Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রাখল -মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য প্রণীত চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির ফলে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বিচার বিভাগে সরকারের নিয়ন্ত্রণই থাকছে। গতকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার গেজেট সোমবার প্রকাশ করে সরকার। এই বিধিমালায় আপত্তি জানিয়ে তা ফেরত পাঠিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমরা বহু কথা বলেছি, বহু আন্দোলন করেছি, আইন পাস হয়েছে পার্লামেন্টে। সেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তারা (সরকার) আবারও সেই প্রশাসনের কাছে নিয়ে গেল। অধস্তন আদালতের বিচারকদের যে শৃঙ্খলা বিধি করেছে, গেজেট করেছে সরকারের হাতেই থাকছে এর নিয়ন্ত্রণ। এটা একটা ভয়াবহ রকমের বিচ্যুতি, ভয়াবহ একটা চক্রান্ত। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করেই এখন আওয়ামী লীগ সরকার ‘ভিন্নমত ও ভিন্নপথ’ নিয়ন্ত্রণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে অনেকগুলো। এখন আবার তার নামে বিদেশে সম্পত্তির কল্পিত গল্প তৈরি করে প্রচার করছেন তারা, যার কোনো ভিত্তি নেই। প্রফেসর আসিফ নজরুল ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সা¤প্রতিক মামলার প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, এভাবে যারা বিরুদ্ধে কথা বলবে, ভিন্নমত পোষণ করবে, যারা সত্য উচ্চারণ করবে, তাদেরকে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে শেষ করে দেওয়া হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়েই বিচারপতি সিনহাকে সরকারের বিরাগভাজন হয়ে দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। এই বলার কারণে প্রধান বিচারপতি সিনহা সাহেবকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, তার পদ হারালেন। এই হচ্ছে বর্তমান স্বাধীন বিচার বিভাগের নমুনা। জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটস প্রতিনিধি নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে। এখনও আবার বলছেন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে। কোন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকেরা বলছে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। সাহস থাকলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেন। তার পরে দেখেন কারা ক্ষমতায় আসে। মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণই আমাদের একমাত্র শক্তি। বাইরের কোনো চক্রান্তের উপর বিএনপি নির্ভর করে না। বিনা ভোটের পার্লামেন্ট কখনো জনগণের পার্লামেন্ট হতে পারে না। তিনি বলেন, সংবিধান বাইবেল নয়। জনগণের জন্য সংবিধান। আর জনগণের জন্যই তা পরিবর্তন করা হবে। ভয়ংকর ধু¤্রজাল তৈরি করে জনগণকে প্রতারিত করছে সরকার। যারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় তারাই রাজনীতি নিয়ে মিথ্যাচার করছে। ভয়ংকর মিথ্যাচার করে তাদের যেই লক্ষ্য সেই লক্ষ্যে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের বলতে হয় ৬০ টাকা চালের কেজি। প্রধানমন্ত্রী প্রতিজ্ঞা করেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন। পিয়াজের কেজি ১২৫ টাকা। অথচ শাসকগোষ্ঠী আত্মতৃপ্তি লাভ করছে। বলছে দেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। কমরেড মো. তোয়াহার ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল।সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ ছাড়াও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপা নেতা রেহানা প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা এম এ রকীব, এনপিপি নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি নেতা আতাউর রহমান ঢালী, জহিরউদ্দিন স্বপন, ডিএল নেতা সাইফুদ্দিন মনি সভায় বক্তব্য রাখেন।
সিনেটে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের প্রার্থী : প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী পরিষদের ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহŸায়ক প্রফেসর আখতার হোসেন খান। প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটরা হলেন- প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ড. উম্মে কুলসুম রওজাতুর রোম্মান, এ কে এম ফজলুল হক, এ টি এম আবদুল বারী (ড্যানি), এ বি এম ফজলুল করিম, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম (বাচ্চু), কে এম আমিরুজ্জামান শিমুল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, ড. জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, ডা. প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, ডা. মোহাম্মদ রফিকুল কবির লাবু, মো. আশরাফুল হক, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুদার, ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, ড. মো. শরীফুল ইসলাম দুলু, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, মো. সেলিমুজ্জামান মোল্যা, শওকত মাহমুদ ও ড. সদরুল আমিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ফখরুল বলেন, আজ আমরা একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। যে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তচিন্তার পাদপিঠ বলে মনে করি, যে বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূচিকাগার বলে গর্ববোধ করি, সেই বিশ্ববিদ্যালয় এখন পুরোপুরিভাবে একটি একদলীয় চিন্তাভাবনার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহŸান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জাতীয়তাবাদী পরিষদের সিনেটের প্রতিনিধি নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মাহবুবউল্লাহ, প্রফেসর এ কে এম আজিজুল হক, প্রফেসর ওবায়দুল ইসলাম, প্রফেসর মামুন আহমেদ, প্রফেসর মোরশেদ হাসান খানও উপস্থিত ছিলেন। আগামী ৬ ও ১৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ