পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধির প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে নিন্ম আদালতের বিচারের সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী হাতে চলে গেল। বিচার বিভাগ কার্যত: ঠুটো জগন্নাথে পরিণত হলো। একই সঙ্গে নিন্ম আদালতের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচার বিভাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিল ক্ষমতায়ন হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মাসদার হোসেন মামলার মূল লক্ষ্য। তবে বর্তমান সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমদে ওই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষাণ করে বলেছেন, যা হয়েছে, খারাপ হয়নি। সঠিকভাবেই গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। একই কথা বলেছেন অ্যাটনী জেনারেল মাহবুবে আলমও।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, এই গেজেটের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে। সংবিধান প্রণেতা অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমির উল ইসলাম বলেছেন, অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে গেছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির জয়নুল আবেদীনে মতে, এই গেজেটে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, নিম্ন আদালতের শৃঙ্খলাবিধিমালায় সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কোথাও ক্ষুন্ন করা হয়নি বরং বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গত সোমবার বহুল আলোচিত এই গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রনালয়। এই গেজেট প্রকাশে দফায় দফায় সময় নেয় সরকারপক্ষ। সদ্য পদত্যাগকরা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক তিক্ততায় গড়ানোর অন্যতম বিষয় ছিল এই বিধিমালা। সরকারের তৈরি করা বিধিমালায় আপত্তি জানিয়ে তা অনুমোদন দেননি বিচারপতি এস কে সিনহা। তিনি মাজদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে এই গেজেট প্রণয়ণের দাবিতে অটল ছিলেন।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কাছে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, এই গেজেটের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে। বিচার বিভাগ আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনেই থাকতে হবে। এতে কোনো লাভ হবে না। তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল নিন্ম আদালতের নিয়ন্ত্রণ তথা বিচারকদের বদিল ও পদোন্নতি বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে সুপ্রিম কোটৃ। যদিও সেখানে কোন রুলস করা হয়নি। বাকশালের সময় সেটি বাদ দেয়া হল। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়া ক্ষমতা এসে সেটা পরিবর্তন করলেন। এখন গেজেটর মাধ্যমে নিন্ম আদালতের বিচার বিভাগের ক্ষমতা প্রধান মন্ত্রীর হাতে চলে গেল। স্বাধীন বিচার বিভাগের কর্মকান্ড মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ হল। তিনি আরো বলেন, বিচার বিভাগের বিষয় নিয়ে আইন মন্ত্রনালয়ের কোন ভ’মিকা থাকার কথা নয়। বলা হয়েছিল বিচার বিভাগের জর্য আলাদা সচিবালয় করা হবে। সেটা করা হয়নি। এমনকি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এই সব বিষয় নিয়ে মানতে রাজি হননি। যার কারণে উনার সঙ্গেও সরকারের মতপার্থক্য হয় বলেও মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।
সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম বলেন, বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেটের মাধ্যমে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে গেছে। গেজেটের গোড়াতেই গলদ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি অবাক হয়েছি, জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনকে সরকার আইন মন্ত্রণালযের অধীনে নিয়ে গেছে। যদিও এটা করা উচিত ছিলো সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। কিন্তু তা না করে ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিধি করা হয়েছে। এই ১৩৩ বিধি প্রযোজ্য হয় প্রজাতন্ত্রের সরকারি কর্মচারীদের জন্য। সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম বলেন, সংবিধান যে ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট ওপর ন্যস্ত করেছে সেই জায়গায় প্রেসিডেন্ট পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয় প্রতিস্থাপাতি হতে পারে না। প্রেসিডেন্টর ভূমিকা আইনমন্ত্রণালয় পালন করতে পারে না।
ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম বলেন, অধস্তন আদালত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদেরকে যদি সরকারী গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করা সঠিক হয়নি। মাসদার হোসেন রায়ের আলোকে এবং সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট নিয়ে অধস্তন আদালতকে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোটের সাথে পরামর্শ করে প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু এ গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সে জায়গা থেকে সরে গেছে। এর মাধ্যমে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে গেছে।
বর্তমান সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, গেজেটে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে। এই গেজেটের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। উভয় বিভাগে একটি সেতুবন্ধ তৈরি হবে। তিনি আরো বলেন, যা হয়েছে, খারাপ হয়নি। সঠিকভাবেই গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। যারা গেজেট নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন সেটা রাজনৈতিক বলে মনে হচ্ছে। কারণ বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এখন এ বিষয় নিয়ে এই সব কথা বলা উচিত নয়। সাবেক আইন মন্ত্রী আরো বলেন, গেজেট খবুই প্রয়োজন ছিল। এই বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগের বিভিন্ন সময়ে নানামুখী আলোচনা হয়েছে। গেজেট প্রকাশ করে সেই বির্তকও সমাপ্তি ঘটল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেছেন, শৃঙ্খলাবিধির প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে মাসদার হোসেন মামলার মূল স্পিরিটকে খর্ব করা হয়েছে। নিন্ম আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত এই গেজেটের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কফিনের ওপর শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে। আমরা এই গেজেট বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, অতীতে নিন্ম আদালতে সরকারের কবজায় নিয়ে। এই গেজেটের মাধ্যমে সমস্ত বিচার বিভাকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিল। এ নিয়ে আমরা আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছি।
১৯৮৯ সালে সরকার বিসিএস ক্যাডারের কিছু পদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি করে। এতে অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে অসঙ্গতি দেখা দেয়। তৎকালীন সরকার এই অসঙ্গতি দূর করার জন্য ১৯৯৪ সালের ৮ জানুয়ারি জজ আদালতের বেতন স্কেল বাড়িয়ে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেনসহ ৪৪১ জন বিচারক ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৯৯৭ সালে হাইকোর্ট পাঁচ দফা সুপারিশসহ ওই মামলার রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিল বিভাগ ১৯৯৯ সালে ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার রায় দেন। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়। ওই সময় যে চারটি বিধিমালা গেজেট আকারে জারি করা হয়েছিল, মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। সর্বশেষ সদ্য পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাও বেশ কয়েকবার নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগে শৃঙ্খলাবিধির প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এজন্য সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। বেশ কয়েকটি তারিখে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শোনেন এবং সরকারের অবস্থান জানতে চান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।