পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গা মুসলিম নারীরা তাদের উপর বর্মী সৈন্যদের যৌন নিপীড়ন, মারধর ও নির্যাতনের বর্বরোচিত কাহিনী প্রকাশ করছেন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্মী সেনাবাহিনীর জাতিগত নির্মূল নীল-নকশার আওতায় হত্যা, ধর্ষণ ও পোড়ামাটি নীতির শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
ধর্ষণের শিকার নারীরা জানান, স্বামী ও সন্তানদের চোখের সামনেই ধর্ষণ করা হয় তাদের। তাদের সামনেই হত্যা করা হয় সন্তানদের। স্বামীকে গুলি করে বা পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। প্রিয়জনকে মাটি দিয়ে রাতের অন্ধকারেই পালিয়ে আসতে হয় সবাইকে। নিপীড়নের সেই কষ্ট নিয়েই পায়ে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তারা পৌঁছেন বাংলাদেশে।
এ রকম এক নারী সানুয়ারা (২৫)। রাখাইনের বউলিবাজার গ্রামে ছিল তাদের বাড়ি। ২৫ আগস্ট তাদের গ্রামে মিয়ানমার সৈন্যরা হামলা চালায়। তিনি বলেন, সেদিন তার স্বামী বাড়ি ছিলেন না। তারা তার সামনেই তার শিশু ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে তার মাথা কেটে ফেলে। তিনি ছিলেন আট মাসের গর্ভবতী। তাকে বেঁধে রেখে নয় জন পশু ছয় ঘন্টা যাবত ধর্ষণ করে। তিনি জ্ঞান হারান। পরে তার স্বামী ও ভাই এসে তাকে পায়। তারা তাকে বয়ে নিয়ে আসে বাংলাদেশে । তিনি এক হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেন। একদিন পর সন্তানটি মারা যায়।
তুলাতলি গ্রামের রশিদা (২২) জানান, আগস্টের শেষদিকে সৈন্যরা এসে পেট্রোল ঢেলে গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। দেখামাত্রই লোকজনকে গুলি করে হত্যা করে তারা। রশিদা আরো কয়েকজনের সাথে নদীর তীরে পালালেও পশুরা তাকে দেখে ফেলে। তারা বালকদের গুলি করে হত্যা করে মৃতদেহ নদীতে নিক্ষেপ করে। নারীদেরকে একসাথে জড়ো করে স্বর্ণালংকার কেড়ে নেয়। তাদের মধ্য থেকে রশিদসহ পাঁচজনকে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। তারা রশিদার ২৫ দিন বয়সী শিশুকে মাটিতে আছড়ে হত্যা করে। সবাইকে ধর্ষণের পর ম্যাচেটি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে লাশ ফেলে রেখে যায়। কিন্তু মাথার পিছনে কোপ দেয়ায় রশিদা জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও প্রাণে বেঁচে যান। সেখান থেকে গিয়ে ধান ক্ষেতে লুকান তিনি। এক সময় আরেক মহিলাকে পেয়ে তার সাথে বাংলাদেশে চলে আসেন। তিনি বলেন, আমি বিশে^র কাছে ন্যায় বিচার চাই। তারা আমার পিতা-মাতা, ভাই-বোনসহ ১৫ জন সদস্যকে হত্যা করেছে।
তুলাতলিরই আরেক নারী মুমতাজ বেগম (৩০)। বর্মী সৈন্যরা আসার পর তিনি পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু পশুরা তার স্বামীকে গুলি করে। মরণোন্মুখ স্বামী তার কাছে সংসার জীবনে কোনো অন্যায় করে থাকলে সে জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। সৈন্যদের কাছে তিনি একটু পানি খেতে চাইলে তারা পুনরায় গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে। মুমতাজকে তার শিশু সন্তানদেরসহ সৈন্যরা একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুরা আতংকে চিৎকার করলে তাদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তারপর সৈন্যরা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। মুমতাজ কোনো রকমে বেরিয়ে গিয়ে এক জঙ্গলে আশ্রয় নেন। তার শরীরের অনেকটা অংশ পুড়ে যায়। পরে কয়েকজন রোহিঙ্গা তাকে দেখে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, বর্মী সৈন্যদের পৈশাচিকতার কথা আমি বিশ্বকে জানাতে চাই। তারা আমাদের ধর্ষণ ও হত্যা করছে। আমি তাদের বিচার চাই।
এপি জানায়, ‘কে’ সংক্ষিপ্ত নামের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন যে ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা চৌকিগুলোর উপর হামলার কয়েকদিন পর তারা বাড়িতে সকালের খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় গ্রামবাসীরা বর্মী সেনাদের আসতে দেখে চিৎকার শুরু করে। তার স্বামী ও তিন ছেলেমেয়ে দৌড়ে পালায়। তিনি নয় মাসের গর্ভবতী ছিলেন। একবারে ছোট দু’টি সন্তান আর ভারি শরীর নিয়ে পালানোর আগেই সৈন্যরা তাকে ধরে ফেলে। তারা তার কানের দুল, নোলক ও গলার হার ছিনিয়ে নেয়। তিনি বøাউজের মধ্যে গরু বিক্রি করা টাকা লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাও নিয়ে নেয় তারা। সন্তানরা চিৎকার করায় তাদের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে। তার গর্ভাবস্থার চ‚ড়ান্ত পর্যায় দেখেও ছাড়েনি পশুরা। পাঁচজন তাকে ধর্ষণ করে। তিনি জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখেন, এক বৃদ্ধা আত্মীয়া তার শুশ্রুষা করছে। তার স্বামী ফিরে এসে তার উপর খেপে যান ও কেন তিনি পালাননি বলে মারধর করেন। বর্মীরা তাকে ধর্ষণ করায় তিনি কে-কে তালাক দেয়ার হুমকি দেন। সৈন্যরা কয়েকদিন পর আবার আসে। এবার তারা কাছের পাহাড়ে পালাতে সক্ষম হন। তাদের বাড়িসহ গ্রাম পুড়িয়ে দেয় তারা। পরে তিনি বাংলাদেশে আসেন। শিবিরে তিনি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
এর কয়েকদিন পর ১০ জন সৈন্য ‘আর’ সংক্ষিপ্ত নামের ১৩ বছেেরর কিশোরীর বাড়িতে হামলা করে। গতবছর তার বাবাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে সৈন্যরা। তাদের আর কোথাও যাবার জায়গা ছিল না। আর বাড়িতে কুরআন শরীফ পড়া শিখছিল। সৈন্যরা তাদের বাড়িতে এসে ছোট দু’ ভাইকে ধরে বাড়ির বাইরে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। আর পালানোর চেষ্টা করলে তাকে তারা ধরে ফেলে। তার শরীরে তখনো যৌবনের প্রকাশ ঘটেনি। তার কানের দুল খুলে নিয়ে একটি গাছের সাথে বেঁধে গায়ের কাপড় খুলে নেয়। তারপর তাকে ধর্ষণ করে। আর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তার মা ও বড় দু’ভাই তাকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু জীবনের সেই দুঃসহ ও ভয়াবহ স্মৃতি তার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ কেড়ে নিয়েছে।
‘এন’ নামে একজন বলেন, তিনি ধর্ষণের পর বেঁচে গেছেন। কিন্তু নিজের স্বামী, দেশ ও শান্তি হারিয়েছেন। তারপরও তিনি কথা বলেন হয়তো কেউ তার কথা শুনবেন। তিনি বলেন, ‘আমার কিছুই নেই। আমি শুধু কথাই বলতে পারি।’
এফ সংক্ষিপ্ত নামের এক নারী গর্ভবতী দু’বার ধর্ষণের শিকার হন। প্রচন্ড মানসিক চাপের শিকার তিনি। আগতপ্রায় সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত। তিনি মনে করেন, তার এ অবস্থার পিছনে হয়ত আল্লাহর কোনো ইচ্ছা আছে। তিনি বাবা-মা, ভাই, স্বামী সব হারিয়েছেন। তার জীবনে সুখ বলে কিছু নেই। তিনি বলেন, দুনিয়াতে আমার কেউ নেই। এখন সন্তানটিই তার একমাত্র আশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।