমাদের সাথে আসেন তাহলে জাতীয়করণ করে দেয়া হবে। এই জাতীয়করণের নামে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে মাদরাসার সাধারণ শিক্ষকদের বলা হচ্ছে আপনারা হুজুরদের পিছনে কেন থাকবেন? আমাদের সাথে আসেন আমরা আপনাদের মাদরাসার প্রিন্সিপাল বানিয়ে দিবো। তিনি এই কুচক্রিমহল থেকে মাদরাসা শিক্ষকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। সম্মেলনে সকল এমপিওভুক্ত-ননএমপিওভুক্ত মাদরাসা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব স্ব পদেই জাতীয়করণের দাবি জানান। এছাড়া শিক্ষকদের চাকরির বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ এবং স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান, সংযুক্ত এবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি চালু করার দাবি জানান।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কুমিল্লা জেলার সভাপতি ও মৌকারা দরবার শরীফের পীর সাহেব মাওলানা নেছার উদ্দিন ওয়ালী উল্লাহ, কেন্দ্রীয় জমিয়াতের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, বরিশাল মহানগরী সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রব, নরসিংদী জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ আবদুল জলিল, নারায়ণগঞ্জ মহানগরী সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা নূরুল আলম, গাজীপুর মহানগরী সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল মান্নান, গাজীপুর জেলার সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল হক, নারায়ণগঞ্জ জেলার সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা নোমান সিদ্দিকী, নরসিংদী জেলার সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু রায়হান ভূঞা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, কাগতিয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুল্লাহ আহমদী, ঢাকা জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মতিন, কিশোরগঞ্জ জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মাসুদ আলম, মুন্সিগঞ্জ জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা এ বি এম মহিউদ্দীন হুসাইন, টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ড. ফয়জুল আমিন সরকার, ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ড. ইদ্রিস খান, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল হাই, কিশোরগঞ্জ জেলার সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হাই, মুন্সিগঞ্জ জেলার সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আহমদ উল্লাহ খান, জমিয়াত কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারি মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ড. নজরুল ইসলাম আল মারুফ, অধ্যক্ষ মাওলানা সাইফুল ইসলাম রফিক, অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম মাওলা, অধ্যক্ষ মাওলানা এনামুল হক খান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।