রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নওগাঁ থেকে এমদাদুল হক সুমন : নওগাঁয় চলতি আমন মৌসুমে মোটা জাতের ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। নতুন ধান ঘরে ও হাট-বাজারে উঠতে শুরু করলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে হারিয়ে গেছে কৃষক-কৃষাণীর মুখের হাসি। লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কায় দিশেহারা কৃষকরা। সারা দেশে শস্যভান্ডির খ্যাত নওগাঁ জেলা। এ জেলায় আমন ধান রোপণ মৌসুমের শুরুতেই দেখা দিয়েছিল ভয়াবহ বন্যা। বন্যার কারণে আগাম রোপণকৃত জেলার মান্দা, রানীনগর, আত্রাই, সাপাহার, পত্মীতলা ও ধামুরহাট উপজেলায় অনেক মাঠের আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং বন্যার কারণে এসব উপজেলায় রোপণ মৌসুমের একেবারে শেষের দিকে আমন ধানের চারা রোপণ করেন কৃষকরা। তারপরও জেলার উপজেলা কৃষি অফিস ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে জেলার প্রতিটি উপজেলায় শোভা পাচ্ছিল মাঠের পর মাঠ আমন ধানের ক্ষেত।
আমন চাষের মাঝামাঝি সময়ে পচামিনা ও মাজরা পোকার আক্রমণ থাকলেও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে পরামর্শ দেয়ায় কীটনাশক স্প্রে করে পচামিনা ও মাজরা পোকা দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন জেলার কৃষকরা। আর এ কারণেই বিগত বছরের মতো এবারো আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেধেছিলেন জেলার কৃষক-কৃষাণীরা। এক কথায় রোপণ থেকে শুরু করে কাটার সময় পর্যন্ত আমন ধানের ক্ষেত ভালোই ছিল। শেষ সময়ে জেলায় মাঠের পর মাঠ সর্বত্রই আমন ক্ষেতের সোনালি ও সবুজ ধানের শীষের সমারোহ খাচ্ছিল দোল, আর কৃষক-কৃষাণীর মুখেও ফুটে উঠেছিল হাসির ঝিলিক।
বিশেষ করে বাম্পার ফলন হবে এমন আশায় বিভোর হয়েছিলেন জেলার মহাদেবপুর উপজেলার কৃষকরা। কারণ মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিস ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ধান রোপণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠে গিয়ে ক্ষেত দেখে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ায় এ উপজেলার প্রতিটি মাঠেই ধানের ক্ষেত সবচেয়ে ভালো ছিল। মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন মন্ডল জানান, আমরা পরিবারের তিন ভাই মিলে মোট ১৭ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ধানের ক্ষেত ভালোই ছিল, কিন্তু ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর আমরা অবাক হয়েছি। কারণ, বিগত আমন মৌসুমে প্রতি বিঘায় স্বর্ণা-৫ জাতের ধান সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ২২-২৩ মণ পর্যন্ত হয়েছিল, আর এবারে ১২ মণ থেকে ১৫-১৬ মণ প্রতি বিঘায় ধানের ফলন হচ্ছে। একই উপজেলার বাগধানা গ্রামের দুলাল হোসেনও একই মন্তব্য করে বলেন, বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান বিঘাপ্রতি পাঁচ-ছয় মণ করে ফলন কমেছে। তিনি আরো বলেন, বিঘাপ্রতি আমাদের খরচ এবার বাড়লেও ধানের ফলন বিপর্যয় হওয়ায় আমরা কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছি।
উপজেলার শিকারপুর গ্রামের কৃষক ও স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ময়েজ চৌধুরী বলেন, আমাদের মাঠের ধানের অবস্থা ভালো থাকলেও কাটা-মাড়াইয়ের পর ব্যাপক ফলন বিপর্যয় হয়েছে। এমনকি প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ৮-৯ মণ থেকে শুরু করে ১২-১৩ মণ হারে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে হাট-বাজারে স্বর্ণা-৫ জাতের নতুন ধান প্রতি মণ ৮৮০ থেকে ৯২০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে জানিয়ে উপজেলার খোর্দ্দনারায়ণপুর গ্রামের কৃষক নজরুল বলেন, বাজারে ধানের দাম না বাড়ানো হলে আমরা (কৃষকরা) লোকসানে পড়ব। কারণ হিসেবে তিনি আরো বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবারের ধান চাষে খরচ বেশি পড়েছে, অন্নদিকে প্রতি বিঘায় পাঁচ-ছয় মণ ধানের ফলন কম হয়েছে জানিয়ে বাজারে প্রতি মণ ধান এক হাজারের উপর থাকলে কৃষকরা লোকসানের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবেন বলেও জানান তিনি।
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মফিদুল ইসলাম জানান, এবারের আমন মৌসুমে মহাদেবপুর উপজেলায় সর্বমোট ২৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছে উপজেলার কৃষকরা। এর মধ্যে মোটা জাতের ১৮ হাজার পাঁচ হেক্টর ও চিকন আতপ ৯ হাজার ৩০০ হেক্টর। মহাদেবপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, মাঠের ধানগাছ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোই ছিল। তারপরও ধানের ফলন বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, বিশেষ করে মোটা জাতের মাঠের ধান গামড়ে বসা শুরু করেছে ও কিছু ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছিল, আর ঠিক সেই সময়ই দুই দিনব্যাপী বৈরী আবহাওয়া (ঝড়-বৃষ্টি) হওয়ার কারণে ধানের গাছে গাছে বাড়ি খাওয়ায় ফলন বিপর্যয় হচ্ছে বলে ধারণা পোষণ করেন তিনি। অবশ্য উপজেলার কৃষকরা ও ধানের শীষ বের হওয়ার সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণেই ধানের ফলন কমেছে এবং চিটা বেড়েছে বলেই মন্তব্য করেছেন। তবে এ উপজেলায় আতপ চিকন ধানের বাম্পার ফলন হবে বলেও কৃষকরা আশা প্রকাশ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।