Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিদেশি রোবট নয়, স্বদেশি উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের মূল্যায়ন করতে হবে

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রযুক্তির পেছনের উদ্ধাবক মানুষটিকে অগ্রাহ্য করে প্রযুক্তিকে বড় করে দেখানোর মাধ্যমে আমরা কোন লক্ষ্য অর্জন করতে পারবনা। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০১৭ উপলক্ষে হংকংয়ে তৈরী একটি মানবাকৃতির রোবট সোফিয়াকে কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকায় নিয়ে আসা এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভিসিক্ত করার মধ্য দিয়ে যে বার্তা এ দেশের তরুন সমাজ পেল সেখানে প্রযুক্তির পুতুলই হচ্ছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। যেখানে সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষের মধ্যে নানামাত্রিক সংকট ঘণীভূত হচ্ছে, সেখানে ভিনদেশি কোন কারিগরের তৈরী একটি রোবটকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে এমন অবারিত উচ্ছাস ও জাতীয় গণমাধ্যমের এমন একাগ্র প্রচারনার আতিশয্য ছিল বিস্ময়কর। তবে প্রযুক্তির কল্যানে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ফেইসবুকের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনমত গঠনে শক্তিশালী ও প্রভাব বিস্তারি হয়ে ওঠায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার ভিনদেশি বিজ্ঞাপনি রোবট সম্পর্কে সাধারণ মানুষের বক্তব্যও ধরা পড়েছে। কেউ কেউ রোবট সোফিয়া হংকংয়ের ‘ধোলাইখালে’ তৈরী একটি মানবাকৃতির সিমুলেশন যা’ সৌদি আরবের নাগরিকত্ব লাভের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে। বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের হলিউড অভিনেত্রী, রোমান হলিডে(১৯৫৩), সাবরিনা(১৯৫৪) খ্যাত গ্র্যামি ও অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া অড্রে হেপবার্ণের আদলে তৈরী এই সিমুলেটরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটিকে(আর্টিপিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং মানুষের কণ্ঠ ও মুখাবয়বের অভিব্যক্তি চিহ্নিত করতে পারে এবং অনুকরণ করতে পারে। সেই সাথে নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করতে পারে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের প্রযুক্তি এবং এমন ক্ষমতাসম্পন্ন রোবটে কলাকৌশলে এখন আর কোন নতুনত্ব নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারনার প্রাথমিক যুগের কথা বাদ দিলেও বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিনোদন জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল এখন থেকে শত বছর আগে। চেকো¯øাভাকিয়ার লেখক কারেল সেপেক এরর লেখা আর.ইউ.আর ( রোসামস ইউনিভার্সেল রোবটস) প্রকাশিত হয় ১৯২০ সালে। কারেল সেপেকের এই রচনায় উপস্থাপিত রোবট ও কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ধারনাকে পুঁজি করে পরবর্তিতে হলিউডে অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। রোবট টেকনোলজি তার ক্রমবিকাশের ধারায় শত বছর পেরিয়ে আসার পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাণিজ্যিক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট সামাজিক বৈষম্য ও মানবিক সংকট নিয়ে মানুষ যখন ভাবতে শুরু করেছে তখন আমাদের মত দেশে বিদেশে নির্মিত একটি রোবটকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মানবিক মর্যাদায় অভিসিক্ত করার মধ্য দিয়ে এ দেশের নতুন প্রজন্ম কি মেসেজ পেল তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে এখন।
যে রোবটকে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে তার জন্মবৃত্তান্ত, জাতীয়তা, ধর্ম ও লিঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। হংকংয়ের হ্যানসন রোবটিকাস নামের একটি কোম্পানীর উদ্যোক্তা ডেভিড হ্যানসন তার রোবটের নাম সোফিয়া রাখলেও এর আদল দিয়েছেন অড্রে হেপবার্ণের। অড্রে হেপবার্ন একজন কমার্সিয়াল অভিনেত্রী ছিলেন। অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মানুষের মনোরঞ্জন ও জীবিকা নির্বাহ করতেন। বলাবাহুল্য, কমার্সিয়াল লক্ষ্য সামনে রেখেই হ্যানসন এই রোবট নির্মান করেছেন। তবে ফেøারেন্স নাইটিঙ্গেল বা মাদার টেরিজার আদল বা নাম দিয়ে তিনি এই বাণিজ্য করলেও কারো কিছু করার ছিলনা। তবে যেহেতু এটি একটি নারী আকৃতির হিউম্যানয়েড সিমুলেটর- একে কি রোবট বলা সঙ্গত? শত বছর আগেও হিইম্যানয়েড রোবটের বিপরীত লিঙ্গ হিসেবে ‘ফেমবট’ বা ‘গাইনয়েড’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ঢাকায় সোফিয়ার আগমন উপলক্ষে পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় যত লেখালেখি দেখেছি কোথাও সোফিয়াকে ফেমবট লেখা হয়নি। যদিও মানুষের তৈরী একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে প্রশ্নতোলার তেমন কোন মাহাত্ম্য নেই। যখন রোবটকে মানবিক মর্যাদা দেয়া হচ্ছে, এমনকি তার সৌন্দর্য, সংবেদনশীলতা, প্রেম-পরিনয় তথা যুগলজীবন নিয়েও কথা উঠেছে সেখানে হ্যানসনের সোফিয়া একটি ফেমবট হিসেবেই পরিচিতি পাওয়ার যোগ্য। প্রযুক্তিগত একটি যন্ত্রের ব্যবহারিক দিক ও তার সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা না করে আমরা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কেই প্রসঙ্গ বানিয়েছি। এর পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছি। আমাদের প্রশংসা ও মুগ্ধতার আড়ালে প্রচারের যোগ্য অনেক সত্যই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। রোবট সোফিয়াকে বাংলাদেশে এনে ডিজিটাল এক্সপো উদ্বোধনের বিষয়টিকে এত বড় করে তোলার মধ্য দিয়ে যদি উদ্যোক্তারা ডিজিটাল বিশ্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রমাণ করতে চান তাহলে তারা বাস্তবের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন। তবে এটা যদি কোন দেশীয় প্রযুক্তিবিদ বা উদ্যোক্তার হাতে তৈরী সিমুলেটর হতো তাহলে এমন প্রচারনার পক্ষে যুক্তি থাকতো। চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বমানে তো নয়ই, এখনো দক্ষিন এশিয়ার আঞ্চলিক হারের চেয়েও অনেক পিছিয়ে আছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন, জিএসএমএ’র দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোতে গড়ে মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যা ৩৮ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে তা শতকরা ৩৩ ভাগ।মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারি এই ৩৩ শতাংশ মানুষ এই প্রযুক্তিগত সুযোগসুবিধাকে কি কাজে লাগাচ্ছে তার যথাযথ মূল্যায়ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক অবক্ষয়, অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের মনোযোগ পাঠ্যবই থেকে বিচ্যুত হওয়ার জন্য সমাজতাত্তি¡করা ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারকে অনেকাংশে দায়ী করছেন। সম্প্রতি দেশের অন্যতম ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফি এক বিবৃতিতে বলেছেন, মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য ইহুদিরা মোবাইল ফোন নামক এক বিধ্বংসী মারনাস্ত্র ছড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর মতে, এই মোবাইল ফোন আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যদিও মোবাইলফোনকে ইহুদিদের পাতা ফাঁদ বা মারনাস্ত্র মনে করে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির সুযোগ সুবিধাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ আমাদের হাতে নেই। তবে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক দিকগুলোকে আমলে না নিয়েই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে তা অবারিত করে দিলে যে ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয় আমাদের সমাজ এখন তা হাড়ে হাড়ে টর পাচ্ছে। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, শিক্ষাব্যবস্থায় ধস, জনগনের পকেট থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি ডলার চুরি ও পাচার করে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে পঙ্গু করে ফেলা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির বল্গাহীন বাজারজাতকরণের মাধ্যমে। মোবাইল ফোনের ভয়েসকল এবং ইন্টারনেট পরিবেসবার নামে প্রতারনার মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি গ্রাহকের কাছ থেকে কত কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে তার কোন পরিসংখ্যান কোন সংস্থার হাতে নেই। মোবাইল ইন্টারনেটের ডাটা স্পীড নিয়ে সরাসরি প্রতারনা, অবৈধ ভিওআইপি, আইজিডাবিøউ নিলামসহ প্রতিটি ধাপেই একটি রাঘর বোয়াল ধরনের দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও প্রতারনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলোর হাতে নামমাত্র মূল্যে মোবাইলের ফ্রিকোয়েন্সি তুলে দেয়ার কারণে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ।
কথা হচ্ছিল ডিজিটাল এক্সপো ২০১৭তে রোবট সোফিয়াকে নিয়ে আসা এবং সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের ব্যাপক আদিখ্যেতা নিয়ে। দেড়-দুইলাখ ডলার খরচ করে আমাদের দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদরাও একটি কর্মক্ষম রোবট বানিয়ে ফেলতে পারেন। সোফিয়ার নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন যে সব প্রযুক্তি ও অ্যাপস ব্যবহার করেছেন তার কোনটিই নিজের উদ্ভাবিত নয়। তথ্যপ্রযুক্তির জগতে এসব অ্যাপস অনেক আগে থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ এই সোফিয়াকে ঢাকায় আনতে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। রোবট সোফিয়া বা এর নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবনে কোন বিষ্ময় ও বা নতুন সংযুক্তি ঘটিয়েছে এমনটাও স্বীকৃত নয়। তবে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে উদ্দীপ্ত করার মত এদেশীয় প্রতিভা বিশ্বের নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে। এদের যে কাউকে এনে ডিজিটাল এক্সপো উদ্বোধন করা হলে, তাদের কর্মজীবন ও সফল হওয়ার অভিজ্ঞতা গল্প তুলে ধরার সুযোগ দেয়া হলে এ দেশের নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকরা অনেক বেশী উৎসাহিত ও অনুপ্রানিত হত। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, স্পেশালাইজড গবেষনা ইনস্টিটিউটে এমন অন্তত এক ডজন বাংলাদেশি গবেষক, উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা বিশ্বের তরুন সম্প্রদায়ের কাছে রোল মডেল হওয়ার যোগ্য। ইউটিউবের অন্যতম সহনির্মাতা জাওয়াদ করিম, সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তরুন উদ্যোক্তা ও ইনস্পিরেশনাল স্পিকার সাবিরুল ইসলাম অথবা নাসার ২০১৭ সালের সেরা উদ্ভাবক মাহমুদা সুলাতানাকে যদি বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের সামনে নিয়ে আসা হত সেটা অনেক বেশী যৌক্তিক ও অনুপ্রেরণার উৎস হতো। নাসার মহাকাশ গবেষনাকেন্দ্রের গবেষক এবং এমআইআইটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রীধারি মাহমুদা সুলতানা মহাকাশে ব্যবহারযোগ্য ন্যানো ম্যাটারিয়ালের উন্নয়ন এবং আলোকতরঙ্গ শনাক্তকারি বর্ণালিমিটার উদ্ভাবনের জন্য এ বছর সেরা উদ্ভাবকের খেতাব পেয়েছেন। পরিবারের সাথে বাংলাদেশ থেকে শৈশবে আমেরিকায় পাড়ি জমানো মাহমুদাকে একজন অদম্য প্রতিভাধর উদ্ভাবক হিসেবে উল্লেখ করেছেন নাসার গর্দাদ ইনস্টিটিউটের পরিচালক। নাসার সাময়িকী কাটিংএজ’এর অক্টোবর সংখ্যা প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করা হয়েছে মাহমুদাকে নিয়ে। সেরা উদ্ভাবক হিসেবে মাহমুদার নাম প্রকাশ করার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে গদার্দ টেকনোলজির প্রধান পিটার হুজেস বলেন, আমরা ভাগ্যবান যে মাহমুদার মত একজন মৌলিক উদ্ভাবনী প্রতিভা নাসায় এসেছিল। গত বছর পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষনাকেন্দ্রের উল্লেখযোগ্য অন্তত ৫জন সেরা বাংলাদেশি উদ্ভাবকের নাম রয়েছে। আর চলতি বছরের সবচে কৃতিত্বপূর্ণ উদ্ভাবনী প্রতিভা হিসেবে মাহমুদা সুলতানার স্বীকৃতি ছাড়াও ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতার পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশী তরুনী আয়েশা আহমেদ। একটি ভিডিও ক্লিপিংয়ের মাধ্যমে আয়েশা মহাকাশ গবেষনার দুর্বোধ্য স্ট্রিং থিউরী তুলে ধরতে সক্ষম হওয়ায় আয়েশাকে আড়াই লাখ ডলারের স্কলারশিপের জন্য মনোনীত করা হয়। বিশ্বের ১৭০টি দেশ থেকে হাজার হাজার তরুন উদ্ভাবনী প্রতিভা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেছিল। আমাদের দেশে এমন অনেক আয়েশা, মাহমুদা,জাওয়াদ করিম ও সাবিরুল ইসলাম সামাজিক রাজনৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হয়ে হতাশা ও বেকারত্বের শিকার হয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যশোরে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম সফ্টওয়্যার টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন করেছেন। অনেক দেরিতে হলেও এই পার্কের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আইটি শিল্প একটি নতুন ধাপে পদার্পণ করল। তবে আমাদের দেশে শিল্প বিনিয়োগ, শিক্ষা ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগের চেয়ে বেসরকারী উদ্যোগেরই সাফল্যের হার অনেক বেশী। আমাদের আইটি খাত, গার্মেন্টস রফতানীখাত, ওষুধশিল্পসহ বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতৃত্বদানকারি প্রতিটি সেক্টরই বেসরকারী ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাটি হাটি পা পা করে গড়ে উঠেছে। সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা, আইনগত ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, লালফিতার দৌরাত্ম্য ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা না থাকলে বেসরকারী উদ্যোক্তারা অনেক আগেই দেশকে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে পরিনত করতে সক্ষম হতো। আরো দুই দশক আগেই সরকার আইসিটি ইনকিউবেটর এবং সফটওয়্যাার পার্ক তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছিল। সে সব উদ্যোগ সফল হলে এতদিন দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত কোথায় গিয়ে দাড়াত তা সহজেই অনুমেয়। গার্মেন্টস রফতানীখাত সহ বিভিন্ন রফতানীমুখী খাত এবং আভ্যন্তরীণ সেবা খাত থেকে আহরিত রেমিটেন্সের এক বিশাল অংশই বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশের শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূলত ভারতীয় এবং আরো কয়েকটি দেশের বৈধ-অবৈধ আইটি স্পেশালিস্ট, সিইও সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগের ফলে বছরে দেশ থেকে অন্তত ৭ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। বৈধ-অবৈধ কয়েক লাখ বিদেশি জনশক্তি দেশের এক কোটি শ্রমিকের সমান মজুরি বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির যোগান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সফ্টওয়্যার রফতানী করে ৫-১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের স্বপ্ন দেখানোর আগে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তির যোগান নিশ্চিত করার দিকে বেশী মনোযোগ দিতে হবে। একদিকে দেশের লাখ লাখ তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেকারত্বের হতাশায় ধুঁকছে অথবা পিয়ন-চাপরাশির চাকরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্যদিকে দেশের জব মার্কেটে ঢুকে পড়ছে উচ্চ বেতনের হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিক। এসব বিষয়ে নজর না দিয়ে কোন অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে কোন লাভ হবেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ